তাহেরপুরে স্ত্রীকে খুন করে আত্মহত্যা স্বামীর

বছর আটেক আগে তাহেরপুর গরুয়াপোতার বাসিন্দা জয়দেবের সঙ্গে বাদকুল্লার মিতার বিয়ে হয়। তাদের বছর ছয়েকের একটি মেয়ে রয়েছে। সে তার দাদু-দিদিমার কাছে থাকে। জয়দেব পেশায় মণ্ডপশিল্পী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

তাহেরপুর শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:১২
Share:

জয়দেব ও মিতা। অ্যালবাম থেকে

দরজায় তালা ঝুলছে দেখে পাড়া পড়শিরা ভেবেছিলেন, সরকার দম্পতি নিশ্চয় কোথাও বেরিয়েছেন। কিন্তু মঙ্গলবার সকালে পায়রাডাঙা রেল স্টেশনের কাছে ডাউন লাইনের ধার থেকে জয়দেব সরকারের (৩৩) দেহ উদ্ধার করে রেল পুলিশ। সে ঘটনা জানাজানি হতেই সন্দেহ হয় তাহেরপুরের গরুয়াপোতা এলাকার বাসিন্দাদের। তাঁরা সরকার বাড়ির ঘরের তালা ভেঙে ভিতরে ঢুকে দেখেন বিছানায় পড়ে রয়েছে জয়দেবের স্ত্রী মিতা সরকারের (২৪) দেহ।

Advertisement

প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে খুন করে জয়দেব নিজেও আত্মঘাতী হয়েছেন। জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, খুনের কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। তবে এলাকার লোকজন, জয়দেব ও মিতার আত্নীয়দের সঙ্গে কথা বলে বেশ কিছু তথ্য উঠে আসছে। সেগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ দিন দু’জনের দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে বেশ কিছু বিষয় পরিষ্কার হয়ে যাবে।

বছর আটেক আগে তাহেরপুর গরুয়াপোতার বাসিন্দা জয়দেবের সঙ্গে বাদকুল্লার মিতার বিয়ে হয়। তাদের বছর ছয়েকের একটি মেয়ে রয়েছে। সে তার দাদু-দিদিমার কাছে থাকে। জয়দেব পেশায় মণ্ডপশিল্পী। সংসারে অভাব ছিল। স্বামী-স্ত্রীর গণ্ডগোল হত। সোমবার রাতেও অশান্তি হয়েছে বলে পড়শিরা জানিয়েছেন।

Advertisement

জয়দেবের বাবা দ্বিজেন সরকার বলেন, “ছেলে-বৌমার মধ্যে কী নিয়ে গণ্ডগোল হয়, তা বলতে পারব না। সকালে উঠে দেখি, ওদের ঘরে তালা দেওয়া। ভেবেছিলাম, ওরা কোথাও গিয়েছে। পরে আমি নিজের কাজে বাজারে চলে আসি। সেই সময় জানতে পারি, ঘরের দরজা ভেঙে বৌমার দেহ উদ্ধার হয়েছে। আর ছেলে পায়রাডাঙায় রেলে কাটা পড়েছে।” পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, জয়দেবের সারা বছর তেমন কাজও থাকত না। ফলে সংসার চালাতে সমস্যা হতো। তার মধ্যে স্ত্রী কিছু দাবি করলেই শুরু হত অশান্তি। নিত্যদিনের এই অশান্তিতে সবথেকে সমস্যায় পড়ত মেয়েটি। সেই কারণেই তার দাদু-দিদা তাকে নিজেদের কাছে নিয়ে গিয়েছেন।

এলাকার লোকজন জানাচ্ছেন, জয়দেব ছেলে হিসেবে খারাপ নয়। কিন্তু বেশ কিছুদিন থেকেই তিনি বড় বেশি চুপচাপ হয়ে গিয়েছিলেন। কারও সঙ্গে সে ভাবে কথাবার্তাও বলতেন না। পুলিশের অনুমান, সংসারে নানা অভাব ও অশান্তির কারণে তিনি হয়তো মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। সেই কারণেই, স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে খুন করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন। তার পর নিজেও রেললাইনে ঝাঁপ দেন। পড়শিদের কথায়, ‘‘জলজ্যান্ত দু’টো মানুষ এ ভাবে শেষ হয়ে গেল, আমরা ভাবতেই পারছি না। অভাবের সংসারে অনেকে আনন্দে থাকেন। এ ভাবে পালানোর মানে হয় না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন