গোয়েন্দাদের জেরার মুখে তার সঙ্গীরা জানিয়েছে, নজরুল ইসলাম ওরফে নজুই রানাঘাটের কনভেন্ট স্কুলে বৃদ্ধা সন্ন্যাসিনীকে ধর্ষণ করেছিল। পুলিশেরও সন্দেহ তা-ই। নিঃসন্দেহ হওয়ার জন্য ডিএনএ পরীক্ষার ব্যবস্থা হচ্ছে বলে সিআইডি সূত্রের খবর।
ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনার পরে দীর্ঘদিন বাংলাদেশের যশোরে লুকিয়ে থাকার পরে বুধবার বিকেলে শিয়ালদহ স্টেশনে পা দেওয়া মাত্র গোয়েন্দাদের হাতে ধরা পড়ে নজু। বৃহস্পতিবার রানাঘাট আদালতের বিচারক তাকে ১৪ দিন সিআইডি-র হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রাথমিক তদন্তে গোয়েন্দাদের সন্দেহ, ধর্ষণের ঘটনায় নজুই যুক্ত। তদন্তকারীদের বক্তব্য, এর আগে ওই ঘটনায় ধৃত অন্য দুষ্কৃতীদের বক্তব্যেও সেই সন্দেহের সমর্থন মিলেছে। জেরার জবাবে তারা জানিয়েছিল, বৃদ্ধা সন্ন্যাসিনীকে নজুই ধর্ষণ করেছে। তবে গ্রেফতারের পরে ভবানী ভবনে জেরার মুখে নজু ধর্ষণের কথা অস্বীকার করেছে বলে গোয়েন্দারা জানান। ধর্ষণের কিনারা করতে ঘটনাস্থলে পাওয়া চাদরে লেগে থাকা রক্ত ও বীর্যের নমুনা অভিযুক্ত নজুর ডিএনএ-র সঙ্গে মিলিয়ে দেখার জন্য ফরেন্সিক পরীক্ষাগারে পাঠানো হবে। জেরায় নজু গোয়েন্দাদের জানিয়েছে, স্কুলে লুঠপাটের পরে ৫০ হাজার টাকার ভাগ পেয়েছিল সে।
বৃহস্পতিবার বেলা ১টা নাগাদ বছর তিরিশের নজুকে ভবানী ভবন থেকে সোজা রানাঘাটে নিয়ে গিয়ে সেখানকার আদালতে হাজির করান সিআইডি-র তদন্তকারীরা। বিচারক নির্দেশ দেন, ওই অভিযুক্ত আপাতত সিআইডি-র হেফাজতেই থাকবে।
গত ১৩ মার্চ রাতে রানাঘাটের একটি কনভেন্ট স্কুলে হানা দিয়েছিল আট জন দুষ্কৃতী। টাকা লুঠের সঙ্গে সঙ্গে ওই স্কুলের বৃদ্ধ সন্ন্যাসিনীকে ধর্ষণও করা হয় বলে অভিযোগ। নজুকে নিয়ে ওই ঘটনায় এ-পর্যন্ত ছ’জন দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করেছেন তদন্তকারীরা। ঘটনার সপ্তাহ দুয়েক পরে হাবরা থেকে গোপাল সরকার, বনগাঁ স্টেশনে খালেদর রহমান মিন্টু ওরফে ফারুক এবং মুম্বইয়ে সালিম শেখ নামে এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়। আরও পরে শিয়ালদহ স্টেশনে ধরা পড়ে মিলন সরকার এবং ওহিদুল ইসলাম নামে অন্য দুই অভিযুক্ত। তার পরে গ্রেফতার হয় নজু। দুই অভিযুক্ত এখনও পালিয়ে বেড়াচ্ছে। অভিযুক্তদের বেশির ভাগই ও-পার বাংলার বলে জানায় পুলিশ।
কে এই নজু? সিআইডি-র খবর, নজুর বাড়ি বাংলাদেশের যশোর জেলার কোতোয়ালি থানার বেজপুরে। বৈধ নথিপত্র ছাড়া এ দেশে ঢোকার অভিযোগে রেল পুলিশও তার বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছে। গোয়েন্দারা জানান, কনভেন্ট স্কুলে ডাকাতির মূল চক্রী মিলন আর নজু।
তারাই দু’-দু’বার ওই স্কুলে গিয়ে সব কিছু খুঁটিয়ে দেখে এসেছিল। ডাকাতদলের সর্দার ওই দু’জনই। ঘটনার পরেই দু’দলে ভাগ হয়ে তারা প্রথমে হাবরায় গোপাল সরকারের বাড়িতে যায়। পরে বনগাঁ-পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে পালায় বাংলাদেশে। ফেরার থাকার সময় নজু আর মিলন বাংলাদেশে একসঙ্গেই ছিল বলে জানান সিআইডি-র তদন্তকারীরা।