স্কুল চলাকালীন হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়ছে কয়েকজন পড়ুয়া। যদিও চিকিৎসকেরা তাদের পরীক্ষা করে কিছুই পাননি। চাপড়ার হুদা বিদ্যাপীঠ হাইস্কুলের ঘটনা। চিকিৎসকেরা জানান আসলে ‘গণ হিস্টিরিয়া’ থেকে ওই ঘটনা ঘটছে।
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, দিন কয়েক আগে সপ্তম শ্রেণির একটি ছাত্রী কোনও কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ে। ভয়ে সে কেঁদে ফেলে। তার কান্না দেখে কয়েকজন সহপাঠীও কেঁদে ফেলে। ওই ঘটনার পরে রটে যায় যে স্কুলে জিন ঢুকেছে। এর পর থেকে সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির দু’চার জন ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়তে থাকে। বাধ্য হয়েই স্কুল কর্তৃপক্ষ শনিবার ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিককে গোটা বিষয়টি জানান। সোমবার দ্বিতীয় পিরিয়ড চলাকালীন একই ভাবে ওই দুই শ্রেণির প্রায় বারো জন ছাত্রী কাঁদতে শুরু করে। পরে তারা অজ্ঞান হয়ে পড়ে। আবারও ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে জিনের আতঙ্ক ছাড়িয়ে পড়ে। সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী দীপা দাস বলেন, ‘‘কয়েক দিন ধরেই ক্লাসের কোনও কোনও মেয়ে বলছিল যে তাদের নাকি জিনে ডাকছে। তাদের কথা কেউ কেউ বিশ্বাসও করছিল। আজও এক ছাত্রী হঠাৎ করে কাঁদতে শুরু করে। তাকে দেখে আরও কয়েকজন কাঁদতে থাকে।’’ অভিভাবকদের চাপে এ দিন তিন পিরিয়ডের পরে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ছুটি দিতে বাধ্য হন স্কুল কর্তৃপক্ষ।
খবর পেয়ে চাপড়া গ্রামীণ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা ওই স্কুলে যান। তারা ওই ছাত্রীদের পরীক্ষা করেন। কিন্তু কোনও শারীরিক সমস্যা খুঁজে পাননি। এ দিকে, চিকিৎসকেরা এলেও কেন ওঝা ডাকা হয়নি সেই দাবি তুলে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন একদল গ্রামবাসী। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক জাহান্দার শেখ বলেন, ‘‘কিছু ছাত্রী কান্নাকাটি করে অসুস্থ হয়ে পড়ছে বলে আমরা চিকিৎসকদের খবর দিয়ে ছিলাম। চিকিৎসকরা এসে তাদের পরীক্ষা করে কোনও সমস্যা খুঁজে পাননি। তাঁরা বলছেন এটি আসলে ‘গণ হিস্টিরিয়া।’ প্রয়োজনে স্কুলে একটা সচেতনতা শিবিরও করা হবে বলে তিনি জানান।
বছর কয়েক আগেও একই ভাবে ওই এলাকায় সাপের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল। প্রতিদিনই বাসিন্দাদের কেউ না কেউ ভাবছিলেন তাঁকে সাপে ছোবল মেরেছে। সে বারেও চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে জানিয়েছিলেন সেটি ‘গণ হিস্টিরিয়া’ ছাড়া কিছুই নয়। এ দিন সন্ধ্যায় এগারো জন ছাত্রীকে চাপড়া গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় চিকিৎসার জন্য। কিন্তু অভিভাবকেরা পরে তাদের বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যায়।
শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের অবসরপ্রাপ্ত মনোবিদ দেবাশিস দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘এটা আসলে গণ হিস্টিরিয়া। একজনের থেকে আর একজনের দ্রুত তা ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষা ও সামাজিক ভাবে পিছিয়ে থাকার কারণেই ওই সব এলাকার ছাত্রছাত্রীদের মনে অতি সহজেই এই ধরনের কুসংস্কার দানা বাঁধতে পেরেছে। তারা ভাবছে সত্যিই বুঝি ওই স্কুলে জিন আছে। তাদের ক্ষতি করবে। এটা আসলে মনের ভুল। ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে এর থেকে ওই ছাত্রীদের মুক্ত করা সম্ভব।’’