একই পাত, পৃথক ছাদ

রঙিন টিনের ছাউনি। চারপাশে কংক্রিটের দেওয়ালের উপর রং-বেরঙের লোহার রেলিং।

Advertisement

সামসুদ্দিন বিশ্বাস

বহরমপুর শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৯ ০০:০৭
Share:

হরিহরপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়

মিডডে মিলের ব্যবস্থা রয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলার সব সরকারি স্কুলেই। কিন্তু পড়ুয়ারা কোথায় বসে সেই মিল খাচ্ছে? প্রশ্নটা তুলে দিয়েছে মুর্শিদাবাদের মির্জাপুরের দক্ষিণপাড়া প্রাথমিক স্কুল। মঙ্গলবার দেখা গিয়েছে, ওই স্কুলের পড়ুয়ারা মিডডে মিল খাচ্ছে সেপটিক ট্যাঙ্কের উপরে বসে। পাশেই রয়েছে পার্থেনিয়ামের জঙ্গল, ডোবা। বুধবারেও হরিহরপাড়া ও জলঙ্গির দু’টি স্কুলেও পড়ুয়াদের গাছতলায় বসে মিডডে মিল খেতে দেখা গিয়েছে। অথচ এই জেলাতেই এমন কিছু স্কুল রয়েছে যেখানে মিডডে মিল খাওয়ার জন্য রয়েছে ডাইনিং হল।

Advertisement

রঙিন টিনের ছাউনি। চারপাশে কংক্রিটের দেওয়ালের উপর রং-বেরঙের লোহার রেলিং। ভিতরে রয়েছে টাইলস বসানো কংক্রিটের ডাইনিং টেবিল। সেখানে বসেই নিশ্চিন্তে মিডডে মিল খায় পড়ুয়ারা। ছবিটা বেলডাঙার সূতীঘাটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। আবার গাছতলায় বসে মিডডে মিল খাচ্ছে হরিহরপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা।

একই জেলায় এই বৈপরীত্য কেন? ডাইনিং হল না থাকার জন্য কেউ প্রশাসনের দিকে আঙুল তুলছেন, কেউ বলছেন, ‘‘ডাইনিং হল না থাকলেও ‘ম্যানেজ করে’ শ্রেণিকক্ষে সুন্দর ভাবে মিডডে মিল খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা যায়।’’

Advertisement

হরিহরপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা বীথিকা মাহাতো বলছেন, ‘‘ডাইনিং হল নেই। তাই একটি ঘরে মিডডে মিল খাওয়ানো হয়। কিন্তু সব ছাত্রছাত্রীর ওই ঘরে জায়গা হয় না। ফলে কিছু ছাত্রছাত্রী বাইরে মিডডে মিল খায়। আমরা প্রশাসনের কাছে ডাইনিং হলের জন্য আবেদন করেছি।’’ হরিহরপাড়ার বিডিও পূর্ণেন্দু সান্যাল বলেন, ‘দ্রুত যাতে ডাইনিং হল তৈরি হয় তার ব্যবস্থা করা হবে।’’

সূতীঘাটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহম্মদ হিলালউদ্দিন বলছেন, ‘‘ব্লক প্রশাসন থেকে গত বছর মিডডে মিলের ঘর তৈরি করে দিয়েছে। ওই সময় কংক্রিটের টেবিলে আমরা স্কুল থেকে হাজার দশেক টাকা খরচ করে টাইলসও বসিয়েছি।’’

তবে ইচ্ছে থাকলে যে উপায় হয় সে পথ দেখাচ্ছে লালগোলার লস্করপুর হাইস্কুল। ২০১৪ সালের আগে পর্যন্ত স্কুলের পড়ুয়ারা খোলা জায়গায় কিংবা গাছের তলায় বসে মিডডে মিল খেত। কিন্তু কয়েকটি শ্রেণিকক্ষ পড়ে থাকত। সেই শ্রেণিকক্ষে কংক্রিটের টেবিল তৈরি করে তাতে মার্বেল বসানো হয়।

সেখানেই গত পাঁচ বছর থেকে মিডডে মিল খাচ্ছে পড়ুয়ারা। প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম জানাচ্ছেন, ‘‘কয়েকটি ঘর পড়েই ছিল। সেখানে কিছু খরচ করে ডাইনিং হল তৈরি করা হয়েছে।’’

মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) দেবোতোষ মণ্ডল বলেন, ‘‘বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ডাইনিং হলের জন্য টাকা বরাদ্দ হয়েছে। কোথাও কাজ শেষ হয়েছে, কোথাও কাজ চলছে। তবে ডাইনিং হল না থাকলেও খোলা জায়গায় বা গাছতলায় বসে পড়ুয়ারা যাতে মিডডে মিল না খায় তা স্কুলগুলিকে আগেই বলা হয়েছে।’’

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় প্রায় ৫ হাজার ৮০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মিডডে মিল চলে। গত বছর এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, প্রায় পাঁচ হাজার ৪৫০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ডাইনিং হল নেই। সে সময় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, মিডডে মিলের জমা থাকা টাকার সুদ থেকে ডাইনিং হল তৈরি করা হবে। সেই মতো প্রায় ১০০ টি বিদ্যালয়ে ডাইনিং হল তৈরি করা হয়েছিল।

এ বছর মিডডে মিল দফতরের পক্ষ থেকে জেলায় উচ্চ বিদ্যালয় ও প্রাথমিক বিদ্যালয় মিলিয়ে ৬৩৪টি স্কুলে ডাইনিং হলের জন্য অর্থ দিয়েছে। সেগুলির কোথাও কাজ শেষ হয়েছে, কোথাও কাজ চলছে।

এ ছাড়াও ১৮০ জন করে পড়ুয়া খেতে বসতে পারবে এমন ২১ টি বিদ্যালয়ে মডেল ডাইনিং হল তৈরির ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছে জেলা প্রশাসন। প্রতিটি হলের জন্য খরচ হবে ১৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। শীঘ্রই এই প্রকল্পের দরপত্র ডাকা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন