সরকারের দেওয়া ছাগল মরল মাস ঘুরতে না ঘুরতে

জেলা প্রাণী সম্পদ দফতরের এক পদস্থ কর্তা জানান, প্রতিটি ব্লকে গড়ে ২৫০টি করে ছাগল বিলি করা হয়েছে।

Advertisement

মনিরুল শেখ

কল্যাণী শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৯ ০১:২০
Share:

প্রতিটি ব্লকে গড়ে ২৫০টি করে ছাগল বিলি করা হয়েছে। প্রতীকী ছবি।

গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে মাস খানেক আগে পঞ্চায়েত সমিতির মাধ্যমে জেলায় ছাগল বিলি করা হয়েছিল। সেই ছাগলের অনেকগুলিই মারা গিয়েছে বলে অভিযোগ।

Advertisement

জেলা প্রাণী সম্পদ দফতরের এক পদস্থ কর্তা জানান, প্রতিটি ব্লকে গড়ে ২৫০টি করে ছাগল বিলি করা হয়েছে। আর এক একটি পরিবারকে দেওয়া হয়েছে পাঁচটি করে ছাগল। বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, রুগ্ন ছাগল বিলি করার জন্যই এই অবস্থা।

নিয়ম অনুযায়ী, ১১ হাজার টাকায় পাঁচটি ছাগল কেনার কথা জেলা প্রাণী সম্পদ দফতরের। প্রতিটি পরিবারে যে পাঁচটি ছাগল দেওয়ার কথা, তার মধ্যে চারটি মেয়ে ছাগল হবে, আর একটি পাঁঠা। মেয়ে ছাগলগুলির জন্য বরাদ্দ হয়েছে দু’হাজার টাকা করে। আর পাঁঠার জন্য বরাদ্দ তিন হাজার টাকা। ছাগলগুলির বয়স হতে হবে অন্তত চার মাস। আর ওজন হতে হবে ছ’কিলোগ্রাম করে। নিয়ম মতো, হাট থেকে কিনে এনেই উপভোক্তাদের মধ্যে সেই ছাগল বিলি করা যাবে না। বিলি করার আগে ১৫ দিন প্রাণী সম্পদ বিকাশ দফতরের অফিসে রাখতে হবে। সেখানে প্রাণী চিকিৎসকেরা ওই সব ছাগলের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দেখবেন। প্রয়োজনীয় ওষুধপত্রও দেবেন।

Advertisement

দফতরের আধিকারিক ও কর্মীদের একাংশ জানান, ওই সব নিয়ম মানলে এত ছাগল মারা যেত না। তাঁদের অভিযোগ, কয়েকজন আধিকারিক ও পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যেরা নিয়মের তোয়াক্কা না করেই ঠিকাদারদের কাছ থেকে ছাগল নিয়েছেন। এক আধিকারিক বলেন, ‘‘যে ছাগল দেওয়া হয়েছে, তা দেখলেই মনে হবে, খরগোশের বাচ্চা দেওয়া হয়েছে। আর রুগ্ন ওই সব ছাগল বাড়ি আনার কয়েক দিনের মধ্যেই মারা গিয়েছে। সব চেয়ে বেশি ছাগল মারা গিয়েছে কৃষ্ণনগর-২ ব্লকে। ওই ব্লকের নওপাড়া-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল নেতা জাহির শেখ বলেন, ‘‘সরকার এত টাকা বরাদ্দ করেছে। কিন্তু সেই মতো স্বাস্থ্যবান ছাগল দেওয়া হয়নি। ফল যা হওয়ার তাই হয়েছে। মাস ঘুরতে না ঘুরতেই বহু ছাগল মারা গিয়েছে।’’

ধুবিলিয়া ১৮ নম্বরের বাসিন্দা লক্ষ্মীরানি বিশ্বাস, অলোক বনিকেরা ভুক্তভোগী। নেকির বাসিন্দা আয়েল মল্লিক বলেন, ‘‘আমার সব ছাগল মারা গিয়েছে। যে দিন নিয়ে এসেছিলাম সে দিন থেকেই কিছু খাচ্ছিল না। পরে মারা গেল। রুগ্ন ছাগল দিয়ে এ ভাবে আমাদের ঠকানো হল।’’ ওই ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অনিতা হালদার বলেন, ‘‘এটা ঠিক যে, বহু ছাগল মারা গিয়েছে। বিষয়টি আমি ব্লক প্রাণী সম্পদ উন্নয়ন আধিকারিককে জানিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি বলেছেন, বিতরণের এক মাসের মধ্যে ছাগল মারা গেলে বিমার টাকাও মিলবে না।’’ চাকদহের বাসিন্দা অসীমা সর্দার নিলিমা দাস, হায়দর আলি, গোবিন্দ অধিকারী, বুল্টা দাস, রাখাল সিংহরাও জানান, তাঁদের ছাগল মারা গিয়েছে।

ছাগলের এক যোগানদারদের দিকে আঙুল উঠলেও তাঁদের পাল্টা অভিযোগ, নেতা-আধিকারিকদের এত বেশি ‘কমিশন’ দিতে হয় যে ভাল মানের ছাগল দেওয়া সম্ভব হয় না। আর এর ফলে গোটা জেলা জুড়েই ছাগল মারা গিয়েছে। আবার কোনও কোনও ব্লকে তো দাম বেশি হওয়ার জন্য পাঁঠা দেওয়া হয়নি। চাকদহ ও হরিণঘাটা ব্লকে পাঁঠা দেওয়া হয়নি। চাকদহ পঞ্চায়েত সমিতির প্রাণী ও মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ জাকির হোসেন বলেন, ‘‘অনেকেই পাঁঠা নিতে চাননি। তাই দেওয়া হয়নি।’’ একই বক্তব্য হরিণঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির প্রাণী-মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ মাওলা বক্সেরও।

ছাগল বিলির এই প্রকল্পের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘নিয়ম মেনে সব ছাগল বিলি করা হয়েছিল। টিকাও দেওয়া হয়েছিল। এর পরেও লোকজনকে বলা হয়েছিল, অসুস্থ হলে চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতে। তবু এমন অভিযোগ কেন আসছে, বুঝতে পারছি না। তবে উপভোক্তাদের একাংশের অভিযোগ, নিয়ম যা মানা হয়েছে তা খাতায় কলমে। আসলে নিয়ম ভেঙেই রুগ্ন ছাগল বিতরণ করা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন