রুজিরুটির জন্য ভিন্রাজ্যে গিয়ে আক্রান্ত হতে হচ্ছে বাংলার শ্রমিকদের। —প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
ওড়িশায় কাজ করতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকদের আক্রান্ত হওয়ার অভিযোগ উঠল আবার। এ বার ঘটনাস্থল ওড়িশার গঞ্জাম জেলা। অভিযোগ, শুধুমাত্র বাংলায় কথা বলার জন্য মুর্শিদাবাদের ডোমকলের সাগরপাড়া থানার হরেকৃষ্ণপুর গ্রামের চার পরিযায়ী শ্রমিককে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে। তাঁদের ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দিতে বাধ্য করা হয়। পরিবারের দাবি, চার জনকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত বলে অপবাদ দিয়ে শারীরিক এবং মানসিক ভাবে নিগ্রহ করা হয়। আতঙ্কিত এবং গুরুতর আহত অবস্থায় ওই চার শ্রমিকই বাড়ি ফিরে এসেছেন। তাঁদের মধ্যে ২২ বছরের রুহুল শেখ নামে এক শ্রমিকের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে খবর।
স্থানীয় সূত্রে খবর, রুহুল, নাহিদ সরকার, সামীম শেখ-সহ আরও কয়েক জন যুবক সম্প্রতি ওড়িশায় গিয়েছিলেন। সেখানে তাঁরা মশারি, বিছানার চাদর ও কম্বল ফেরি করতেন। গত সোমবার ওড়িশার গঞ্জাম জেলার কুদুরা থানার রানিপাড়া এলাকায় ফেরি করার সময় তাঁদের উপর অতর্কিত হামলা হয়। আক্রান্ত নাহিদের কথায়, ‘‘শুধুমাত্র বাংলায় কথা বলার জন্যই নয়, আমরা মুসলিম হওয়ায় বজরং দলের সদস্যেরা আমাদের বেদম মারধর করেছে। ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দিতে বাধ্য করা হয়েছিল। ‘জয় শ্রীরাম’ বলার পরেও মার থামেনি।’’ তাঁর অভিযোগ, ওড়িশা না ছাড়লে তাঁদের পুড়িয়ে মেরে ফেলারও হুমকি দেন কয়েক জন। আতঙ্কের মধ্যে সকলেই বাড়ি ফিরে এসেছেন। প্রহৃত রুহুলের কাকা সুখচাঁদ শেখের অভিযোগ, ‘‘আমার ভাইপোকে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে। অভিযুক্তেরা সমাজমাধ্যমে হেনস্থার ছবি-ভিডিয়ো পোস্টও করেছে।’’ আক্রান্তদের অভিযোগ, তাঁরা ওড়িশা পুলিশের কাছে সাহায্য চাইতে গিয়েও ফিরে এসেছেন। কোনও সহযোগিতা করা হয়নি তাঁদের। নাহিদ বলেন, ‘‘আবার আক্রান্ত হতে পারি, সেই আতঙ্কে বাড়ি চলে এসেছি।’’
গত কয়েক মাসে ওড়িশা-সহ দেশের একাধিক রাজ্যে বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিক এবং ছোট ব্যবসায়ীদের আক্রান্ত হওয়ার খবর সামনে এসেছে। ধারাবাহিক ভাবে এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী ঐক্য পরিষদের সম্পাদক আসিফ ফারুক। তিনি বলেন, ‘‘ভিন্রাজ্যের বাঙালি শ্রমিকেরা বার বার আক্রান্ত হচ্ছেন। এই বিষয়ে আমরা আগেও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’’
অন্য দিকে, ডোমকল মহকুমা পুলিশ আধিকারিক শুভম বাজাজ বলেন, ‘‘আটকে রাখা শ্রমিক পরিবারের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। এক জনকে মারধর করা হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। ওড়িশা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রত্যেককে মুক্ত করা হয়েছে। বাড়ি ফিরে এলে তাঁদের সঙ্গে কথা বলব আমরা।’’