মুকুল ধরেছে। ভীমপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।
গত বার ছিল ‘অফ ইয়ার’। ফলন ছিল না আমের। এ বার অন ইয়ার। গাছ ভরে গিয়েছে মুকুলে। স্বাভাবিকভাবেই হাসি চওড়া হওয়ার কথা চাষিদের।
কিন্তু, তা আর হচ্ছে কোথায়? বরং চাষিদের কপালে ভাঁজ বাড়ছে। মুকুল আসার পর থেকে শোষক পোকার আক্রমন দেখা দিয়েছে। যার ফলে আমগাছের মুকুল ঝড়ে যাচ্ছে। নদিয়া এবং মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন জায়গায় আমবাগানে শোষক পোকার (ম্যাঙ্গো হপার) আক্রমণে দিশাহারা চাষিরা।
আম চাষিরা জানিয়েছেন, গত দু’-তিন বছর থেকে ম্যাঙ্গো হপারের আক্রমণ শুরু হয়েছে। যদিও কীটনাশক প্রয়োগ করে সমস্যা সামাল দেওয়া গিয়েছিল। কিন্তু, গত দেড় মাসে দফায় দফায় কীটনাশক প্রয়োগ করলেও পোকার আক্রমণ ঠেকানো যাচ্ছে না। চাষিদের আশঙ্কা, পোকার আক্রমণ থেকে মুকুল বাঁচাতে না পারলে ধাক্কা খাবে ফলন।
চাষিরা এমন কথা জানালেও জেলা উদ্যানপালন বিভাগের কাছে নাকি সে খবর নেই। নদিয়ার উদ্যানপালন আধিকারিক কৃষ্ণেন্দু ঘোড়ই বলছেন, “ম্যাঙ্গো হপারের আক্রমণ হয়েছে বলে আমাদের কাছে খবর আসেনি। আমরা খোঁজ নিয়ে দেখবো। আম চাষিরা আমাদের অফিসে যোগাযোগ করলে তাঁদের সাহায্য করা হবে।’’ কৃষ্ণেন্দুবাবু জানান, এই পোকার আক্রমণ ঠেকাতে চাষিরা কী ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করছেন, তা দেখার পর অন্য কাটনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া সম্ভব। তা না হলে অন্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। জেলা উদ্যানপালন বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, নদিয়া জেলায় প্রায় ৬ হাজার হেক্টর জমিতে আমের বাগান রয়েছে। তার মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ আমের বাগানে মুকুল এসে গিয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার আমের মুকুল অনেক বেশি এসেছে। ফলন বাড়াতে গেলে মকুল বাঁচানোই প্রাথমিক কাজ।
নদিয়ার কৃষ্ণনগর থেকে শুরু করে শান্তিপুর, রানাঘাট, তেহট্ট, নাকাশিপাড়া, কালীগঞ্জ, নবদ্বীপসহ বিস্তীর্ণ এলাকায় আমের চাষ রয়েছে। অন্যদিকে মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জ, জঙ্গীপুর, লালগোলা, ভগবানগোলা এলাকায় প্রচুর আম চাষ হয়।
শান্তিপুরের শ্যামনগরের আম-চাষি গৌতম ভৌমিকের এবারে প্রায় ৩৫ বিঘা আমের বাগান আছে। তার মধ্যে নিজের ১৬ বিঘা, বাকিটা তিনি ইজারা নিয়েছেন। তাঁর সব বাগানেই শোষক পোকার আক্রমণ হয়েছে। গৌতমবাবু বলছেন, “শোষক পোকা আমের মুকুলে বসে রস খেয়ে নিচ্ছে। তার পরে মুকুল কালো হয়ে ঝরে যাচ্ছে। কিন্তু ওষুধ দিয়েও কাজ হচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে আমের ফলন ব্যাপক মার খাবে। কীটনাশক ছড়িয়েও লাভ হচ্ছে না। কী করব, ভেবে পাচ্ছিনা।”
শান্তিপুরের মোল্লাবেড়িয়ার বাসিন্দা অভিজিত বিশ্বাসের প্রায় ১৫বিঘা আমেরবাগান আছে। তাঁর বাগানেও শোষক পোকার আক্রমণে ঝড়ছে মুকুল। অভিজিত জানান, মাছির মত ছোট ছোট পোকা মকুলের রস খেয়ে নিচ্ছে। ফলে মুকুল কালো হয়ে ঝরে পাড়ে যাচ্ছে। গত বছর এই ধরনের পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছিল। তবে দু’-একবার কাটনাশক প্রয়োগ করতেই তা পোকার উপদ্রব কমেছিল। এবারে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মতো কীটনাশক প্রয়োগ করলেও কাজ হচ্ছেনা।
একই বক্তব্য মুর্শিদাবাদের চাষিদেরও। লালগোলার চাষি সরিফুল ইসলাম জানান, কী পোকা জানি না। তবে কালো হয়ে মুকুল ঝড়ে যাচ্ছে।