নাগাড়ে প্রচার চলছে—‘গুজবে কান দেবেন না, গুজব ছড়াবেন না।’
সে কথা কি কারও কানে যাচ্ছে?
ছেলেধরা সন্দেহে রঘুনাথগঞ্জের সেকেন্দ্রা গ্রামে গণপ্রহারে মানসিক ভারসাম্যহীন মহিলা উতেরা বিবি খুনের ঘটনা এখনও দগদগে। সেই ঘটনায় পুলিশ বেশ কয়েক জনকে গ্রেফতারও করেছে। বৃহস্পতিবার রাতে লালগোলার মকিমনগর গ্রামে ফের সেই একই সন্দেহে অজ্ঞাত পরিচয় এক মহিলাকে ‘চরম শাস্তি’ দিতে চেয়েছিল গ্রামের একাংশ। কিন্তু গ্রামেরই কিছু শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ ও পুলিশের চেষ্টায় গণরোষ থেকে রক্ষা পেয়েছেন ওই মহিলা।
ওই রাতেই বছর চৌত্রিশের ওই মহিলাকে লালগোলার কৃষ্ণপুর গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। লালগোলার ওসি বিপ্লব কর্মকার বলেন, ‘‘ওই মহিলা নাম ঠিকানা কিছুই বলতে পারছেন না। চিকিৎসকদের মতে তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন। বহরমপুর মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করানোর জন্য নির্দেশ পেতে ওই মহিলাকে শুক্রবার লালবাগ মহকুমা আদালতে হাজির করানো হয়।’’ ৩০ জুন রাতে ছেলেধরা সন্দেহে রঘুনাথগঞ্জের সেকেন্দ্রা গ্রামে গণপ্রহারে খুন হন উতেরা বিবি। তাঁকে একটি পরিত্যক্ত ট্রাক্টরে বেঁধে পিটিয়ে খুন করা হয়। লালগোলার মকিমনগর গ্রামেও প্রায়ই একই রকম ঘটনা ঘটতে চলেছিল। প্রত্যক্ষদর্শী এনামুল হক জানান, বৃহস্পতিবার রাত ১১টা নাগাদ ওই মহিলাকে গ্রামের রাস্তায় ঘুরতে দেখা যায়। তারপরেই ছেলেধরা ঢুকেছে বলে গ্রামে গুজব রটে। নামধাম কিছু না বলতে পারায় অনেকে ওই মহিলাকেও ছেলেধরা বলে সন্দেহ করতে থাকেন অনেকে। পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তপ্ত হতে থাকে। খবর যায় লালগোলা থানায়।
পরিস্থিতি ক্রমে নাগালের বাইরে চলে যেতে থাকে। এক প্রত্যক্ষদর্শীর কথায়, ‘‘উত্তেজিত জনতার সংখ্যা বাড়তে থাকে। মহিলাকে গাছে বাঁধারও আওয়াজ উঠতে থাকে।’’ তখন নিরাপত্তার কথা ভেবে কেয়ক জন ওই মহিলাকে স্থানীয় বাসিন্দা ফিরোজ আলির বাড়িতে নিয়ে যান। পুলিশ গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। শুক্রবার লালবাগ মহকুমা আদালতের এসিজেএম পাপিয়া দাসের এজলাসে তাঁকে হাজির করানো হয়।
সরকার পক্ষের আইনজীবী সুজয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মানসিক ভারসাম্যহীন ওই অজ্ঞাত পরিচয় মহিলাকে দ্রুত মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করানোর নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। সেই সঙ্গে বিচারক সংবাদমাধ্যমে ওই মহিলার সচিত্র বিজ্ঞাপন প্রকাশ করতে পুলিশকে নিদের্শ দিয়েছেন। মেডিক্যাল রিপোর্ট আগামী ১৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আদালতে পেশ করার জন্য পুলিশ ও হাসপাতাল সুপারকেও নির্দেশও দেন বিচারক।