করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতাল

নিরাপত্তা শিকেয়, সিঁটিয়ে হাসপাতাল

ঘটনা এক: বৃহস্পতিবার রাত আটটা। সীমান্ত ঘেঁষা করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালে আচমকা হইচই। হাসপাতালে ঢুকে রোগীর এক আত্মীয় কর্তব্যরত নার্সের সঙ্গে অভব্য আচরন করে বলে অভিযোগ।

Advertisement

কল্লোল প্রামাণিক

শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৬ ০০:২৯
Share:

ইমার্জেন্সির সামনে নেই কোনও নিরাপত্তারক্ষী। — নিজস্ব চিত্র

ঘটনা এক: বৃহস্পতিবার রাত আটটা। সীমান্ত ঘেঁষা করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালে আচমকা হইচই। হাসপাতালে ঢুকে রোগীর এক আত্মীয় কর্তব্যরত নার্সের সঙ্গে অভব্য আচরন করে বলে অভিযোগ। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয় যে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে পুলিশ ডাকতে হয়। পরের দিন, বিপ্লব দাস বৈরাগ্য নামে দুর্লভপুরের বাসিন্দা, অভিযুক্ত ওই যুবককে পুলিশ গ্রেফতার করে।

Advertisement

ঘটনা দুই: আগের ঘটনার রেশ মিটতে না মিটতেই শুক্রবার ফের বিপত্তি। অভিযোগ, দুপুর দেড়টা নাগাদ এক যুবক ওয়ার্ডে ঢুকে কর্তব্যরত নার্সকে শ্লীলতাহানি করে। হাসপাতালের সিসিটিভির ফুটেজ দেখে সেই দিনই পুলিশ ধনারপাড়ার সামাজুল শেখকে গ্রেফতার করে।

গত সপ্তাহে এ দু’টি কোনও বিক্ষিপ্ত ঘটনা নয়। কয়েক মাস ধরে ওই হাসপাতালে কর্মী থেকে চিকিৎসক সকলেই এমনই অজস্র হেনস্থার অভিজ্ঞতা নিয়ে উদ্বিগ্ন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মহিলা রোগীদের প্রশ্ন, হাসপাতালের নার্সদেরই যদি এমন অবস্থায় পড়তে হয়, তাহলে তাঁদের নিরাপত্তা কোথায়? আশঙ্কাটা উড়িয়ে দিচ্ছেন না রোগীর পরিজন, স্থানীয় প্রশাসন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের সুপার রাজীব ঘোষ বলছেন, ‘‘গোটা বিষয়টি আমরা জেলা স্বাস্থ্য দফতরকে জানিয়েছি।’’

Advertisement

নদিয়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপস রায় বলছেন, ‘‘করিমপুর হাসপাতালের ঘটনার কথা শুনেছি। কিন্তু সেখানে রক্ষী রাখার কোনও পরিকাঠামো আমাদের নেই। তাছাড়া হাসপাতালের নিরাপত্তার বিষয়টি তো পুলিশের দেখার কথা।’’

যা শুনে নদিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) তন্ময় সরকার বলছেন, ‘‘পুলিশ তো নজর রাখেই। কিন্তু চব্বিশ ঘণ্টা ধরে হাসপাতালের ভিতরে কী ঘটছে, সেটা দেখা কি আমাদের পক্ষে সম্ভব? হাসপাতালের উচিত অবিলম্বে একজন রক্ষী রাখার ব্যবস্থা করা।’’

সীমান্তের এই হাসপাতালে রোগীর ভিড় ক্রমে বেড়েই চলেছে। মুর্শিদাবাদের একটা বড় এলাকার মানুষও এই হাসপাতালের উপর নির্ভরশীল। রাতে হাসপাতালে ভর্তি থাকা মহিলার সংখ্যাও নেহাত কম নয়। অথচ এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি হাসপাতালে একের পর এক এমন ঘটনা ঘটার পরেও প্রশাসনের তরফে কোনও পদক্ষেপ করা হচ্ছে না বলেই অভিযোগ রোগী ও তাঁদের পরিজনদের।

হাসপাতাল ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সন্ধ্যার পরে হাসপাতাল চত্বরে মদ্যপেরা প্রায়ই উৎপাত করে। রাতে টহল দিতে এসে পুলিশ বেশ কয়েক জনকে আটক করেও নিয়ে গিয়েছে। সম্প্রতি চোরের আনাগোনাও বেড়েছে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দরজায় কোনও রক্ষী না থাকায় অবাধে যে কেউই হাসপাতালের ভিতরে ঢুকে যেতে পারে। মাসখানেক আগে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসা এক মহিলার গলা থেকে হার ছিনতাই করে পালিয়েছে এক দুষ্কৃতী। সেই ঘটনার দিনকয়েক পরে হাসপাতালে গেটে মোটরবাইক রেখে ভিতরে আত্মীয়কে দেখতে গিয়েছিলেন এক যুবক। ফিরে এসে দেখেন বাইক নেই।

মহিলা বিভাগে চিকিৎসাধীন ধোড়াদহের মামনি বিবি, বক্সিপুরের সাহানারা বিবিরা সমস্বরে বলছেন, ‘‘এ কোথায় এলাম গো দাদা! রোগ সারাতে এসে অন্য বিপদ ঘটবে না তো? চোখের সামনে যা সব দেখছি!’’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক নার্সও বলছেন, ‘‘পরিকাঠামো আগে, নাকি নিরাপত্তা? এই সহজ উত্তরটা যদি স্বাস্থ্য দফতরের জানা না থাকে, তাহলে তো আর কিছু বলার নেই।’’

করিমপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান কংগ্রেসের তারক সরখেল বলছেন, ‘‘পরিকাঠামো না থাকলে তৈরি করতে হবে। কিন্তু হাসপাতালে এমন হয়রানি মেনে নেওয়া যায় না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনে আমরাই রক্ষী রাখার ব্যবস্থা করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন