মুড়ি ভেজে ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন বন্দিরা

মুড়ি ভেজে ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে সংশোধনাগারের আবাসিকেরা। জেল খেটে বের হওয়ার পরে জমানো টাকায় জীবনটাকে অন্য ভাবে গুছিয়ে নেওয়ায়ই নয় শুধু, তাঁরা মুড়ি ভাজছেন তাঁদের সন্তানদের পড়াশোনার জন্য। আর সেই মুড়ি পৌঁছে যাচ্ছে অন্য সংশোধনাগারে। অন্য আবাসিকদের জন্য।

Advertisement

সুস্মিত হালদার

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:০১
Share:

মেশিনে ভাজা হচ্ছে মুড়ি। নিজস্ব চিত্র

মুড়ি ভেজে ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে সংশোধনাগারের আবাসিকেরা। জেল খেটে বের হওয়ার পরে জমানো টাকায় জীবনটাকে অন্য ভাবে গুছিয়ে নেওয়ায়ই নয় শুধু, তাঁরা মুড়ি ভাজছেন তাঁদের সন্তানদের পড়াশোনার জন্য। আর সেই মুড়ি পৌঁছে যাচ্ছে অন্য সংশোধনাগারে। অন্য আবাসিকদের জন্য।

Advertisement

মাস কয়েক আগে দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার থেকে কৃষ্ণনগর জেলা সংশোধনাগারে আনা হয়েছিল এক আবাসিককে। যিনি ছিলেন মুড়ি ভাজায় বিশেষ পারদর্শী। তখনই জেল কর্তাদের মাথায় আসে, জেলা সংশোধনাগারে মুড়ি ভাজাতে পারলে ভাল হয়। তাতে আবাসিকদের যেমন আয় হবে, তেমনই খরচ বাঁচবে দফতরেরও। সেই মতো দমদম থেকে আসা ওই আবাসিককে দিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ানো হয় উৎসাহী আরও আট জন সাজাপ্রাপ্ত আবাসিককে। তৈরি করা হয় প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো।

মাস দুয়েক আগে শুরু হয় এই মুড়ি ভাজার কাজ। ঠিক হয় কৃষ্ণনগর জেলা সংশোধনাগারের প্রয়োজন মিটিয়ে এই মুড়ি পৌঁছে দেওয়া হবে জেলার আরও বাকি তিনটে সংশোধনাগারে। কল্যাণী ও রানাঘাটের পরে এবার পালা তেহট্ট মহকুমা সংশোধনাগারের। এই মুহূর্তে দৈনিক প্রায় একশো কেজি করে মুড়ি ভাজা হচ্ছে বলে সংশোধনাগার সূত্রে জানা গিয়েছে। আবাসিকদের তৈরি এই মুড়ি বাইরে একটি আউটলেট তৈরি করে সাধারণের জন্য বিক্রি করা হবে বলে জানিয়েছে কারা-দফতর। কোনও রকম ভেজাল বা ইউরিয়া সার ছাড়া তৈরি এই মুড়ি পাওয়া যাবে বাজারের চেয়েও কম দামে।

Advertisement

মজুরির এই টাকা জমা পড়ছে সরাসরি আবাসিকের অ্যাকাউন্টে। তার মধ্যে অর্ধেকটা কোনও ভাবেই সেই আবাসিক খরচ করতে পারবেন না। সেই জমা টাকা সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর, সংশোধনাগার থেকে বের হওয়ার সময় দেওয়া হবে। মূলত পূনর্বানসের জন্য। বাকি অর্ধেক টাকা সংশোধনাগারের আবাসিক নিজের প্রয়োজনমতো খরচ করতে পারবেন। কারামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস বলেন, “যাঁরা সাজাপ্রাপ্ত, তাঁদের পরিবার কঠিন লড়াইয়ের মধ্যে পড়ে। অসহায় ওই সব পরিবারের কথা ভেবেই আমাদের এই সিদ্ধান্ত। তাঁদের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা হোক বা সংসারের দৈনিক চাহিদা, যতটা সম্ভব তা যদি সংশোধনাগারের মধ্যে বসেই মেটানো যায়, সেই ব্যবস্থাই আমরা করতে চাইছি।”

মুড়ি-ভাজা এরই একটি অংশ বলে দাবি করছেন সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ। এর পাশাপাশি কিছু দিনের মধ্যে কৃষ্ণনগর সংশোধনাগারে তৈরি হতে চলেছে মোমবাতি। সেই মতো মেশিন এনে, পরিকাঠামো তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। সেখানেও একই ভাবে আবাসিকরা মোমবাতি তৈরির মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই শুরু করবেন বলে দাবি কারা-কর্তৃপক্ষের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন