সেলিনা বিবি। নিজস্ব চিত্র
মাত্র পনেরো বছর বয়সে অ্যাসিড হামলা দগ্ধ করেছিল তাঁকে। কিন্তু তাঁর মনের জোর পোড়াতে পারেনি। তীব্র যন্ত্রণা সহ্য করে জীবনে ফেরার লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন লক্ষ্মী অগ্রবাল। দীর্ঘ এক দশক পার করে তিনি ভারতে অ্যাসিড আক্রান্তদের অধিকার আন্দোলনের অন্যতম মুখ।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অমান্য করে দেশজুড়ে অবাধে অ্যাসিড বিক্রি আটকাতে অতি সম্প্রতি ‘স্টপসেল অ্যাসিড’ আন্দোলন শুরু করেছেন লক্ষ্মী। বিভিন্ন শহরে ঘুরে বার্তা দিচ্ছেন সচেতনতার। দিন কয়েক আগেই ঘুরে গিয়েছেন কলকাতায়। বৈধ লাইসেন্স ছাড়া কোনও ধরনের অ্যাসিড বিক্রি করা যায় না এবং অ্যাসিড বিক্রির জন্য অনেক নিয়ম মানতে হয়—সেই কথাই আরও এক বার মনে করাতে চাইছেন সকলকে। কলকাতায় ও পশ্চিমবঙ্গের একাধিক জেলায় এখনও আখছাড় ঘটছে অ্যাসিড হামলার ঘটনা।
কৃষ্ণনগরের কথাই ধরা যাক। চলতি বছর জানুয়ারিতে নাকাশিপাড়ায় অ্যাসিড হামলায় আরতী মজুমদার (৫৬) নামে এক মহিলার মৃত্যু হয়। হাঁসখালিতে ২০১৬ সালে অ্যসিড-হামলায় মারা যায় মৌ রজক। মাস খানেক আগে কল্যাণীর বাসিন্দা সেলিনা বিবির মুখে অ্যাসিড ছোড়ে তাঁর স্বামী কওসার মণ্ডল। এত কিছুর পরেও নদিয়া-জুড়ে অবাধে অ্যাসিড বিক্রির উপর তেমন রাশ টানা যায়নি বলে অভিযোগ করেছেন আন্দোলনকারীরা। তাঁদের অন্যতম স্বাতী চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অনেক কেস পাই আমরা নদিয়া থেকে। সহজে এবং সুলভে অ্যাসিড হাতে পাওয়া যায় বলে তা দিয়ে আক্রণের ঘটনায় রাশ টানা যায় না। প্রশাসন অদ্ভুত ভাবে নিরুত্তাপ।’’
লক্ষ্মী অগ্রবালের কথাতেও, ‘‘জেলাশাসকের কাছ থেকে লাইসেন্স পেলে তবেই কোনও বিক্রেতা অ্যাসিড বেচতে পারেন। বিক্রির সময় তিনি রেজিস্ট্রি খাতায় ক্রেতার নাম-ধাম, সই, পরিচয়পত্রের প্রতিলিপি রাখবেন। ছ’মাস অন্তর অন্তর জেলাশাসক লোক পাঠিয়ে সেগুলি পরীক্ষা করবেন। এটাই নিয়ম। কিন্তু সেই নিয়ম কোথাও মানা হয় না।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘হার্ডওয়্যারের দোকান, সোনার দোকান, মুদিখানা থেকে দেদার অ্যাসিড বিক্রি হচ্ছে। গাড়ির ব্যাটারিতে অ্যাসিডও টাকার বিনিময়ে লোকের হাতে চলে যাচ্ছে। অধিকাংশ জায়গায় সেখানে প্রশাসন বা পুলিশের কোনও নজরদারি থাকছে না।’’ পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার অবশ্য দাবি করেন, “আমরা কিন্তু অ্যাসিড বিক্রির উপরে কড়া নজরদারি রেখেছি।” কিন্তু বাস্তবটা ঠিক কী?
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চাকদহের শিমুলতলা বাজারের এক মুদিখানার দোকানে গিয়ে ৩৪ টাকা দিয়ে ৫০০ মিলিলিটার মিউরিয়েটিক অ্যাসিডের বোতল কিনে এনেছেন আনন্দবাজার পত্রিকার সাংবাদিক। বিক্রেতা তাঁকে বলেন, ‘‘আগে ৫০০ মিলিলিটারের বোতল ১০-১৫ টাকায় পাওয়া যেত। এখন সেগুলো আর আসছে না। ৩৪-৩৫ টাকার বোতলই লোকে কেনে বাথরুম সাফ করতে।’’ এর জন্য লাইসেন্স নিয়েছেন? ক্রেতার নাম-ঠিকানা লিখে রাখেন না? আধার কার্ড বা ভোটার আইকার্ড দেখতে চান না? শুনে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকেন তিনি! বলেন, ‘‘এটা আবার কী নিয়ম! কবে হল?’’
দোকানদার তো কোন ছাড়, খোদ কল্যাণীর মোহনপুর তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ প্রসেনজিৎ কর তাচ্ছিল্যের সুরে বলছেন, ‘‘কওসর তো কার্বলিক অ্যাসিড নিয়েছিল এক ডাক্তারের থেকে। পুলিশ কী করবে?’’ স্বাতী চট্টোপাধ্যায়ের মতে, শুধু বিক্রি নয়, অ্যাসিড উৎপাদন, বণ্টন এবং সঞ্চয়ের উপরেও পুলিশের নজরদারি প্রয়োজন। তা না-হলে কোনওদিন অবাধ বিক্রি আটকানো যাবে না।
তথ্য সহায়তা: সৌমত্র সিকদার