Cyclone Amphan

করোনায় গেল কাজ, আমপানে ঘর

‘লকডাউন’ চলায় বাড়ির একমাত্র রোজগেরে ছেলে অনন্ত আটকে পড়েছেন সুদূর বেঙ্গালুরুতে। ঝড়ে ঘরের চাল উড়ে যাওয়ার পর ত্রিপল টাঙিয়ে থাকছেন তাঁর মা, স্ত্রী ও ছেলেমেয়েরা।

Advertisement

রাজীব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০২০ ০৫:০৬
Share:

প্রতীকী ছবি

ভরপেট খাবার না জুটলেও নাকাশিপাড়ার বাসিন্দা চম্পা ওঁরাওয়ের মাথা গোঁজার ঠাঁইটা ছিল। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় আমপান উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছে সেটুকুও।

Advertisement

‘লকডাউন’ চলায় বাড়ির একমাত্র রোজগেরে ছেলে অনন্ত আটকে পড়েছেন সুদূর বেঙ্গালুরুতে। ঝড়ে ঘরের চাল উড়ে যাওয়ার পর ত্রিপল টাঙিয়ে থাকছেন তাঁর মা, স্ত্রী ও ছেলেমেয়েরা। ফোনে অনন্ত বলেন, ‘‘মরার উপরে খাঁড়ার ঘা পড়েছে। ঘরে অসহায় মা। তাঁর হাতে পয়সা নেই। ঘরে খাবার নেই। ঘরের চালাটুকুও চলে গেল। আমি কবে ফিরব জানি না। ওরা এ বার যাবে কোথায়?’’

অনন্তর মতোই অবস্থা নাকাশিপাড়া থানার বীরপুর পঞ্চায়েতের মোটাবড়গাছি গ্রামের পরিযায়ী শ্রমিক মহাদেব সর্দারের। বেঙ্গালুরুর কাছে যশবন্তপুরে কাজ করতে গিয়ে আটকে পড়েছেন অনন্ত ও মহাদেব-সহ মোটাবড়গাছি গ্রামের জনা দশেক নির্মাণ শ্রমিক। পকেটে নয়া পয়সা নেই। আমপানের তাণ্ডব সামলে মহাদেবের ঘরটা দাঁড়িয়ে আছে ঠিকই, তবে একবেলা খেয়েই দিন কাটাতে হচ্ছে তাঁর মা, স্ত্রী এবং দুই ছেলেমেয়েকে। ফোনে মহাদেব বলেন, ‘‘বাড়ি থেকে টাকা পাঠাতে বলছে। কিন্তু পাব কোথায়? আমিই তো আধপেটা খেয়ে বেঁচে আছি।’’

Advertisement

মোটাবড়গাছি গ্রামের ১০ নির্মাণ শ্রমিক কাজের খোঁজে গিয়েছিলেন যশবন্তপুরে। পাঁচ জন গিয়েছিলেন ‘লকডাউন’ জারি হওয়ার মাস তিনেক আগে। বাকিরা মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে। মহাদেব বলেন, ‘‘মাত্র পাঁচ দিন কাজ করেছি। তারপরই লকডাউন শুরু হয়। অন্যের পয়সায় একবেলা ভাত জুটছে। বাড়িতে পয়সা পাঠাব কী করে?’’

এই অবস্থায় বাড়ি ফেরার মরিয়া চেষ্টা করছেন ওই শ্রমিকেরা। ট্রেনে ফেরার জন্য অনলাইনে আবেদন করেছেন মহাদেব ও অনন্তরা। কিন্তু ট্রেনের কোনও খবর আসেনি। মহাদেব বলেন, ‘‘শুনেছিলাম, শ্রমিকদের ট্রেন ভাড়া দেবে সরকার। তারপর কী হয়েছে জানি না। যশবন্তপুর স্টেশনে গিয়ে শুনলাম, পশ্চিমবঙ্গে যাওয়ার ট্রেন এখন নেই। বিহার এবং ওড়িশার অনেক শ্রমিক বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। আমরাই শুধু পড়ে আছি।’’

ট্রেন যদিও বা পান, টিকিট কাটার টাকা কোথা থেকে আসবে তা জানেন না ওই শ্রমিকেরা। মহাদেব বলেন, ‘‘ট্রেনে উঠে পড়ব। তারপর যা হয় হবে। টিকিট চেকারের পায়ে পড়ব। ট্রেন থেকে নিশ্চয়ই ছুড়ে ফেলে দেবে না।’’

করোনা আতঙ্ক, লকডাউনের মধ্যে তা-ও কোনও রকমে দিন কাটছিল। কিন্তু আমপান উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছে শেষ ভরসাটুকুও। পরিবারের বিপদে তাই ঝুঁকি নিয়েও বাড়ির পথ ধরতে চান শ্রমিকরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন