বড় হয়ে ডাক্তার হতে হবে, দোয়া করে গেলেন

মুখ্যমন্ত্রী চলে যাওয়ার চব্বিশ ঘণ্টা পরেও বাহালনগর সেই একই আলোচনায় ব্যস্ত।

Advertisement

বিমান হাজরা

বাহালনগর শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৯ ০০:৪১
Share:

পরম মমতায়: বাহালনগরে। নিজস্ব চিত্র

ওঁরা তাঁকে দেখেছেন টিভির পর্দায়, ফ্লেক্সে, পোস্টারে। তিনি আসবেন শুনলেই নাকি কেঁপে ওঠেন ‘এসপি, ডিএম ও বড় বড় অফিসারেরা’। সেই মুখ্যমন্ত্রী আসছেন তাঁদের গ্রামে! প্রথমে কথাটা বিশ্বাস হয়নি বাহালনগরের অনেকেরই। কিন্তু বুধবার সত্যি সত্যিই তিনি এলেন। কাশ্মীরে আহত ও নিহতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করলেন। এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি হয়ে উঠলেন তাঁদের কাছের মানুষ। মমতা কখনও তাঁদের চোখের জল মুছিয়ে দিলেন। কখনও বছর সাতেকের খুদের শার্ট থেকে ঝেড়ে দিলেন ধুলো। বাহালনগরের মহিলারা বলছেন, ‘‘সার্থক নাম বটে! মমতা সত্যিই মমতা!’’

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রী চলে যাওয়ার চব্বিশ ঘণ্টা পরেও বাহালনগর সেই একই আলোচনায় ব্যস্ত। আসলে, বাহালনগর প্রত্যন্ত একটি গ্রাম। সেই গ্রামে পঞ্চায়েতেরই ‘মেম্বর’ই সব। রাগ, দুঃখ, মান, অভিমান সবই বাসিন্দারা উগরে দেন তাঁর কাছেই। পঞ্চায়েত সদস্যরাও তাঁদের সাধ্য মতো সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন। ভোটের সময় কখনও কখনও নেতারা আসেন। প্রচার করেন। চলে যান। ব্যস, ওই পর্যন্তই! কিন্তু সম্প্রতি কাশ্মীরে জঙ্গিহানায় পাঁচ জন শ্রমিকের মৃত্যুর পরে বাহালনগর রাতারাতি উঠে আসে সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে। গ্রামে আসেন নেতা-মন্ত্রীরা। গ্রামের বেহাল রাস্তা রাতারাতি পিচ বুকে মসৃণ হয়ে ওঠে। তার পরেই পাড়ায় পাড়ায় রটে যায় সেই বার্তা— ‘মুখ্যমন্ত্রী আসছেন গো....’

বুধবার দুপুরে মুখ্যমন্ত্রী এলেন। নিহত কামিরুদ্দিনের বাড়ির উঠোনে পাতা ত্রিপলে বসেছিলেন রওসনা বিবি, রহিমা খাতুন, সমিরন বিবি, মাবিয়া বিবি, আতিয়ারা বিবিরা। তাঁরা কেউ হারিয়েছেন কাশ্মীরে কাজে যাওয়া স্বামীকে, কেউ ছেলেকে, কেউ হারিয়েছেন বাবাকে। তাঁদের সঙ্গেই আর একটু পরে কথা বলবেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই মতো তাঁদের মুখোমুখি পেতে রাখা হয়েছে দড়ির খাটিয়া। একটু পরেই তিনি ঢুকলেন। একে একে জেনে নিলেন নাম, পরিচয়। তার পরেই গণ্ডী ভাঙল প্রোটোকলের। উঠোনে পাতা ত্রিপলে বসা মহিলাদের কাছে ডাকতেই তাঁরা এসে বসলেন মমতার একেবারে পাশে। বুধবারের সেই কয়েক মিনিটের স্মৃতি আউড়ে রওসানা বিবি বলছেন, “কে বলবে তাঁর এত ক্ষমতা! তাঁর নাম শুনলেই ‘এসপি, ডিএমরা ভয়ে কাঁপে। কিন্তু ওঁকে দেখে আমার নিজের দিদিই মনে হল। যাওয়ার সময় বলে গিয়েছেন, ছেলেমেয়েদের যেন নিয়মিত স্কুলে পাঠাই।”

Advertisement

আতিয়ারা বলছেন, “ছেলে জহিরুদ্দিনের চিকিৎসার জন্য টাকা দেবেন বলেছেন। আমরা ওঁর কাছে কৃতজ্ঞ।’’ অসুস্থ রহিমার কথায়, “দিদি ডিএমকে ডেকে বলে দিলেন, যে ভাবেই হোক আমার চিকিৎসা করাতে। যাওয়ার সময় ভাল করে পড়াশোনা করার কথাও বলে গেলেন। আমি যেন বড় হয়ে ডাক্তার হতে পারি, সেই দোয়াও করেছেন।’’

বছর পঁয়তাল্লিশের ফয়জুদ্দিন শেখ বলছেন, “ভাবতেই পারিনি এ ভাবে কোনও মুখ্যমন্ত্রী বাড়িতে এসে নিজেদের লোকজনের মতো মিশে যাবেন। ঘরের মেয়েদের সঙ্গে এ ভাবে কথা বলবেন। গ্রামে এতগুলো লোক মরে গেল, একসঙ্গে এতগুলো কবর খোঁড়া হল! সেই যন্ত্রণার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী আসার এই স্মৃতিও আজীবন অমলিন থাকবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন