এমনিতে রোজ বিকেল সাড়ে ৫টার পর থেকে টেবিল ছাড়তে শুরু করেন ওঁরা। সন্ধে ৬টার মধ্যে ভোঁ-ভাঁ প্রশাসনিক ভবন।
চকিতে ছবিটা পাল্টে গিয়েছে।
জেলা প্রশাসনিক ভবনের চার তলায় পরিকল্পনা দফতরের কর্মীদের ঘুম উড়েছে। কম্পিউটারের সামনে ঝুঁকে পড়ে সকলে ব্যস্ত গোটা জেলার রিপোর্ট তৈরি করতে। গভীর রাত পর্যন্ত কাজ, কিছুটা জিরিয়ে নিয়ে ফের সকালে শুরু।
বুধবার রাত ৯টা পর্যন্ত গমগম করেছে প্রতিটি দফতর। ঘনঘন চা গিয়েছে কর্তাদের ঘরে। এক জন বলেই ফেলেন, “আমার সাহেব কিন্তু তেমন গুরুত্বপূর্ণ ভিজিটর না এলে চা খান না। কিন্তু কাল থেকে টেনশনে তা লাফিয়ে বেড়ে গিয়েছে।” জেলাশাসক সুমিত গুপ্তর হাতে সময়ই নেই যে কারও সঙ্গে দেখা করবেন। ভীমপুর থেকে এসেছিলেন এক মাঝবয়সী লোক তাঁকে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানাতে। ঘণ্টাখানেক বসে থেকে ফিরে গেলেন। জেলাশাসক তখন প্রশাসনের অন্য কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে ব্যস্ত।
মাত্র দু’দিনের নোটিসে জেলা সফরে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ প্রথম ফোন করে জেলাশাসককে জানানো হয় যে মালদহ হয়ে ফেরার পথে কৃষ্ণনগরে প্রশাসনিক বৈঠক সেরে নিতে চান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরেই হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। সমস্ত ব্লক থেকে সমস্ত প্রকল্পের রিপোর্ট আনিয়ে এক জায়গায় করা থেকে রিপোর্টে কোন ভুল আছে কি না তা খুটিয়ে খুটিয়ে দেখা, দরকারে সংশোধন করা পর্যন্ত নানা কাজ। ঘনঘন বৈঠকও সেরে নিতে হচ্ছে বিভিন্ন স্তরের কর্তাদের। এক কর্তার কথায়, “ম্যাডাম কখন কোন বিষয়ে জানতে চাইবেন, সেটা তো বলা যায় না! তাই সব রকম প্রস্তুতি রাখতে হচ্ছে।”
তবে, এ বার একটাও নতুন প্রকল্পের শিলান্যাস করবেন না মুখ্যমন্ত্রী। সে দিক থেকে চাপ কিছুটা কম। দু’টি প্রকল্পের উদ্বোধন করার কথা আছে তাঁর। সেই তালিকায় আছে নবদ্বীপ ও রানাঘাট পুরসভার জলপ্রকল্প। জেলার একশো শতাংশ গ্রামে বিদ্যুদয়নের বিষয়টিও ঘোষণা করতে পারেন বলে মনে করছেন প্রশাসনের কর্তারা।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার বিকেলেই হেলিকপ্টারে করে মুখ্যমন্ত্রী কৃষ্ণনগরে পৌঁছে যাবেন। রাতে থাকবেন সার্কিট হাউসে। শুক্রবার দুপুর ২টো থেকে তিনি প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। জেলা পরিষদের সভাধিপতি বাণীকুমার রায় বলেন, “অতীতে যেমন আমাদের কাজ দেখে মুখ্যমন্ত্রী খুশি হয়েছেন, আশা করি এ বারেও সেটাই হবে।”