ওয়েব-লিখন। নতুন করে।
ওঁরা নেই।
অথচ বহাল তবিয়তেই রয়ে গিয়েছেন ওঁরা, সকলেই।
কেউ আড়াই কেউ তিন কেউ বা আরও ‘ভূতপূর্ব’। মুর্শিদাবাদ জেলা ওয়েবসাইটে সময় থমকে রয়েছে পূর্ববৎ!
ব্যাপারটা নজরে আনতেই হইচই শুরু হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে, শেষতক চুপিসারে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে ‘অতীত’। না হলে, দিব্যি রয়ে গিয়েছিলেন তিন বছর আগে জেলার দায়িত্ব ছেড়ে যাওয়া পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর। জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও এবং তাঁদের ‘পদাঙ্ক’ অনুসরন করে বিবিধ বিভাগে রয়ে গিয়েছিলেন তাঁরা, যাঁদের কেউ তিন কেউ বা পাঁচ বছর আগেই ছেড়ে গিয়েছেন মুর্শিদাবাদ জেলা।
আরও পড়ুন
লাশকাটা ঘর নিয়ে বিপাকে লালবাগ শহর
রাজ্যের অন্য জেলায় ওয়েবসাইটে ঝলমলে আপডেট থাকলেও প্রান্তিক মুর্শিদাবাদ এখনও সেই পিছিয়েই, জানেন তো? প্রশ্নটা শুনে চমকে উঠেছেন, দিন কয়েক আগে দায়িত্ব নেওয়া জেলাশাসক শরৎ দ্বিবেদী। বলছেন, ‘‘তাই নাকি, দেখছি তো!’’
জেলা প্রশান সূত্রে জানা গিয়েছে, নড়াচড়াটা শুরু হয় এর পরেই। বিকেলে ওয়েবসাইট খুলে দেখা গিয়েছে, অনেকেই ‘ফিরে’ গিয়েছেন। নব্যদের নামও বসেছে কোথাও, দেখাচ্ছে বদলের সূত্র ধরে, ‘সাইট আন্ডার কনস্ট্রাকশন’।
জেলা প্রশাসনে সদ্য আসা এক পদস্থ কর্তা বলছেন, ‘‘অন্য কয়েকটি জেলা যেখানে সামান্য কাজ করে ঢালাও সাফল্যের গীত গাইছে, সেখানে এ জেলায় তো দেখছি যেটুকু কাজ হয়েছে তারও উল্লেখ নেই।’’ কেন?
প্রশাসনের এক কর্তা ধরিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘আসল কথা হল, কংগ্রেসের এই শক্ত ঘাঁটিতে শাসক দল দাঁত ফুটিয়েছে সদ্য। এত দিন তাই সরকারি ওয়েবসাইটে মাকড়সার জাল পড়েছিল। কেউ খেয়ালই করেননি। এ বার করছেন।’’
আর তাই শুক্রবার দুপুর থেকে একে একে ফুটে উঠছে মতিঝিলের বাগানের ছবি, সদ্য সারানো রাস্তার চকচকে অ্যাসফাল্ট কিংবা ঝকঝকে প্রশাসনিক ভবন।
মুর্শিদাবাদের অন্যতম আকর্ষণ লালবাগের মতিঝিল নিয়ে এলাকার মানুষের প্রচ্ছন্ন গর্ব থাকলেও এত দিন তার কোনও উল্লেখই ছিল না সরকারি সাইটে। কন্যাশ্রী, শৌচাগার নির্মাণ-সহ বিভিন্ন প্রকল্পে সাফল্য মিললেও সরকারি সাইটে এত দিন তার কোনও উল্লেখ ছিল না।
ছিল না, পঞ্চায়েত, ব্লক, জেলা পরিষদ নিয়েও কোনও তথ্য। ফরাক্কা ব্যারাজ, ফরাক্কা এবং সাগরদিঘি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, বিড়ি শিল্প, রেজিনগর শিল্পতালুক, একাধিক সিমেন্ট কারখানা— নেই এর দীর্ঘ সেই তালিকায় ছিল না জেলার স্কুল, কলেজ কিংবা বিভিন্ন পর্যটন স্থানের নামোল্লেখও।
জিয়াগঞ্জের শিক্ষাবিদ কিশোর রায়চৌধুরী বলেন, “ভরা ডিজিট্যালের যুগ। হাত বাড়ালেই বিশ্ব। তার পরেও এই ঘুম না ভাঙার কী কোনও কারণ থাকতে পারে!’’
প্রাক্তন সাংসদ ফরাক্কার আবুল হাসনাত খান বলছেন, “ক’দিন আগেই ঘটনাচক্রে বিড়ি শিল্প নিয়ে একটি সরকারি তথ্য দেখতে জেলার ওয়েবসাইট খুলেছিলাম। ও বাবা একটা শব্দও নেই।’’
কেন হয়নি আপডেট?
জেলা ওয়েবসাইটের দায়িত্বে থাকা তথ্য সংস্কৃতি দফতরের এক কর্তা বলছেন, ‘‘এ ব্যপারে যত কম বলা যায় ততই মঙ্গল!’’ ওই দফতরের সহকারি ইঞ্জিনিয়ার অভিষেক ঘোষ অবশ্য দায় এড়াচ্ছেন, “এ কাজ হয় জেলাশাসকের নির্দেশে। তিনি নির্দেশ না দিলে আমরা কিছু করতে পারি না।”
তবে, সদ্য যোগ দেওয়া জেলাশাসক শরৎ দ্বিবেদী বলছেন, “এটা চলতে পারে না। সব আপডেট করা হবে। ক’টা দিন সময় দিন।’’
এ দিন দুপুর থেকেই তাই অতীত মুছে বর্তমানে ফিরতে চাইছে মুর্শিদাবাদ সাইট।