‘লিড’ দিন, উন্নয়ন নিন

এ বার বিরোধী প্রার্থীর চেয়ে দলীয় প্রার্থী লিড না পেলে উন্নয়ন হবে না বলে নিদান দিয়েছেন তৃণমূলের অপর এক নেতা।

Advertisement

শুভাশিস সৈয়দ

বহরমপুর শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৯ ০২:১২
Share:

এত দিন উন্নয়ন রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিল। এ বার লোকসভা ভোটে ‘লিড’ দিতে না পারলে ‘উন্নয়ন’ হবে না এলাকার।

Advertisement

গত পঞ্চায়েত ভোটে উন্নয়ন রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখবেন বলে তৃণমূলের এক নেতা জানিয়েছিলেন। এ বার বিরোধী প্রার্থীর চেয়ে দলীয় প্রার্থী লিড না পেলে উন্নয়ন হবে না বলে নিদান দিয়েছেন তৃণমূলের অপর এক নেতা। যেমন ভাবনা, তেমনি কাজ! এ জন্য এক প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে মুর্শিদাবাদে তৃণণূলের দখলে থাকা বিভিন্ন পুরসভা। প্রতিযোগিতার সর্বোচ্চ পুরস্কার মূল্য ১ কোটি টাকা। কেউ আবার ঘোষণা করেছে ২০ থেকে ৫০ লক্ষ টাকাও। তবে এ কোনও বাম্পার লটারি বা সুপার বাম্পার লটারির পুরস্কার নয়। এই পুরস্কারের একমাত্র মাপকাঠি হচ্ছ ‘লিড’।

মুর্শিদাবাদ পুরসভা যেমন ঘোষণা করেছে—বিরোধী প্রার্থীকে টেক্কা দিয়ে মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রে দলীয় প্রার্থী আবু তাহেরকে ১৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে যে ওয়ার্ড সবচেয়ে বেশি ভোটে লিড দেবে, সেই ওয়ার্ডে কোটি টাকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ হবে।

Advertisement

পিছিয়ে নেই জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ পুর-কর্তৃপক্ষও। ভোটে লিড দেওয়ার ভিত্তিতে ৫০, ৩০ ও ১০ লক্ষ টাকার বিভিন্ন উন্নয়নের কাজ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তাদের ১৭টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও দলীয় কর্মীদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তৃণমূল নেতা বলছেন, বছর খানেক পরেই কান্দি, বহরমপুর, বেলডাঙা, মুর্শিদাবাদ, জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ, ধুলিয়ান, জঙ্গিপুরে পুরভোট রয়েছে। তার মধ্যে জেলার তিনটি লোকসভা আসনে দলীয় প্রার্থীদের জয়ী করতে মরিয়া পরিবহণমন্ত্রী তথা জেলা পর্যবেক্ষক শুভেন্দু অধিকারী প্রতিটি পুরসভা এলাকা থেকে দলীয় প্রার্থী যেন সবচেয়ে বেশি ভোটে এগিয়ে থাকে, তার নিদান দিয়েছেন। এমনকি যে ওয়ার্ডে বা যে পুরসভায় দলীয় প্রার্থীর চেয়ে কোনও ভাবে বিরোধী প্রার্থী ভোট বেশি পেলে আগামী পুরভোটে প্রার্থী পদ না দেওয়ার হুমকিও দিয়ে রেখেছেন তিনি।

ফলে কাউন্সিলরদের যেমন এক দিকে নিজেদের প্রার্থী পদ ধরে রাখার চাপ রয়েছে, তেমনি চাপে রয়েছেন পুরপ্রধানেরাও। কারণ, কোনও কারণে কোনও পুরসভা এলাকায় দলীয় প্রার্থীর থেকে বিরোধী প্রার্থী বেশি ভোট পেলে তার দায় এসে পড়বে সংশ্লিষ্ট পুরপ্রধানের উপরে। ফলে পুরপ্রধান পদ ধরে রাখার লক্ষে ‘উন্নয়নমূলক আর্থিক প্যাকেজ’ ঘোষণা করে কাউন্সিলরদের নিজেদের মধ্যে লড়িয়ে দিয়ে এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চাইছেন পুরপ্রধানেরা বলে বিরোধীদের অভিযোগ।

কংগ্রেসের এক জেলা নেতার আশঙ্কা, ‘‘লিড পেতে তৃণমূলের নেতারা যে ভয়ঙ্কর খেলায় মেতে উঠবেন, তাতে সাধারণ মানুষ নির্বিঘ্নে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে যেতে পারবেন কি না, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে এবং তার বড় কারণ ওই আর্থিক প্যাকেজ!’’

মুর্শিদাবাদের পুরপ্রধান তৃণমূলের বিপ্লব চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘লিড দিতে না পারলে উন্নয়ন হবে না, এমনটা নয়। কাউন্সিলর ও এলাকার কর্মী-সমর্থকদের উৎসাহিত করতেই ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’

জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জের পুরপ্রধান প্রসেনজিৎ ঘোষ বলছেন, ‘‘গোটা পুরসভা এলাকায় এত ধরণের উন্নয়ন হয়েছে যে, সেই উন্নয়ন দেখেই মানুষ তৃণমূলকে ভোট দেবে বলে কাউন্সিলরদের মধ্যে এক ধরণের আত্মতৃপ্তি কাজ করতে পারে। তাই নতুন করে তাঁদের উদ্দীপ্ত করতেই ওই প্যাকেজ ঘোষণা।’’

কান্দি পুর-কর্তৃপক্ষ আবার ভোটের দিন ঘোষণার আগেই ওই আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করে জানিয়েছে—যে ওয়ার্ড সবচেয়ে বেশি ভোটে দলীয় প্রার্থীকে এগিয়ে রাখবে, সেই ওয়ার্ডে ৫০ লক্ষ, তার পরে ৪০ লক্ষ এবং ২৫ লক্ষ টাকার উন্নয়ন হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

কান্দির কাউন্সিলর তথা কান্দি মহকুমা তৃণমূলের সভাপতি গৌতম রায়া বলছেন, ‘‘ভোটের দিন ও প্রার্থী ঘোষণার আগেই শুভেন্দু অধিকারী কান্দিতে সভা করে ওই উন্নয়নমূলক আর্থিক প্যাকেজের কথা ঘোষণা করেছিলেন। উদ্দেশ্য কাউন্সিলর ও দলীয় কর্মীদের উৎসাহিত করা।’’

তবে কোনও রকম লুকোছাপা না রেখেই গত শনিবার বহরমপুরে তৃণমূল পুর-কর্মচারি ইউনিয়নের রাজ্য সাধারন সম্পাদক আশিস দে জানান, বহরমপুর পুরসভার ২৮টি ওয়ার্ডেই লিড চান তিনি। পুর-কর্মচারিরা যে ওয়ার্ডে বাস করেন, সেই সব ওয়ার্ডে লিড পেলেই ওই ওয়ার্ডের সমস্ত অস্থায়ী কর্মচারীদের চাকরি স্থায়ী করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন