বিয়ে করতে না চাওয়ায় ১৮ বছরের তরুণীর মুখে অ্যাসিড ছুড়ে মারার অপরাধে বৃহস্পতিবার বহরমপুরের দ্রুত নিষ্পত্তি আদালতের প্রথম দায়রা বিচারক বিশ্বরূপ শেঠ ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিলেন দুই অপরাধীর। মুর্শিদাবাদ জেলার ডোমকল থানা এলাকার জিতপুর গ্রামের রাকেশ মণ্ডল নামের এক যুবক পাশের থানা নওদার ইলামনগর গ্রামের একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। ওই ছাত্রী সেই প্রস্তাব প্রত্যাখান করেন। রাগে রাকেশ মণ্ডল তরুণীর মুখে অ্যাসিড ছুড়ে মারে। রাকেশ মণ্ডলের কাছে অ্যাসিড বিক্রি করেছিল জিতপুর গ্রামের চন্দন পাল। সরকার পক্ষের আইনজীবী টিঙ্কু আব্দুর রহমান বলেন, ‘‘এ কারণে বিচারক দু’ জনেরই ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেন। এ ছাড়াও দু’জনের আর্থিক জরিমানা করেছেন ও নির্যাতিতাকে ৩ লক্ষ টাকা আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে বলেন।’’
সশ্রম কারদণ্ডই শুধু নয়, সেই সঙ্গে সাজাপ্রাপ্ত রাকেশের ১ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার টাকা না দিলে তাকে আরও ২ বছর সংশোধনাগারে থাকতে হবে বলে এ দিনের রায়ে বিচারক স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন। ১০ বছরের করাদণ্ড ছাড়াও চন্দন পালের ৫০০ টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। অনাদায়ে তাকে আরও ১ মাস সংশোধনাগারে থাকতে হবে বলে জানা গিয়েছে। টিঙ্কু এ ব্যাপারে বলছেন, ‘‘নির্যাতিতাকে ৩ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য জেলাশাসক ও ডিস্ট্রিক্ট লিগাল সার্ভিসেস অথরিটিকে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক বিশ্বরূপ শেঠ।’’
একাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রী ২০১৬ সালের ১৮ অগস্ট সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ স্থানীয় চাঁদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে গিয়েছিলেন ওবিসি-র শংসাপত্র নিতে। পঞ্চায়েত প্রধানকে না পেয়ে ওই তরুণী তাঁর বান্ধবীর সঙ্গে সাইকেলে চেপে বাড়ির দিকে ফিরছিলেন।
ওই সময় পথের মাঝে তাঁদেরকে আটকে ইলমনগরের তরুণীর কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেন রাকেশ মণ্ডল। এর আগেও একই প্রস্তাব নিয়ে ওই তরুণীকে কয়েক বার উত্যক্ত করা হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় তরুণীর মুখে অ্যাসিড ছুড়ে মারে রাকেশ মণ্ডল। কয়েক মাস আগে বহরমপুর গার্লস কলেজের এক সচেতনতা শিবিরে মুর্শিদাবাদ জেলার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার দবি করেছিলেন, ‘‘জেলায় অ্যাসিড আক্রান্ত হওযার কোনও ঘটনা এখনও পর্যন্ত ঘটেনি।’’ সরকার পক্ষের আইনজীবী টিঙ্কু আব্দুর রহমান অবশ্য অন্য কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘‘২০১৬ সালের ১৮ অগস্ট অ্যাসিড আক্রান্ত হন ওই তরুণী। সেই মামলার রায় এ জেলায় অ্যাসিড আক্রান্ত ঘটনার প্রথম মামলা।’’