প্রতীকী ছবি।
সরকারি আরামকেদারায় বসে না থেকে খোলা বাজারে টেন্ডার ধরার যুদ্ধে নেমে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে ‘মঞ্জুষা’।
রাজ্যের হস্তশিল্প উন্নয়ন নিগমের অধীন এই সংস্থার পথচলা শুরু হয়েছিল ১৯৭৬ সালে। প্রথম বছরে তাদের লোকসানের পরিমাণ ছিল ৫ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা। ২০১৪-’১৫ সালে এসে সংস্থার মোট লোকসান দাঁড়ায় প্রায় ২৬ কোটি টাকায়।
বছরের পর বছর ব্যবসায়ে এ ভাবে মার খাওয়ার অন্যতম কারণ ছিল সরকারি গয়ংগচ্ছ মনোভাব এবং ঢিলেঢালা ব্যবসা-নীতি। তা পাল্টে ফেলেই গত বছর প্রথম লাভের মুখ দেখে মঞ্জুষা। ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষে তাদের মোট ব্যবসার পরিমাণ ছিল ৪৭ কোটি ৪১ লক্ষ টাকা। লাভ হয়েছিল ৩ কোটি ৮৭ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা। গত বছর বিক্রি বেড়ে দাঁড়ায় ৮৩ কোটি ১৯ লক্ষ টাকায়। লাভ ৪ কোটি ৮১ লক্ষ ৯৩ হাজার টাকা। সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর অমিত দত্ত বলেন, “গত বারই প্রথম লাভের মুখ দেখেছে মঞ্জুষা। আর, তার কৃতিত্ব পুরোপুরি কর্মীদের।”
মৃতপ্রায় সংস্থাটিকে চাঙ্গা করতে প্রতিযোগিতার বাজারে লড়তে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কর্তারা। ঠিক হয়, গুণগত মান বজায় রেখে দাম কমিয়ে বিক্রি বাড়াতে হবে। মধ্যসত্ত্বভোগীদের বাদ দিয়ে সরাসরি শিল্পীদের কাছ থেকে অপেক্ষাকৃত কম সামগ্রী কেনা হচ্ছে। তাতে শিল্পীদের লাভ হচ্ছে, বিক্রয়মূল্যও কমানো গিয়েছে।
বছর তিনেক ধরে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থায় সরঞ্জাম সরবরাহের টেন্ডারে দরপত্র দিতে শুরু করেছে মঞ্জুষা। বহুজাতিক সংস্থাকে হারিয়েও টেন্ডার জিতেছে। গত বছর ৮৩টি ই-টেন্ডারে অংশ নিয়ে ২১টিতে বরাত পেয়েছে। কর্তাদের কথায়, আগে বরাত জোগাড়ের জন্য তেড়ে-ফুঁড়ে মাঠে না নেমে সরকারি বরাতেই সন্তুষ্ট থাকত মঞ্জুষা। যেমন, স্বাস্থ্য দফতরে মাত্র দশ ধরনের সামগ্রী সরবরাহ করা হত। ই-টেন্ডারে যোগ দেওয়ার সুবাদে তা বেড়ে এখন ৪৪ হয়েছে। বিভিন্ন জেলায় পড়ুয়াদের পোশাক, জুতো, মিড-ডে মিলের উপকরণ, রাঁধুনিদের পোশাকও সরবরাহ করছে তারা।
পুলিশের জুতো, বেল্ট, রাজ্যের ত্রাণ দফতরে কম্বল ও মেয়েদের পোশাক ছাড়াও অনলাইন ব্যবসার জন্য ‘স্ন্যাপডিল’কে যুক্ত করা হয়েছে। পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে আদিবাসীদের তৈরি ভেষজ আবীর থেকে রাজ্য পরিবহণ নিগমের কর্মীদের জন্য পোশাক সরবরাহের বরাতও পেয়েছে তারা। বিভিন্ন বেরসকারি হাসপাতাল ও পাঁচতারা হোটেলেও তারা নানা সামগ্রী সরবরাহ করছে। তৈরি হয়েছে ‘ইন্টারন্যাল মার্কেটিং টিম’, যারা বিভিন্ন সংস্থায় গিয়ে বরাত আদায় করছে। মঞ্জুষার চেয়ারম্যান অজয় দে বলেন, “গুণগত মান বজায় রেখে দাম কমিয়ে টেন্ডার জেতাই সাফল্যের বড় কারণ।”