ফাইল চিত্র।
প্রায় এক বছর আগে রানাঘাট ১ ব্লকের ছাতিমতলার মাঠে সভা করে গিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বছর পার করে ফের সেই মাঠেই জনসভা করতে আসছেন তিনি। নির্বাচনের বছরে এই সভাকে সামনে রেখেই এখন ঘর গুছিয়ে মাঠে নামতে চাইছে তৃণমূল।
গত লোকসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখে আক্ষরিক অর্থেই নদিয়ার এক বড় অংশে ধাক্কা খেয়েছে তৃণমূল। ভোটের পরেও ধস নেমেছিল দলে। পরে তা কিছুটা হলেও রোধ করা গিয়েছে। কেউ কেউ ফিরে এসেছেন। আবার আমপান পরবর্তী সময়েও দলের একাধিক জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণের টাকা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। জেলা কমিটিতে সাম্প্রতিক রদবদলের পরে দলের মধ্যে অসন্তোষও মাথা চাড়া দিয়েছে নানা জায়গায়। নদিয়ায় এখনও বড় মাপের কোনও তৃণমূল নেতা বিজেপিতে যোগ না দিলেও কিছু জায়গায় ‘দাদার অনুগামী’দের উপস্থিতিও নজরে এসেছে। শুভেন্দু অধিকারী ও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থনে পোস্টার পড়েছে, পোস্ট হয়েছে সমাজমাধ্যমে।
লোকসভা ভোটে রানাঘাটে দলের ভরাডুবির পরেও গত বছর রানাঘাট শহরের অদূরে ছাতিমতলার মাঠে সভা করে গিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। এ বার বিধানসভা ভোটের বছরের শুরুতেই সেই মাঠেই আবার সভা। তার জন্য প্রস্তুতি সভাও শুরু হয়েছে। তৃণমূলের রানাঘাট ১ ব্লক কমিটির ডাকে মঙ্গলবারই ব্লকে দলের সমস্ত জনপ্রতিনিধি, দল এবং শাখা সংগঠনের নেতৃত্বকে নিয়ে বৈঠক হয়। সেই সভায় মুখ্যমন্ত্রীর জন্মদিন পালনের পাশাপাশি জনসভার জন্য সাংগঠনিক প্রস্তুতি নিয়েও আলোচনা করা হয়। রানাঘাট ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তাপস ঘোষের দাবি, “ওই দিন মাঠে জনজোয়ার হবে। মানুষ যে তৃণমূলের পাশে আছে তা সে দিনের সভার উপস্থিতিই বুঝিয়ে দেবে। বিজেপি যা ভাবছে তা কোনও দিনই হবে না।”
‘দুয়ারে সরকার’, ‘পাড়ায় পাড়ায়’ সমাধানের মতো একাধিক কর্মসূচি নিয়ে ইতিমধ্যে ঝাঁপিয়েছে তৃণমূল। কিন্তু জেলার বেশ কিছু জায়গায় দলীয় কোন্দলও চাপা থাকছে না। দলনেত্রী আসায় নেতাকর্মীরা নতুন করে আত্মবিশ্বাস পাবেন বলে মনে করছেন কেউ কেউ। মতুয়া অধ্যুষিত রানাঘাট লোকসভা এলাকায় তৃণমূলের তরফে এই সভা থেকে মমতা মতুয়াদের জন্যও বার্তা দেন কি না, সে দিকেও নজর থাকবে অনেকের। জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র বাণীকুমার রায় বলেন, “লোকসভা ভোট আলাদা ছিল। মানুষকে ভুল বুঝিয়ে ভোট করিয়েছিল বিজেপি। উন্নয়নের প্রশ্নে মানুষ যে তৃণমূলের পাশে আছে তা বোঝা যাবে বিধানসভা ভোটেই। এই সভা থেকেও মুখ্যমন্ত্রী হয়তো সেই বার্তা দিয়ে যাবেন।”
তবে জেলায় মমতার এই সভাকে প্রকাশ্যে খুব একটা আমল দিচ্ছে না বিরোধীরা। জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক সুমিত দে বলেন, “তৃণমূলকে রক্ষা করা এখন আর তৃণমূলের পক্ষেও সম্ভব নয়। দলের নেতারাই একে একে দল ছাড়ছেন। এখন এ সব সভা করেও লাভ কিছু হবে না।” বিজেপির নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অশোক চক্রবর্তীরও দাবি, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাতেও কোনও লাভ হবেনা। মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে যে তারা এ বার তৃণমূলকে হারাবে।”