মনের ভুলে পথভোলা, সহায় পুলিশ

দিন চার আগে এএসআই ঋত্বিক সরকারের সঙ্গে কথায়-কথায় সঞ্জয় বিহারে দ্বারভাঙা জেলার ঘনশ্যামপুর থানা ও পাহদি গ্রামের নাম বলেন।

Advertisement

কল্লোল প্রামাণিক 

করিমপুর শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:৫৭
Share:

হোগলবেড়িয়া থানা চত্বরে স্নান রঞ্জিতের। নিজস্ব চিত্র

বিয়ের কয়েক মাসের মধ্যে ঘর নড়বড়ে হয়ে গিয়েছিল তাঁর। ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন স্ত্রী। তার পর থেকে আর মাথাটা ঠিক মতো কাজ করছিল না দ্বারভাঙার সঞ্জয় রামের।

Advertisement

এক দিন হঠাৎ বাড়ি থেকে উধাও যান তিনি। অনেক দিন খোঁজ নেই। ঘুরতে-ঘুরতে কী ভাবে যেন এসে পড়েছিলেন বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা মুক্তাদহের রাস্তায়। দিন ছয়েক আগে সেখান থেকেই হোগলবেড়িয়া থানার পুলিশ তাঁকে তুলে এনেছিল। সুশ্রূষা করে চাঙ্গাও করে তোলে।

দিন চার আগে এএসআই ঋত্বিক সরকারের সঙ্গে কথায়-কথায় সঞ্জয় বিহারে দ্বারভাঙা জেলার ঘনশ্যামপুর থানা ও পাহদি গ্রামের নাম বলেন। ইন্টারনেট ঘেঁটে ঋত্বিক যোগাযোগ করেন ঘনশ্যামপুর থানার পুলিশের সঙ্গে। তাঁদের কাছ থেকে পাহদি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের নম্বর জোগাড় করে ফোন করেন তিনি। শোনেন, সেখান থেকেই হারিয়ে গিয়েছেন সঞ্জয় রাম নামে এক যুবক। তাঁদের মাধ্যমেই যোগাযোগ করে সঞ্জয়ের বাড়ির সঙ্গে।

Advertisement

মঙ্গলবার বিকেলে হোগলবেড়িয়া এসে পৌঁছন সঞ্জয়ের ঠাকুর্দা ও কাকা। তাঁদের দেখেই মুখে হাসি ফোটে সঞ্জয়ের। তাঁর কাকা রাম অধীন রাম জানান, দেড় বছর আগে হঠাৎই এক দিন সঞ্জয় হারিয়ে গিয়েছিলেন। নানা জায়গায় খুঁজেও সন্ধান মেলেনি। তাঁকে ফিরে পাওয়ার আশাই ছেড়ে দিয়েছিলেন তাঁরা। বুধবার সঞ্জয়কে নিয়ে ফেরার সময়ে হোগলবেড়িয়া থানার পুলিশ ও সিভিক ভল্যান্টিয়ার, বিশেষ করে এএসআই-কে ধন্যবাদ জানিয়ে গিয়েছেন তাঁরা। এটাই কিন্তু প্রথম নয়। মাসখানেক আগে ওই বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা হোগলবেড়িয়া থানারই কাছারিপাড়ায় বছর পঁয়ত্রিশের এক মানসিক ভারসাম্যহীন যুবককে ঘুরতে দেখা গিয়েছিল। উসকোখুসকো চুল, মুখ ভর্তি দাড়ি-গোঁফ। কাঁটাতারের পাহারাদার বিএসএফ জওয়ানেরাই তাঁকে খেতে-টেতে দিতেন। দিনভর রাস্তায় ঘোরা, রাতে খোলা আকাশের নীচে মাঠে-ঘাটে ঘুম। এ ভাবে দিন পনেরো কাটার পরে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাঁকে নিয়ে আসে।

ঋত্বিক বলেন, ‘‘বড়বাবুর (ওসি) কথা মতো প্রথমেই ছেলেটির চুল-দাড়ি কাটিয়ে সাফসুতরো করে ফেলা হয়। রোজ আমি ওকে স্নান করিয়ে খাইয়ে দিতাম আর অবসর সময়ে প্রচুর কথা বলতাম।’’ কথা বলতে-বলতেই জানা যায়, তাঁর নাম রঞ্জিত পাসোয়ান। কিন্তু আর কিছু তিনি মনে করতে পারছিলেন না। দিন দশেক পরে হঠাৎই এক দিন ধোঁয়াটে স্মৃতির অতল থেকে ভেসে ওঠে বিহারের পটনা জেলার মনের এলাকার নাম। ঋত্বিক যোগাযোগ করেন সেখানকার থানায়। রঞ্জিতের ছবি হোয়াটসঅ্যাপ মারফত পাঠিয়েও দেন। সেখানকার পুলিশ খবর দেয় মহিনাবাঁ বাগীচায় রঞ্জিতের বাড়িতে। গত ২৭ জানুয়ারি বাড়ির লোকজন এসে তাঁকে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। হোগলবেড়িয়া থানার ওসি কমটন রায় বলেন, “রুটিন কাজ সামলেওকর্মীরা যে মানবিকতা দেখিয়েছেন, তার জন্য আমি গর্বিত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন