সিসিটিভি ক্যামেরা বসেছে কৃষ্ণনগরে। নিজস্ব চিত্র
মেয়েদের স্কুল শুরু আর ছুটির সময় রোমিওদের ভিড় লেগে থাকত পোস্ট অফিস মোড়ে। কেউ সাইকেল, কেউ আবার মোটরবাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকত। পুলিশ মাঝে মধ্যে হানা দিতেই গলি দিয়ে পালিয়ে যেত সেই সব রোমিওরা।
তবে চুপিসাড়ে সরে পড়ার দিন শেষ। কারণ রাস্তার দিকে এখন তাক করে আছে সিসি টিভি ক্যামেরা। একটু বেচাল হলেই ধরা পড়ে যাচ্ছে সেই ক্যামেরার চোখে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, কৃষ্ণনগর শহরে রোমিওদের দৌরাত্ম্য হঠাৎ অনেকটাই বেড়ে গিয়েছিল। সেই সঙ্গে রাত বাড়লেই শহরের রাস্তায় প্রচন্ড গতিতে ছুটে যেত মোটরবাইক। কিন্তু সে সব এখন অতীত। সৌজন্য সেই সিসি টিভি ক্যামেরা। তবে কৃষ্ণনগরবাসী সিসি টিভি ক্যামেরার সব চেয়ে বেশি সুফল পেয়েছেন জগদ্ধাত্রী পুজোয়। কারণ বছর কয়েক আগেও জগদ্ধাত্রী পুজোর ভাসানের শোভাযাত্রায় বিভিন্ন ক্লাবের মধ্যে অশান্তি লেগে গেলে সামাল দিতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়েছে পুলিশকে। এই সমস্যার মোকাবিলা করার জন্য তৎকালীন পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ কৃষ্ণনগর পুরসভাকে রাস্তায় সিসি টিভি ক্যামেরা লাগানোর প্রস্তাব দেন। এর পরে পুরসভার পক্ষ থেকে শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও রাস্তায় ২৫টি সিসি টিভি ক্যামেরা বসানো হয়। তাতে কাজও হয়। গত বছর সিসি টিভির নজরদারির ভয়ে বারোয়ারি পুজো সংগঠনগুলি অনেকটাই সংযত থেকেছে। অনেক ক্ষেত্রেই দুষ্কৃতীকে চিহ্নিত করা হয়েছে সিসি টিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে। কিছু দিন আগে স্টেশন চত্বর থেকে চুরি হয়ে গিয়েছিল স্কুটি। সেই সময় বেলডাঙার সিসি টিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, চেনা দুষ্কৃতী চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সেই স্কুটি। ধরে ফেলা হয় তাকে। উদ্ধার হয় স্কুটি। আরেকটি ঘটনায় রাত ৩ টের সময় দুই যুবককে সদর মোড়ে সন্দেহজনক ভাবে হেঁটে যেতে দেখা গিয়েছিল সিসি টিভি ক্যামেরার মনিটরে। তাদের ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই ধড়া পড়ে যায় যে তারা নগেন্দ্রনগরের একটি দোকান থেকে চুরি করে নিশ্চিন্তে ফিরছিল। উদ্ধার হয় লুঠের মাল। শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও ঢেলে সাজাতে ১১২ টি সিসি টিভি ক্যামেরা বসাতে চলেছে পুরসভা। শহরের ২৪টি ওায়ার্ডেই ছোট বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে ব্যাঙ্ক ও বাজারগুলির সামনে ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় বসবে এই ক্যামেরা। যাতে গোটা শহরের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা পুলিশ ও পুরসভার চোখের সামনে থাকে। রেকর্ড হয়ে থাকে প্রতিটি মুহূর্ত।
এর ফলে তদন্তে নেমে অপরাধীকে গ্রেফতার করতেও সুবিধা হয়। পুর প্রধান তৃণমূলের অসীম সাহা বলেন, “আমরা যে ২৫টা ক্যামেরা লাগিয়েছি তা পুলিশের অনেক কাজে এসেছে। বেশ কয়েকটা ক্ষেত্রে অপরাধীকে চিহ্নিত করা গিয়েছে। অশান্তি অনেক কমেছে। কমেছে ছিনতাই ও ইভটিজিং এর মতো অপরাধও।”
সিসি টিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখতে একটি মনিটর থাকছে পুর প্রধানের ঘরে। আর একটি থাকছে কোতোয়ালি থানার আইসির ঘরে। সেখান থেকেই গোটা শহরে নজরদারি চালাতে পারছে পুলিশ।