বিদ্যুৎ নেই হাসপাতালে, ক্ষুব্ধ জঙ্গিপুর

হাসপাতাল রোগ সারাবে কী! নিজেই ভুগছে জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতাল। রোগের নাম বিদ্যুৎ-বিভ্রাট! দিনকয়েক আগে পাক্কা সাড়ে সাত ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন ছিল এই হাসপাতাল। সকাল থেকে প্রায় অন্ধকারে ডুবে ছিল প্রসূতি ও শিশু- সহ একাধিক বিভাগ। প্রচণ্ড গরমে নাস্তানাবুদ হয়েছেন হাসপাতালের কর্মী থেকে রোগী সকলেই। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই শনিবার থেকেই ফের বিদ্যুৎ-বিভ্রাট শুরু হয়েছে হাসপাতালে। ২৫০ কিলো ভোল্টের ট্রান্সফর্মার পুড়ে গিয়েই এই বিপত্তি বলেই হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে। গত সোমবারেও ট্রান্সফর্মারের কেবল পুড়ে যাওয়ায় ভুগতে হয়েছিল হাসপাতালের সবাইকে। পরে কোনও রকমে তা মেরামত করে চালানো হয় ট্রান্সফর্মারটি। কিন্তু যে কোনও মুহূর্তে সেটি আবার বিকল হতে পারে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে আগাম জানিয়েও দিয়েছিল বিদ্যুৎ দফতর। ওয়ার্ড মাস্টার আনারুল হক বলেন, “বিদ্যুৎ দফতর জানিয়েছে ৫০০ কিলো ভোল্ট ট্রান্সফর্মার ছাড়া হাসপাতাল চত্বরে থাকা অত এসি মেশিনের চাপ সামাল দেওয়া সম্ভব নয়।” তারপরেও ট্রান্সফর্মার বদলের ব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উদ্যোগী হয়নি বলেই অভিযোগ। ফলে বাড়তি বিদ্যুতের চাপ নিতে না পেরে শনিবার সাতসকালেই হাসপাতালের ২৫০ কিলো ভোল্টের ট্রন্সফর্মারটি ফের পুড়ে যায়। হাসপাতালের সুপার শাশ্বত মণ্ডল জানান, সেই মান্ধাতা আমলে ২৫০ কিলো ভোল্টের ট্রান্সফর্মার বসানো হয়েছিল। এখন ওয়ার্ড বেড়েছে। রোগী বেড়েছে। নতুন বিভাগ খুলেছে। এসি মেশিন বসেছে প্রায় ৪০টি। স্বাভাবিক ভাবেই বিদ্যুতের ব্যবহার বেড়েছে। এই অবস্থায় ৫০০ কিলো ভোল্টের ট্রান্সফর্মার ছাড়া হাসপাতাল চালানো অসম্ভব। কিন্তু ট্রান্সফর্মার সেই একই থেকে যাওয়ায় এত চাপ নিতে পারছে না। আর তার ফল ভুগতে হচ্ছে। এ দিকে বিদ্যুৎ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মাস খানেকের আগে তারা নতুন ট্রান্সফর্মার দিতে পারবে না। সেই ট্রান্সফর্মারও ২৫০ ভোল্টের। ফলে ওই কম ভোল্টের ট্রান্সফর্মার দিয়েই বা কী ভাবে কাজ চালানো যাবে তা-ও বুঝতে পারছেন না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শাশ্বতবাবু বলেন, ‘‘গোটা বিষয়টি বিদ্যুৎ দফতরকে জানানো হয়েছে। হাসপাতালের নিজস্ব একটি জেনারেটর রয়েছে। সেটা মাঝেমধ্যে চালিয়ে কোনও রকমে কাজ চালানো হচ্ছে। কিন্তু এ ভাবে কত দিন চলবে বুঝতে পারছি না।’’ হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, হাসপাতালের মধ্যেই ১০০০ কিলো ভোল্টের একটি ট্রান্সফর্মার রয়েছে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের জন্য। সেখানে বহির্বিভাগ ছাড়া কিছু চলে না। সেক্ষেত্রে ওই ট্রান্সফর্মারের সঙ্গে বর্তমান হাসপাতালটির সংযোগ জুড়ে দিলে সমস্যা অনেকটাই মিটে যাবে। সেই চেষ্টাও করা হচ্ছে। বীরভূমের ভাগাইল থেকে মেয়েকে রবিবার দুপুরে দেখতে এসেছিলেন সুমেরা বিবি। এ দিন ক্ষুব্ধ সুমেরা বলেন, ‘‘মেয়েটা তিন দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি আছে। জেনারেটর চললেও পাখা জোরে ঘুরছে না। এই গরমে এ ভাবে থাকা যায় না। আমি চিকিৎসককে বলেছি ছুটি দিতে।” তৃণমূলের রঘুনাথগঞ্জ ১ ব্লকের সভাপতি মুক্তি প্রসাদ ধরের অভিযোগ, “মহকুমা হাসপাতালে এই অব্যবস্থা দেখার কেউ নেই? আমরা বিষয়টি জেলা স্বাস্থ্য দফতরকে জানাব। এর একটা বিহিত না করলে ফল ভুগতে হচ্ছে রোগীদের।” জঙ্গিপুরের পুরপ্রধান সিপিএমের মোজাহারুল ইসলাম বলেন, “ট্রান্সফর্মার বিকল হতেই পারে। কিন্তু তার বিকল্প ব্যবস্থা থাকবে না? হাসপাতালে এই অব্যবস্থা মেনে নেওয়া যায় না।” জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভাশিস সাহার আশ্বাস, ‘‘জেনারেটর চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা হয়েছে। বিকল্প ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। দু’-একদিনের মধ্যেই সমস্যা মিটে যাবে।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৬ ০৭:১৮
Share:

তখনও বিদ্যুৎ আসেনি। — নিজস্ব চিত্র

হাসপাতাল রোগ সারাবে কী! নিজেই ভুগছে জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতাল। রোগের নাম বিদ্যুৎ-বিভ্রাট!

Advertisement

দিনকয়েক আগে পাক্কা সাড়ে সাত ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন ছিল এই হাসপাতাল। সকাল থেকে প্রায় অন্ধকারে ডুবে ছিল প্রসূতি ও শিশু- সহ একাধিক বিভাগ। প্রচণ্ড গরমে নাস্তানাবুদ হয়েছেন হাসপাতালের কর্মী থেকে রোগী সকলেই। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই শনিবার থেকেই ফের বিদ্যুৎ-বিভ্রাট শুরু হয়েছে হাসপাতালে। ২৫০ কিলো ভোল্টের ট্রান্সফর্মার পুড়ে গিয়েই এই বিপত্তি বলেই হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে।

গত সোমবারেও ট্রান্সফর্মারের কেবল পুড়ে যাওয়ায় ভুগতে হয়েছিল হাসপাতালের সবাইকে। পরে কোনও রকমে তা মেরামত করে চালানো হয় ট্রান্সফর্মারটি। কিন্তু যে কোনও মুহূর্তে সেটি আবার বিকল হতে পারে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে আগাম জানিয়েও দিয়েছিল বিদ্যুৎ দফতর। ওয়ার্ড মাস্টার আনারুল হক বলেন, “বিদ্যুৎ দফতর জানিয়েছে ৫০০ কিলো ভোল্ট ট্রান্সফর্মার ছাড়া হাসপাতাল চত্বরে থাকা অত এসি মেশিনের চাপ সামাল দেওয়া সম্ভব নয়।”

Advertisement

তারপরেও ট্রান্সফর্মার বদলের ব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উদ্যোগী হয়নি বলেই অভিযোগ। ফলে বাড়তি বিদ্যুতের চাপ নিতে না পেরে শনিবার সাতসকালেই হাসপাতালের ২৫০ কিলো ভোল্টের ট্রন্সফর্মারটি ফের পুড়ে যায়। হাসপাতালের সুপার শাশ্বত মণ্ডল জানান, সেই মান্ধাতা আমলে ২৫০ কিলো ভোল্টের ট্রান্সফর্মার বসানো হয়েছিল। এখন ওয়ার্ড বেড়েছে। রোগী বেড়েছে। নতুন বিভাগ খুলেছে। এসি মেশিন বসেছে প্রায় ৪০টি। স্বাভাবিক ভাবেই বিদ্যুতের ব্যবহার বেড়েছে। এই অবস্থায় ৫০০ কিলো ভোল্টের ট্রান্সফর্মার ছাড়া হাসপাতাল চালানো অসম্ভব। কিন্তু ট্রান্সফর্মার সেই একই থেকে যাওয়ায় এত চাপ নিতে পারছে না। আর তার ফল ভুগতে হচ্ছে।

এ দিকে বিদ্যুৎ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মাস খানেকের আগে তারা নতুন ট্রান্সফর্মার দিতে পারবে না। সেই ট্রান্সফর্মারও ২৫০ ভোল্টের। ফলে ওই কম ভোল্টের ট্রান্সফর্মার দিয়েই বা কী ভাবে কাজ চালানো যাবে তা-ও বুঝতে পারছেন না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শাশ্বতবাবু বলেন, ‘‘গোটা বিষয়টি বিদ্যুৎ দফতরকে জানানো হয়েছে। হাসপাতালের নিজস্ব একটি জেনারেটর রয়েছে। সেটা মাঝেমধ্যে চালিয়ে কোনও রকমে কাজ চালানো হচ্ছে। কিন্তু এ ভাবে কত দিন চলবে বুঝতে পারছি না।’’

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, হাসপাতালের মধ্যেই ১০০০ কিলো ভোল্টের একটি ট্রান্সফর্মার রয়েছে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের জন্য। সেখানে বহির্বিভাগ ছাড়া কিছু চলে না। সেক্ষেত্রে ওই ট্রান্সফর্মারের সঙ্গে বর্তমান হাসপাতালটির সংযোগ জুড়ে দিলে সমস্যা অনেকটাই মিটে যাবে। সেই চেষ্টাও করা হচ্ছে।

বীরভূমের ভাগাইল থেকে মেয়েকে রবিবার দুপুরে দেখতে এসেছিলেন সুমেরা বিবি। এ দিন ক্ষুব্ধ সুমেরা বলেন, ‘‘মেয়েটা তিন দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি আছে। জেনারেটর চললেও পাখা জোরে ঘুরছে না। এই গরমে এ ভাবে থাকা যায় না। আমি চিকিৎসককে বলেছি ছুটি দিতে।” তৃণমূলের রঘুনাথগঞ্জ ১ ব্লকের সভাপতি মুক্তি প্রসাদ ধরের অভিযোগ, “মহকুমা হাসপাতালে এই অব্যবস্থা দেখার কেউ নেই? আমরা বিষয়টি জেলা স্বাস্থ্য দফতরকে জানাব। এর একটা বিহিত না করলে ফল ভুগতে হচ্ছে রোগীদের।”

জঙ্গিপুরের পুরপ্রধান সিপিএমের মোজাহারুল ইসলাম বলেন, “ট্রান্সফর্মার বিকল হতেই পারে। কিন্তু তার বিকল্প ব্যবস্থা থাকবে না? হাসপাতালে এই অব্যবস্থা মেনে নেওয়া যায় না।”

জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভাশিস সাহার আশ্বাস, ‘‘জেনারেটর চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা হয়েছে। বিকল্প ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। দু’-একদিনের মধ্যেই সমস্যা মিটে যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন