মুম্বই মুর্গা বিরিয়ানি হোক, রায়তা লাগবেই

মহারানির রাজত্বে তাঁর জন্য যে ভাতার ব্যবস্থা হয়েছে তাতে তিনি রোজ বিরিয়ানি খেতে পারেন বটে, কিন্তু গোটা খানদান, আশ্রিত আর চাকর-বাকরেরা পাতে মাংস পায় কী করে? তাই মাংসের সঙ্গে মিশল আলু। ‘অওয়ধি’ বিরিয়ানি কিসিম বদলে বাংলার বিরিয়ানি হয়ে গেল। এ হেন বিরিয়ানি ছাড়া কি আর ঈদ জমে!

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৮ ০৭:২০
Share:

ইদের পাতে।

বাঙালিকে বিরিয়ানি খেতে শেখালেন নবাব ওয়াজেদ আলি শা। সিপাহি বিদ্রোহের ঠিক আগে অওয়ধ থেকে নির্বাসিত লখনউয়ের নবাব জীবনের শেষ তিরিশটা বছর কাটালেন কলকাতার মেটিয়াবুরুজে।

Advertisement

মহারানির রাজত্বে তাঁর জন্য যে ভাতার ব্যবস্থা হয়েছে তাতে তিনি রোজ বিরিয়ানি খেতে পারেন বটে, কিন্তু গোটা খানদান, আশ্রিত আর চাকর-বাকরেরা পাতে মাংস পায় কী করে? তাই মাংসের সঙ্গে মিশল আলু। ‘অওয়ধি’ বিরিয়ানি কিসিম বদলে বাংলার বিরিয়ানি হয়ে গেল।

এ হেন বিরিয়ানি ছাড়া কি আর ঈদ জমে! বুধবার তেহট্ট থেকে তিওরখালি, চাপড়া থেকে চাকদহ— দিনভর ম-ম করল পোলাও আর বিরিয়ানির গন্ধে। দেবগ্রাম থেকে ভাইয়ের জন্য কুরবানির মাংস নিয়ে নবদ্বীপ চলে এলেন মর্জিনা খাতুন। দাদা নবদ্বীপ বকুলতলা হাইস্কুলের শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, “কুরবানির মাংস তিন ভাগ হয়। এক ভাগ গরিবদের মধ্যে বিলিয়ে দিতে হয়, এক ভাগ আত্মীয়দের আর এক ভাগ থাকে নিজেদের জন্য। তাই এ দিন গরিব-বড়লোক সকলের ঘরেই মাংসের পদের এত বাহুল্য।”

Advertisement

আগের দিন থেকেই স্পেশ্যাল মাটন রেজালার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন সোনডাঙার ফরিদা ইসলাম। বুধবার দুপুরের মেনুতে তার সঙ্গেই পোলাও। রানাঘাটের শফিকুল ইসলামের বাড়িতে সকালে ইদের নমাজের পর ছিল শিরখুরমা আর লাচ্চা পরোটার বন্দোবস্ত। শিরখুরমা হল মাখন, চিনি এবং দুধ দিয়ে তৈরি রাজকীয় সেমাই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ইদের মেনুও বদলে যাচ্ছে। শফিকুল বলেন, “লোকে এখন অনেক স্বাস্থ্য সচেতন। গুরুপাক খাবার খেতে চায় না। সুগার, কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস বা হার্টের অসুখ তো এখন ঘরে-ঘরে।”

ধুবুলিয়ার তহমিনা চৌধুরী বলেন, “মোগলাই পরোটা, ঘি চপচপে পোলাও, মুর্গ মুসল্লম, কিমা কাবাব, লাহৌরি কাবাবের জমানা যেতে বসেছে। পোলাওকে সরিয়ে জায়গা করে নিচ্ছে লঘুপাকের ফ্রায়েড রাইস, চিকেন ফ্রাই বা চিকেন টিক্কা।”

তবে বকরি ইদের দিনে মাংসের ঝোল ভাতেই সকলের মন উঠছে, এমনও ভাবার কারণ নেই। দেবগ্রাম, নাকাশিপাড়া, চাপড়া, কালীগঞ্জ, পলসন্ডা, তেহট্ট জুড়ে লাচ্চা সেমাই, চালের রুটি, রুমালি রুটির সঙ্গে মাংস পায়েসের বিপুল আয়োজন ছিল ঘরে ঘরে। এই এলাকার বহু ছেলেই পশ্চিম এশিয়া বা মুম্বইয়ের হোটেলে কাজ করেন। উৎসবে ঘরে ফিরে তাঁরা নতুন পদ রেঁধে খাওয়ান পরিজনদের। যেমন ঝাল মুরগি ভাজা— অসম্ভব মুখরোচক খাবার। পারফেক্ট শামি কাবাব বা মুম্বই মুর্গা বিরিয়ানির মতো নতুন পদেরও জনপ্রিয়তা বাড়ছে।

তবে ইদের শেষ পাতে রায়তা থাকতেই হবে। দই, ধনেপাতা, শশা, পেঁয়াজ, কাঁচালঙ্কা, আদা, জিরে গোলমরিচ দিয়ে ঘরে তৈরি রায়তা শুধু যে স্বাদের তা-ই নয়। ঝাল-ঝোল হজমেও মহৌষধি যে!

নিজস্ব চিত্র

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন