কনকনে ঠান্ডায় রোগীর বাড়ির লোক রাত কাটাচ্ছেন খোলা আকাশের নীচে। অনেকে গাঁটের টাকা খরচ করে কল্যাণীর জওহরলাল নেহরু মেমোরিয়াল হাসপাতালের লাগোয়া সস্তার হোটেল থাকছেন। অথচ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে একতলা পাকা ভবন পড়ে। বছর চারেক আগে এটি তৈরিই করা হয়েছিল রোগীর বাড়ির লোকজনের জন্য। হাসপাতাল সেখানে একাধিক শয্যার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। লাইট-পাখা-জলের ব্যবস্থাও আছে সেখানে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরুষ-মহিলা মিলিয়ে সেখানে জনা পঁচিশ থাকতে পারবেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঘরটি পুরসভাকে হস্তান্তরও করেছেন। কিন্তু পুরসভা কয়েক বার চেষ্টা করেও তা খুলতে পারেনি। এর ফলে আতান্তরে পড়েছেন রোগীর বাড়ির লোক। তাঁরা চার দিক ফাঁকা একটা শেডের তলায় রাত কাটাচ্ছেন। পৌষের ঠান্ডায় বাইরে রাত কাটিয়ে অনেক অসুস্থ হয়ে পড়ছে। ক’দিন আগে মুরুটিয়ার এক ব্যক্তি তাঁর দাদুকে জেএনএমে ভর্তি করান। তিনি জানান, রাত হলেই যেন আতঙ্ক নেমে আসত। হাসপাতালে রাতে থাকার বন্দোবস্ত রয়েছে। কিন্তু তালা বন্ধ। তাঁরা সস্তার হোটেলে রাত কাটিয়েছিলেন। বেশ কয়েক লক্ষ টাকা দিয়ে তৈরি ঘর চালু ব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মহকুমা প্রশাসন ও পুর প্রশাসনের সঙ্গে একাধিক বার কথা হয়েছে। তবে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
জানা গিয়েছে, কিছু দিন আগে পুরসভা ঠিক করে যে স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা ঘরটি চালু করবে। তাঁরা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রোগীর বাড়ির লোকের থেকে নামমাত্র টাকা নেবেন। এমনকী ঘর সংলগ্ন এলাকায় ওই মহিলারা তৈরি করবেন ছোটখাটো ক্যান্টিনও। রাতে রোগীর স্বজনেরা ন্যায্য দরে ক্যান্টিন থেকে খাবার কিনতে পারবেন। কিন্তু হাসপাতালটি যে ওয়ার্ডে অবস্থিত সেই ওয়ার্ডের লোকজনের বিরোধিতায় সে সব আর বাস্তবায়িত হয়নি। স্থানীয় লোকজনের দাবি, পুরসভার উচিত ওই রাত্রিনিবাস চালানোর ব্যাপারে তাঁদের সুযোগ দেওয়া। তা না হলে তাঁরা তা খুলে দেবেন। বাধা পেয়ে পুরসভা পিছু হঠে বলে জানা গিয়েছে। হাসপাতালের সুপার সুবিকাশ বিশ্বাস অবশ্য বিষয়টি ভেঙে বলতে রাজি হননি। তিনি স্রেফ বলেন, ‘‘ঘরটি পুরসভাকে হস্তান্তর করা হয়েছে। আশা করি পুরসভা চালু করবে।’’ তৃণমূল নিয়ন্ত্রিত কল্যাণী পুরসভার চেয়ারম্যান সুশীলকুমার তালুকদার বলেছেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে একটা বিবাদ তৈরি হয়েছিল। তবে সে সব মিটিয়ে দিয়ে দ্রুত ঘরের দরজা রোগীর বাড়ির লোকজনের জন্য খুলে দেওয়া হবে।’’