পুরভোট নেই কৃষ্ণনগরে, ক্ষুব্ধ বিরোধী

আগামী ১২ ডিসেম্বর  কৃষ্ণনগর পুরসভার বর্তমান বোর্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। পরের দিন দায়িত্ব বুঝে নেবেন মহকুমাশাসক অম্লান তালুকদার। এর আগে চাকদহ পুরসভার মেয়াদ ফুরোলেও ভোট হয়নি।

Advertisement

সুস্মিত হালদার

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:০৩
Share:

কৃষ্ণনগর পুরসভা।—ফাইল চিত্র।

মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও নির্বাচন হচ্ছে না কৃষ্ণনগর পুরসভায়। প্রশাসক হিসাবে দায়িত্ব নিচ্ছেন কৃষ্ণনগর সদর মহকুমাশাসক। বিরোধীদের অভিযোগ, লোকসভা ভোটের আগে কোনও রকম ঝুঁকি না নিতে চাওয়াতেই এ রকম ব্যবস্থা করেছে তৃণমূল সরকার। যদিও এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে শাসক দল।

Advertisement

আগামী ১২ ডিসেম্বর কৃষ্ণনগর পুরসভার বর্তমান বোর্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। পরের দিন দায়িত্ব বুঝে নেবেন মহকুমাশাসক অম্লান তালুকদার। এর আগে চাকদহ পুরসভার মেয়াদ ফুরোলেও ভোট হয়নি। প্রশাসক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন কল্যাণীর মহকুমাশাসক ইউনিস রিসিন ইসমাইল।

কৃষ্ণনগর পুরসভাও কল্যাণীর পথে হাঁটবে কি না তা নিয়ে কিছু দিন ধরেই জল্পনা চলছিল। সেই খবর পাকা হতে বিরোধীরা হাতে তাস পেয়ে গিয়েছে। আর মুষড়ে পড়েছেন কাউন্সিলরেরা। কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলতে না চাইলেও ঘনিষ্ঠ মহলে তাঁরা অনেকেই দাবি করছেন, বিজেপি নানা রকম ভাবে তৎপর হয়ে উঠলেও এখনই ভোট হলে আখেরে তৃণমূলের লাভ হত। কারণ যত দিন যাবে এই বিষয়টি সামনে রেখে প্রচারে যাবে বিরোধীরা। কৃষ্ণনগর লোকসভা আসনে বিজেপি ভাল ফল করলে তার প্রভাবও পুরভোটে পড়তে বাধ্য।

Advertisement

গত লোকসভা ভোটে তৃণমূলের তাপস পাল জয়ী হলেও কৃষ্ণনগর পুর এলাকায় বিজেপিই এগিয়েছিল। ফলে শাসক দলের অনেকেই মনে করছেন, এখন পুরভোট করে নিলে পরিস্থিতি অনেকটা পরিষ্কার হয়ে যেত। কোথায় কতটা ফাঁকফোকর আছে, বোঝা যেত এবং সেই মতো পদক্ষেপ করা যেত। তৃণমূলের এক কাউন্সিলরের মতে, “এতে আখেরে আমাদের ক্ষতিই হল। মানুষের কাছে আমাদেরই কৈফিয়ত দিতে হবে।” কৃষ্ণনগরের পুরপ্রধান অসীম সাহাও বলছেন, “নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ভোট হলে ভালই হয়। কারণ মানুষ জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে পরিষেবা পেতে অভ্যস্ত। এ ক্ষেত্রে তাঁদের সমস্যা হবে।”

প্রত্যাশিত ভাবেই আসরে নেমে পড়েছে বিরোধীরা। কৃষ্ণনগর শহরে সিপিএম কোনও দিনই সে ভাবে জায়গা করতে পারেনি। বামসূর্য যখন মধ্যগগনে, তখনও এই শহর দক্ষিণপন্থীদের সঙ্গেই থেকেছে। গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী সত্যব্রত মুখোপাধ্যায় তো চমকেই দিয়েছিলেন। কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে বিজেপি তৃতীয় স্থান পেলেও এই শহরে মাত্র একটি ওয়ার্ড ছাড়া সব ক’টিতেই বিজেপি এগিয়ে ছিল।

এ বার সেই পরিসংখ্যান সামনে এনেই তৃণমূলের প্রতি আক্রমণ শানাতে শুরু করেছে বিজেপি। দলের নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি মহাদেব সরকারের দাবি, “তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ডের দুর্নীতিতে মানুষ ক্ষুব্ধ। সেটা বুঝেই ভোট না করে শহরের মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে এই সরকার। পরাজয় নিশ্চিত বুঝেই তৃণমূলের এই সিদ্ধান্ত।” সিপিএমের নদিয়া জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এসএম সাদিও দাবি করছেন, “ভোট হলে তৃণমূল হেরে যাবে বুঝ‌েই ভয়ে পিছিয়ে গেল। মানুষের কাছ থেকে ভোটদানের অধিকারটাও কেড়ে নিল এই স্বৈরাচারী সরকার।”

যদিও এই সব অভিযোগ প্রায় ফুৎকারে উড়িয়ে দিচ্ছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত। তাঁর ব্যাখ্যা, “রাজ্যের অন্য সব মেয়াদ শেষ হওয়া পুরসভাগুলির ক্ষেত্রে যা হয়েছে, এখানেও তা-ই হয়েছে।” তাঁর কটাক্ষ, “স্বপ্নের পোলাওয়ে বিজেপি যত পারুক ঘি দিক। এর পর যখনই ভোট হোক, পুরসভার একটা আসন দখল করে দেখাক। লোকসভা আসন তো সুদুর কল্পনা!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন