৩৭ দিন নিখোঁজ, দেহ মিলল মর্গে

বাড়ি থেকে বেরিয়ে ছিলেন। কিন্তু আর ফেরেননি। সাইত্রিশ দিন পর অবশেষে খোঁজ মিলল তাঁর। হাসপাতালের মর্গে। পুলিশ জানিয়েছে, পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে কানাই সর্দার নামে বছর ৪১-এর ওই ব্যাক্তির। রাস্তার ধারে জখম অবস্থায় পড়েছিলেন তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:৫৭
Share:

কানাই সর্দার

বাড়ি থেকে বেরিয়ে ছিলেন। কিন্তু আর ফেরেননি। সাইত্রিশ দিন পর অবশেষে খোঁজ মিলল তাঁর। হাসপাতালের মর্গে।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে কানাই সর্দার নামে বছর ৪১-এর ওই ব্যাক্তির। রাস্তার ধারে জখম অবস্থায় পড়েছিলেন তিনি। স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেই মারা যান কানাই। এর পর পুলিশই অজ্ঞাতপরিচয় ওই মৃতদেহ পাঠিয়ে দেয় হাসপাতালের মর্গে। যদিও গ্রামের লোকজনের দাবি, দুর্ঘটনা নয়। স্রেফ খুন করা হয়েছে কানাইকে। কৃষ্ণনগরের বাঘাডাঙা-একতারপুরের ঘটনা। রাস্তার ধারে মৃতদেহ ফেলে রেখে বিক্ষোভ দেখান আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রামের লোকজন। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়।

ঠিক কী ঘটেছিল? কেন খুনের অভিযোগ তুলছে গ্রামবাসী?

Advertisement

মৃত কানাই সর্দারের স্ত্রী পার্বতী সর্দার জানান, ভালুকা নতুন পাড়ার গৌতম ঘোষ নামে এক এজেন্টের মাধ্যমে একটি অর্থলগ্নি সংস্থায় তাঁর নামে টাকা জমা দিতেন তাঁরা। গত তিন বছর ধরে মাসে তিনশো টাকা করে জমা দিয়েছেন। সম্প্রতি পলিসি-র মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘গত ৮ অগস্ট রানাঘাটের অফিস থেকে ওই পলিসি-র টাকা তুলতেই আমার স্বামী বাড়ি থেকে বেরোন। ওই এজেন্টের সঙ্গে উনি রানাঘাটে যান। কিন্তু তাঁর পর আর বাড়ি ফেরেননি।’’ এর পর অনেক খোঁজ করেও কানাইয়ের খোঁজ মেলেনি। শেষ পর্যন্ত গত ২৪ অগস্ট কোতোয়ালি থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়। পার্বতীদেবীর দাবি, “আমার স্বামীকে ওই এজেন্ট খুন করেছে। অভিযুক্ত এজেন্টকে গ্রেফতার করলেই সব কিছু জানা যাবে।”

দেহ নিয়ে বিক্ষোভ। — নিজস্ব চিত্র

কানাই সর্দারের নিখোঁজের বিষয়ে গত ১০ সেপ্টেম্বর স্থানীয় তৃণমূল পরিচালিত জোয়ানিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান দিলীপকুমার দে সালিশি সভা ডাকেন। সেখানে অভিযুক্ত এজেন্ট গৌতম ঘোষের পাশাপাশি কানাইয়ের গ্রামের লোকও উপস্থিত ছিলেন। গৌতমকে বলা হয়েছিল, তাঁর সঙ্গেই যখন রানাঘাট গিয়েছিলেন কানাই, তখন ১৫ দিনের মধ্যে কানাইকে খুঁজে দিতে হবে গৌতমকেই। এর পর পুলিশে অভিযোগ হতেই এলাকা-ছাড়া গৌতম।

জোয়ানিয়ার উপপ্রধান দিলীপ দে বলেন, ‘‘গৌতম সে দিন আমাদের জানিয়েছিলেন, রানাঘাটে গিয়ে টাকা মেলেনি। কারণ অ্যাকাউন্টে তখনও টাকা আসেনি। খালি হাতেই ফিরতে হয়। তাঁরা দু’জন রানাঘাট থেকে একই ট্রেনে শান্তিপুর স্টেশনে এসে নেমেছিলেন। তার পরে শান্তিপুর থেকে গৌতম মোটরবাইকে ওঠেন। কানাই তাঁর সাইকেলে ফিরছিলেন। তার পরে কী হয়েছে, তাঁর জানা নেই।’’

পুলিশ সূত্রে খবর, গত ৮ অগস্ট গভীর রাতে কানাই সর্দার শান্তিপুরের বাগদিয়া বাজারে একটি গাড়ির ধাক্কায় জখম হন। শান্তিপুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে আসার আগেই স্থানীয় কিছু লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে সে দিন শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে ভর্তি করেন। সে দিন গভীর রাতেই সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়। অজ্ঞাতপরিচয়ের মৃতদেহ হিসাবে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের মর্গে কানাইবাবুর দেহ এত দিন রাখা ছিল। পুলিশের দাবি, ওই ঘটনার প্রায় ১৬ দিন পরে ২৪ অগস্ট কানাইবাবুর স্ত্রী কোতোয়ালি থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। পুলিশের দাবি, সব জায়গায় খোঁজ পাঠানো হয়। দিন সাতেক আগে মৃত দেহের ছবি ও নিখোঁজের ছবি দেখে শনাক্ত করা হয়, একই ব্যাক্তি। শুক্রবার এসে দেহ শনাক্ত করে বাড়ি নিয়ে যায় মৃতের পরিবার। এর পর শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে গ্রামের পাশেই রাস্তার ধারে মৃতদেহ ফেলে রেখে গ্রামের লোকজন বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। শনিবারও তাঁরা সেখানে মৃতদেহ ফেলে রেখে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। নদিয়ার পুলিশ সুপার শীষরাম ঝাঝারিয়া বলেন, “খুনের অভিযোগ পেয়েছি। এটা খুন না দূর্ঘটনায় মৃত্যু তা তদন্ত করে দেখা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন