মোবাইলের ফাঁদে ফস্কেছে পরীক্ষা, ঘরে ফিরল ছেলে

মোবাইলের মোহে পথ ভুলে গিয়েছিল ছেলেটা। মাধ্যমিকে ভাল ফল করেছিল। উচ্চ মাধ্যমিক পড়ছিল বিজ্ঞান নিয়ে, তাতেও ভাল ফল। কিন্তু টেস্টের ঠিক আগে ছেলেটা বুঝল, সে তৈরি নয়। তার পরেই বেলডাঙার এমপি রোডের ছাত্রাবাস থেকে উধাও হয়ে গিয়েছিল শাহনাওয়াজ শেখ।

Advertisement

সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়

বেলডাঙা শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৭ ০২:২২
Share:

মোবাইলের মোহে পথ ভুলে গিয়েছিল ছেলেটা।

Advertisement

মাধ্যমিকে ভাল ফল করেছিল। উচ্চ মাধ্যমিক পড়ছিল বিজ্ঞান নিয়ে, তাতেও ভাল ফল। কিন্তু টেস্টের ঠিক আগে ছেলেটা বুঝল, সে তৈরি নয়।

তার পরেই বেলডাঙার এমপি রোডের ছাত্রাবাস থেকে উধাও হয়ে গিয়েছিল শাহনাওয়াজ শেখ। পাঁচ মাস বাদে খোঁজ মিলল দার্জিলিংয়ের মাটিগাড়ায়। সেখানেই ইসমাইল শেখ নামে এক জনের বাড়িতে সে ছিল। ক’টি ছেলেমেয়েকে পড়াচ্ছিল। পাড়ার সকলে ভালবেসে ফেলেছিল তাকে।

Advertisement

শাহনওয়াজের বাড়ি নওদার প্রত্যন্ত সোনাটিকুরি গ্রামে। তার বাবা খেজমত শেখ মসজিদে আজান দিয়ে কষ্টেসৃষ্টে সংসার চালান। বেলডাঙার গোবিন্দসুন্দরী বিদ্যাপীঠে পড়ার জন্য ছেলেকে ছাত্রাবাসে রেখেছিলেন তিনি।

কিন্তু একাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময়েই মোবাইলের মোহে পড়েছিল শাহনাওয়াজ। দিনরাত খুটখাট চলত। নষ্ট হত পড়ার সময়। খেজমত এক দিন রেগেমেগে ফোন ভেঙে দেন। পরে একটি সাধারণ মোবাইল ফোন হাতে উধাও হয়ে যায় শাহনাওয়াজ।

কিন্তু পুলিশ যখন তদন্তে নামে, শাহনাওয়াজ আগের নম্বরটি ব্যবহার করত না। অন্য সূত্রে পুলিশ দু’টি নম্বর পায়। তার একটির সিম বেনামি, অন্যটি রকিবুল আনসারি নামে এক লরির খালাসির। গত ২২ এপ্রিল শিলিগুড়ির প্রধাননগর থানায় যায় বেলডাঙার পুলিশ। তাদের সাহায্যে দার্জিলিং মোড়ের বাসিন্দা রকিবুলের নাগাল পাওয়া যায়। শাহনাওয়াজকে তিনি চিনতেন। রকিবুলই পুলিশকে মাটিগাড়ায় ইসমাইল শেখের বাড়ির খোঁজ দেয়। পুলিশের সঙ্গে বাবাকে আসতে দেখে কেঁদে ফেলে ছেলেটি।

কী ভাবে ইসামাইলের বাড়িতে পৌঁছেছিল সে?

শাহনাওয়াজ জানিয়েছে, টিউশন ফি বাবদ বাবার দেওয়া ৯০০ টাকা তার হাতে ছিল। তা সম্বল করেই বেলডাঙা বড়ুয়া মোড় থেকে বাস ধরে সে মাটিগাড়া যায়। অচেনা জায়গা। বাস থেকে নেমে সেন্ট মেরিজ চার্চের সামনে বসেছিল সে। স্থানীয় লোকজন এসে এটা-ওটা জিজ্ঞাসা সে সব কথা খুলে বলে। জানায়, সে উচ্চ মাধ্যমিক দিতে পারবে না বলে জানালে বাবা তা সহ্য করতে পারবেন না। তাই সে পালিয়ে এসেছে। সব শুনে ইসমাইল তাকে বাড়িতে আশ্রয় দেন।

শাহনাওয়াজ সকলকে অনুরোধ করেছিল, তার বাড়িতে যেন খবর না দেওয়া হয়। ইদের সময়ে সে নিজেই ফিরে যাবে। পরে কয়েকটি খুদে ছাত্রছাত্রীকে বাড়ির বারান্দায় পড়াতে শুরু করে সে। ইসমাইলের বাড়ির ছেলেমেয়েদেরও পড়াচ্ছিল। তার জন্য কারও থেকে পয়সাকড়ি নিত না সে। ফাঁকা সময়ে এলাকার মুদিখানা, মনোহারি ও জুতোর দোকানে খাতা লিখে কিছু রোজগার করত।

সোমবার আদালতে হাজির করার পরে বাবার সঙ্গে বাড়ি ফিরল ছেলে। তার স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুশান্ত খান বলেন, ‘‘ছেলেটি বেশ মেধাবী। কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্টই দিল না!’’

এ বার না হয় নতুন করে ফের সব শুরু করবে শাহনাওয়াজ। যে এক বার পারে, সে বারবারই পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন