কারও স্বামী গৃহশিক্ষকতা করেন। কারও স্বামী দিনমজুর। স্বল্প আয়ে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। ছেলে-মেয়েকে স্কুলে পাঠানোর খরচ জোটানোও দায় হয়ে পড়ে। সংসারে গতি আনতে তাই দল গড়েছেন পলি দাস, ইন্দ্রাণী ব্যাপারী, রায়কিশোরী দাস, রত্না দাস ও সর্বাণী দাসেরা। তৈরি করেছেন স্বনির্ভর গোষ্ঠী।
পাশে দাঁড়িয়েছে পুরসভাও। কেন্দ্রীয় সরকারের জাতীয় জীবিকা মিশনের আওতায় ওই মহিলারা পুরসভার সাহায্যে সাইকেল-মোটরবাইকের গ্যারাজ চালাচ্ছেন। এখন সেই দু’চাকায় ভর করে তাঁরা যেমন স্বনির্ভর হয়েছেন, গতি পেয়েছে সংসারও। তাঁরা এখন নিয়মিত ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন।
শহরের সেন্ট্রাল পার্ক এলাকায় কল্যাণী প্রগতি ৭/৩ এরিয়া লেবেল ফেডারেশনের পাঁচ সদস্য মাস পাঁচেক ধরে ওই গ্যারাজ চালাচ্ছেন। একই ভাবে অন্য একটি ফেডারেশনেরও কয়েক জন সদস্যা শহরের আইটিআই মোড় সংলগ্ন এলাকার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সামনে খুলেছেন সাইকেল গ্যারেজ। কল্যাণী পুরসভার জাতীয় শহর জীবিকা মিশনের ম্যানেজার জয়ন্ত দত্ত বলেন, ‘‘ওই মহিলারা গ্যারাজ তৈরি করে সংসারের হাল অনেকটাই সামলে নিয়েছেন। পুরসভা সবসময় ওঁদের পাশে রয়েছে।’’
কল্যাণীর বাসিন্দা পলি দাসের বছর কুড়ি আগে বিয়ে হয়। দশম শ্রেণি উত্তীর্ণ পলির স্বামী গৃহশিক্ষক। মাসে মেরেকেটে কয়েক হাজার টাকা আয়। ছেলে হুগলির আরামবাগের সরকারি পলিটেকনিক কলেজে পড়াশোনা করে। স্বামীর অল্প আয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন পলি। তিনি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত হন। সংসারের আর্থিক হাল ফেরাতে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত হন ইন্দ্রাণী, রায়কিশোরী, রত্না, সর্বাণীরাও।
স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যা হওয়ার পর থেকেই ওঁদের ভাবনা ও নিজেদের সমস্যা কথা জানান পুরসভায়। পুরসভা সাইকেল গ্যারেজ খোলার প্রস্তাব দেয়। দিন দু’য়েক ভাবার পরে দলনেত্রী রায়কিশোরী সায় দেন। পুরসভা রায়কিশোরীদের ফেডারেশনকে একটা জায়গা দেয়। অন্য ফেডারেশন গ্যারেজ গড়ার জায়গা পায় আইটিআই মোড়ের পাশে। দুই ফেডারেশনকে মাসিক স্বল্প ভাড়ায় ওই জায়গা দেয় পুরসভা। পলি জানাচ্ছে, চলতি বছরের ১১ এপ্রিল তাঁরা ফেডারেশন গড়েন। আর পুরসভার অনুমতি নিয়ে ৩০ জুন ওঁরা শুরু করেন গ্যারেজ। এর জন্য তাঁরা পুরসভাকে মাসে ১২০০ টাকা করে ভাড়া দিচ্ছেন। বানিয়েছেন কুপনও। কেউ সাইকেল বা মোটরবাইক রাখতে এলে তাঁর হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে ফেডারেশনের নামে ছাপানো কুপন।
ইন্দ্রাণী জানান, সাইকেল রাখার জন্য ৩ টাকা ও মোটরবাইকের জন্য ৫ টাকা করে নেওয়া হয়। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে শুরু হয় কাজ। শেষ হয় বিকেল ৫টায়। রোদ-ঝড়-বৃষ্টিতেও খোলা থাকে গ্যারেজ। মাস শেষে লাভের খাতায় যোগ হয় হাজার দশেক টাকা। সেই টাকায় ভাগ হয় সকলের মধ্যে। এ ভাবেই ওঁরা এগিয়ে চলেছেন। গড়াচ্ছে সংসারের চাকাও।