Sutapa Chowdhury Murder Case

ফাঁসির সাজা শোনার পর আদালতে ‘শান্ত’ সুশান্ত, দু’টি বাক্যে স্বগতোক্তি করে উঠলেন সুতপার খুনি

সাজা ঘোষণার পর আদালত কক্ষ ছাড়তে গিয়ে নীরব ছিলেন সুতপার খুনি সুশান্ত। তবে উপস্থিত পরিজনদের দিকে তাকিয়ে তিনি কেঁদে ফেলেন। তাঁর মুখে স্বগতোক্তিও শোনা যায়।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

বহরমপুর শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০২৩ ১৯:০১
Share:

(বাঁ দিকে) নিহত সুতপা চৌধুরী। হত্যাকারী সুশান্ত চৌধুরী (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

মুর্শিদাবাদে সুতপা চৌধুরী হত্যাকাণ্ডে খুনি সুশান্ত চৌধুরীকে বৃহস্পতিবার ফাঁসির সাজা শুনিয়েছে বহরমপুরের তৃতীয় দ্রুত নিষ্পত্তি (ফাস্ট ট্র্যাক) আদালত। বিচারক সন্তোষকুমার পাঠকের মুখে চরম শাস্তির কথা শুনে আদালত কক্ষেই কেঁদে ফেলেন সুশান্ত। সেই সঙ্গে আদালতে তাঁর মুখে স্বগতোক্তি শোনা যায়। দু’টি বাক্য যেন নিজের মনেই বলে ওঠেন প্রাক্তন প্রেমিকার হত্যাকারী।

Advertisement

আদালতে দাঁড়িয়ে আইনজীবীদের দিকে তাকিয়ে সুশান্ত নিজেই বলে ওঠেন, ‘‘সহানুভূতির খেলা হল। ন্যায়বিচার হল না।’’ কারও উদ্দেশে ওই দু’টি লাইন তিনি বলেননি। আদালত থেকে বেরিয়েও তাঁকে কিছু বলতে শোনা যায়নি। মোটের উপর সুশান্ত শান্তই ছিলেন।

সাজা ঘোষণার পর আদালত কক্ষ ছাড়তে গিয়ে নীরব ছিলেন সুশান্ত। তবে উপস্থিত পরিজনদের দিকে তাকিয়ে কেঁদে ফেলেন। সুশান্তের আইনজীবী পীযূষ ঘোষ জানিয়েছেন, রায়ের কপি হাতে পেলে পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।

Advertisement

সুতপা খুনের ১৫ মাসের মাথায় গত মঙ্গলবার সুশান্তকে দোষী সাব্যস্ত করে বহরমপুরের আদালত। সাজা ঘোষণা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত স্থগিত রাখা হয়েছিল। আদালতে সুশান্তের আইনজীবী তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আবেদন জানিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘আমার মক্কেল এক জন মেধাবী ছাত্র। তাঁর বৃহত্তর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে অন্ততপক্ষে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের প্রার্থনা করেছিলাম। মহামান্য আদালত তাঁর মৃত্যুদণ্ডের সাজা দিয়েছে।’’

সুশান্তের ফাঁসির সাজা শুনে আদালত কক্ষে কন্যার নাম ধরে চিৎকার করে ওঠেন সুতপার বাবা স্বাধীন চৌধুরী। ‘‘সুতপা, সুতপা মা...’’ বলে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠেন তিনি। সুশান্তের কান্নার সঙ্গে সুতপার বাবার হাহাকার যেন মিলেমিশে গিয়েছিল। প্রেমের সম্পর্কের জটিলতায় এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সাজা শুনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায় আদালত চত্বরে। সাজা ঘোষণার পর আদালতের বাইরে বেরিয়ে সুতপার বাবা বলেন, ‘‘আমার মেয়ের আত্মা এ বার শান্তি পাবে। এই ধরনের ঘটনায় মৃত্যুদণ্ড না হলে অন্য কারও সঙ্গেও এমন ঘটতে পারত।’’

গত বছর ২ মে মুর্শিদাবাদের বহরমপুরের গোরাবাজার এলাকায় সন্ধ্যা ৬:৩৫ মিনিট নাগাদ শহিদ সূর্য সেন রোড দিয়ে মেসে ফিরছিলেন সুতপা। সিসি ক্যামেরাতে দেখা যায় তাঁকে অনুসরণ করছেন এক যুবক। পরে জানা যায়, ওই যুবক সুশান্ত, সুতপার প্রাক্তন প্রেমিক। মেসের দরজার সামনেই সুতপার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি। ছুরি দিয়ে এলোপাথাড়ি কোপান সুতপাকে। হাতে থাকা নকল পিস্তল উঁচিয়ে আশপাশে ভিড় জমাতে থাকা স্থানীয়দের দিকে তেড়ে যান সুশান্ত। চোখের সামনে খুন হতে দেখেও আগ্নেয়াস্ত্রের ভয়ে কেউ এগিয়ে আসার সাহস করেননি।

পরের দিনই শমসেরগঞ্জ থেকে গ্রেফতার হন সুশান্ত। ঘটনার ৭৫ দিনের মাথায় বহরমপুর আদালতে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের চার্জশিট জমা দেয় পুলিশ। অভিযুক্ত সুশান্তের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ (খুন)-সহ একাধিক ধারায় চার্জশিট দাখিল করা হয়। আদালতে জমা পড়ে ৩৮৩ পাতার চার্জশিট। পুলিশি তদন্তে উঠে আসে সুতপার উপর রাগ এবং হতাশা থেকে এই খুন করেন অভিযুক্ত। পাশাপাশি পুলিশকে বিভ্রান্ত করতে বার বার মিথ্যা বয়ান দেওয়ার চেষ্টা করেন বলেও অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে।

সুতপার দেহে ছিল ৪২টি আঘাতের চিহ্ন। আঘাত গুরুতর ছিল বলে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। এই মামলায় ৩৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। মৃতার বাবা-সহ সাক্ষ্য দেন ২০২২ সালের ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, সাংবাদিক, একটি ই-কমার্স সংস্থার কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী এবং পুলিশ। সমস্ত পক্ষের বক্তব্য শোনার পর সুশান্তকেই দোষী সাব্যস্ত করেছিল আদালত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন