নকুলদানার পরে দাওয়াই এখন আখ

বহরমপুরে দলীয় প্রার্থী অপূর্ব সরকারের হয়ে ভোটের প্রচারে এসে শনিবার ওই আখের দাওয়াই দিয়েছেন সিউড়ি পুরসভার কর্মচারী তথা তৃণমূলের পশ্চিমবঙ্গ পুর কর্মচারী ফেডারেশনের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক আশিস দে।

Advertisement

প্রাণময় ব্রহ্মচারী

বহরমপুর শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৯ ০২:১৭
Share:

পুরকর্মীদের আখ নিয়ে মিছিল। বহরমপুরে। নিজস্ব চিত্র

ঢাকের ‘চড়াম-চড়াম’ শোনা থেকে ‘উন্নয়ন’কে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছেন সাধারণ মানুষ। গত বিধানসভা ও পঞ্চায়েত ভোটের পরে এ বার লোকসভা নির্বাচনে ভোটারদের ‘গুড়-বাতাসা’ ও ‘নকুলদানা’ খাওয়ানোর কথা শোনা গিয়েছে। তালিকায় নতুন সংযোজন হয়েছে ‘আখ’!

Advertisement

বহরমপুরে দলীয় প্রার্থী অপূর্ব সরকারের হয়ে ভোটের প্রচারে এসে শনিবার ওই আখের দাওয়াই দিয়েছেন সিউড়ি পুরসভার কর্মচারী তথা তৃণমূলের পশ্চিমবঙ্গ পুর কর্মচারী ফেডারেশনের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক আশিস দে। আখ হাতে বহরমপুরের পুর কর্মচারীরা তৃণমূলের প্রার্থী অপূর্ব সরকারের পক্ষে মিছিলও করেছেন।

বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের ‘শিষ্য’ আশিস দে বলছেন, ‘‘আমাকে লোকসভা ভোটে বহরমপুরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ভোটের দিন বহরমপুর শহরের মোট ২৮টি ওয়ার্ডের প্রতিটি বুথের তিনশো মিটার দূরে ‘উন্নয়ন’-এর প্রতীক হিসেবে পুর কর্মচারীরা আখ হাতে সকলকে আপ্যায়ন করবেন।’’ এই গরমে শরীর ঠান্ডা রাখার জন্য সকলকে আখের রস খাওয়ানো হবে। আবার পরিস্থিতি অনুযায়ী ওই আখ অন্য ভাবে ব্যবহার করা হবে বলেও তিনি জানান। কিন্তু কোন পরিস্থিতিতে কী ভাবে আখ ব্যবহার হবে, তা খোলসা করেননি তিনি।

Advertisement

এর আগে গত বিধানসভা ভোটের সময়ে অনুব্রত ওরফে কেষ্ট মণ্ডলের দাওয়াই ছিল ঢাকের ‘চড়াম চড়াম’। পরে পঞ্চায়েত ভোটে ‘উন্নয়ন রাস্তায় দাঁড়িয়ে’ আছে বলেও ঘোষণা করেছিলেন তিনি। এ বার লোকসভা ভোটের মুখে ফের কেষ্টর দাওয়াই— ‘গুড়-বাতাসা’ আর ‘নকুলদানা’। এখন বহরমপুরে এসে ‘গুরু’ অনুব্রতের পথেই হাঁটলেন আশিস দে।

আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

এক সময় রায়গঞ্জ পুরসভা ছিল কংগ্রেসের দখলে। আশিস দে ওই ‘আখের’ দাওয়াই দিয়েই গত পুরভোটে রায়গঞ্জ পুরসভা তৃণমূলের দখলে এনেছেন বলে তাঁর দাবি। তিনি বলছেন, ‘‘বহরমপুর পুরসভার প্রায় ১৮০০ কর্মচারীর মধ্যে ১৬৭০ জন আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। তাঁরা প্রতিটি ওয়ার্ডে দায়িত্ব নিয়ে লোকসভায় ভোট করবেন। দলের পক্ষে ভোট করার জন্য পুর কর্মচারীদের স্থায়ীকরণের বিষয়টি নিয়েও ভাবা হবে।’’ তবে তৃণমূলের পুর কর্মচারী সংগঠনের ওই রাজ্য নেতা যাই বলুন কেন, ‘রায়গঞ্জ মডেল’ বহরমপুরে কাজ করবে না বলে কংগ্রেস পুর কর্মচারীদের দাবি।

এ দিকে বহরমপুরের পুর কর্মচারীদের জোর করে তৃণমূলের মিছিলে ও দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে ভোট প্রচারে বাধ্য করা হচ্ছে বলে নির্বাচন কমিশনের কাছে নালিশ করেছেন বহরমপুর লোকসভা কংগ্রেস প্রার্থী অধীর চৌধুরী। অধীর চৌধুরী বলছেন, ‘‘নির্বাচনী বিধি ভেঙে পুর কর্মচারীদের হুইপ জারি করে, চাকরি চলে যাবে বলে ভয় দেখিয়ে জোর করে তৃণমূলের প্রচারে নামতে বাধ্য করা হচ্ছে। গোটা বিষয়টি জানিয়ে আমি নির্বাচন কমিশনের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছি।” তৃণমূল প্রার্থী অপূর্ব সরকারের পাল্টা অভিযোগ, ‘‘যে কোনও দলের হয়ে প্রচার করার অধিকার আছে পুর কর্মচারীদের। ভুলে গেলে চলবে না, এই পুর কর্মচারীরাই অধীর চৌধুরীর হয়ে ভোট প্রচার করা থেকে ভোটে খেটেছেন বলেই উনি চার বার সাংসদ হয়েছেন। এখন তাঁরাই তৃণমূল হয়ে যাওয়ায় অধীর চৌধুরীর পায়ের তলার মাটি সরে গিয়েছে। তাই ভুল বকছেন।’’

বহরমপুরের পুর প্রশাসক তথা বহরমপুরের মহকুমা শাসক দীপাঞ্জন মুখোপাধায় বলেন, “এ ব্যাপারে কোনও অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন