Ranaghat

রহস্য ফোনে, সুস্মিতা খুনে জেরা স্বামীকেও

সোমার অভিযোগ, ‘‘ফোন ছাড়া বৌমা আর কিছুই চিনত না।’’

Advertisement

সৌমিত্র সিকদার

শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৮ ০৩:৪০
Share:

সুস্মিতা সরকার। ফাইল চিত্র

রানাঘাট: কে খুন করল সুস্মিতাকে? কেনই বা খুন করল?

Advertisement

উত্তর খুঁজতে গিয়ে অন্য একটা প্রশ্ন বরং বড় হয়ে উঠেছে পুলিশের সামনে— ফোনের ও পারে কে?

বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পাঁচ জনকে নদিয়ার রানাঘাট থানায় ডেকে জেরা করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন সুস্মিতার স্বামী সুমন রায়ও। মঙ্গলবার রাতেই হুগলির শেওড়াফুলি ২ নম্বর লাহা কলোনির বাড়ি থেকে পুলিশ তাঁকে নিয়ে আসে। দুপুরে তাঁর বাবা সুবল এবং মা সোমা রায়ও থানায় আসেন। রাত পর্যন্ত সুমন রানাঘাট থানাতেই রয়েছেন।

Advertisement

বছর উনিশের সুস্মিতা সরকার ওরফে মণি অবশ্য বেশি কিছু দিন ধরে শ্বশুরবাড়িতে ছিলেন না। রানাঘাটের পায়রাডাঙা এলাকার নতুন গোপালপুরে বাপের বাড়িতে চলে এসেছিলেন। সেখানেই সোমবার বিকেলে নিজের ঘরে তিনি খুন হন। তাঁর রক্তমাখা দেহ বিছানায় চাদর-চাপা দিয়ে দরজা খোলা রেখেই চলে যায় আততায়ী। বিছানার কাছেই পড়ে ছিল রক্তমাখা কোদাল। পরিবারের তরফে এখনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। তবে পুলিশের ধারণা, খুব কাছের লোকই এই ঘটনা ঘটিয়েছে।

তদন্তে নেমে পুলিশ জেনেছে, মণি সারা দিনই ফোনে ব্যস্ত থাকতেন। এ দিন শেওড়াফুলি থেকে সুমনের সঙ্গে এসেছেন তাঁর মা সোমাও। তাঁর দাবি, “মোবাইলের জন্যই আজ ওর এই পরিণতি!’’ তিনি জানান, সুমন আর মণি তাঁদের অজ্ঞাতেই বিয়ে করে নিয়েছিলেন। বিয়ের চার দিন পরে তাঁরা বাড়িতে আসেন।

সোমার অভিযোগ, ‘‘ফোন ছাড়া বৌমা আর কিছুই চিনত না। সকাল ৯টায় ঘুম থেকে উঠেই বিছানায় বসে ফোন করা শুরু করত। দুপুর ২টো বেজে গেলেও ফোন ছাড়ত না। বলে-বলে স্নানে পাঠাতে হত। এই নিয়ে ওদের স্বামী-স্ত্রীরও মনোমালিন্য হত। বৌমা বলত— সব ছাড়তে পারব। ফোন ছাড়তে পারব না।’’ তাঁর দাবি, ‘‘কয়েক মাস আগে ফোন নিয়ে গন্ডগোলের জেরে বৌমা হাতের শিরা কেটে আত্মহত্যা করতে যায়। ভয়ে ছেলে ওকে বাপের বাড়ি দিয়ে যায়।’’

তার পরেও ছবিটা পাল্টায়নি।

আপাতত পায়রাডাঙায় বড় মেয়ে প্রিয়াঙ্কা দাসের বাড়িতে রয়েছেন মণির বাবা গোপাল সরকার। তিনি বলেন, “এখানেও ও সব সময়ে ফোনে কথা বলত। ইচ্ছে মতো বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেত। কখন ফিরত, তার ঠিক থাকত না। কারও কথা শুনতে চাইত না।”

সোমা জানান, সুমন মণিকে তার বাপের বাড়ি দিয়ে যাওয়ার পরে কিছু কাগজপত্র আনতে এক বার ভাইকে নিয়ে শেওড়াফুলিতে তাঁদের বাড়িতে গিয়েছিলেন তিনি। আর কোনও খবর ছিল না। মঙ্গলবার দুপুরে তাঁরা টিভিতে মণির মৃত্যুর খবর পান।

সোমবার রাতেই পুলিশ সুস্মিতার দু’টি মোবাইল ফোন আটক করেছিল। সেগুলির কল লিস্টের সূত্র ধরে তদন্ত চালানো হচ্ছে। পুলিশ সূত্রের খবর, সে দিন যাঁদের সঙ্গে মণির কথা হয়েছিল, প্রথমে তাঁদেরই ডেকে জেরা করা হচ্ছে। সুমন ছাড়াও যাঁদের জেরা করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে রানাঘাট শহরের দে চৌধুরীপাড়ার এক মোমো ব্যবসায়ী, রানাঘাট কলেজের বিএ দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্র এবং চাকদহ ও পায়রাডাঙার দুই যুবক রয়েছেন। এঁদের সকলেরই বয়স পঁচিশ থেকে বত্রিশের মধ্যে। তবে জেরায় সকলেই খুনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন