তখনও সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়নি দেহ। শিমুরালি স্টেশনে। নিজস্ব চিত্র
চারপাশে থিকথিক করছে লোক। অথছ প্ল্যাটফর্মে টানা চার ঘণ্টা পড়ে রইল মৃতদেহ।
শিমুরালি স্টেশনে, বৃহস্পতিবার। যাত্রীরা মোবাইল ফোনে ছবি তুললেন দেদার। সেই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়েও পড়ল। কিন্তু মৃতদেহ তোলার ব্যবস্থা হল না। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত পরিচয়ও জানা যায়নি।
রেলপুলিশের দাবি, ঠিক সময়ে জানানো হয়নি তাদের। ‘ওই সময়ে ডিউটিতে ছিলাম না’ বলে দায় সেরেছেন এক স্টেশন মাস্টারও। রাত পর্যন্ত এই দায় ঝাড়ার খেলা চলেছে।
এ দিন ভোরে ছ’বছরের মেয়েকে নিয়ে ট্রেন ধরতে যাচ্ছিলেন সুমনা দত্ত। কিন্তু প্ল্যাটফর্মেই থমকে দাঁড়িয়ে পড়েন তিনি। দেখেন, সামনে প্ল্যাটফর্মের উপরেই উপুড় হয়ে শুয়ে এক যুবক। ভাল করে লক্ষ করার পরে তিনি বোঝেন, দেহে প্রাণ নেই। ডাউন প্ল্যাটফর্মে পড়ে থাকা মৃতদেহটি ঘিরে ভিড় জমতে থাকে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ওই ব্যক্তির পরনে ছিল একটি ফুল প্যান্ট। গায়ে কোনও জামা ছিল না। তাঁর পিঠে কালশিটের দাগ ছিল। তাঁদের আশঙ্কা ওই ব্যক্তিকে খুন করা হয়েছে। সুমনা বলেন, “প্রথমে আমি ভেবেছিলাম, হয়তো কেউ মদ খেয়ে শুয়ে আছে। পরে ভাল করে তাকিয়ে দেখি, ওই ব্যক্তির দেহে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ওঁকে খুন করা হয়েছে।”
স্থানীয় ব্যবসায়ী এবং যাত্রীদের একাংশের অভিযোগ, প্ল্যাটফর্মে দীর্ঘক্ষণ পড়ে ছিল মৃতদেহটি। এক ব্যবসায়ীর আক্ষেপ, ভোড় সাড়ে ৪টে নাগাদ দেহটি যাত্রীদের নজরে পড়ে। সকাল ৭টা পার হয়ে গেলেও রেল পুলিশের দেখা মেলেনি। প্রায় ঘণ্টা চারেক পর রেলপুলিশ গিয়ে মৃতদেহ তুলে ময়না-তদন্তের জন্য পাঠায়।
রানাঘাট জিআরপি-র আইসি দেবকুমার রায় বলেন, ‘‘দীর্ঘক্ষণ দেহ পড়ে ছিল বলে যা বলা হচ্ছে, তা ঠিক নয়। দেহটি যে পড়ে আছে, প্রথমে সেটাই আমরা জানতে পারিনি। যখন জানতে পারি, তখনই দেহটি তুলে আনা হয়।’’ রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করানো হয়েছে।
দেহ পড়ে থাকার খবর ঠিক সময়ে কেন রেলপুলিশকে দেওয়া হয়নি, সেই প্রশ্নের সদুত্তর অবশ্য মেলেনি। দিনের ডিউটিতে থাকা স্টেশন মাস্টার বলেন, ভোরের দিকের ঘটনা হওয়ায় সে সময়ে তিনি ডিউটিতে ছিলেন না। তাই বিষয়টি তাঁর জানা নেই।’’ কিছু জানাতে পারেননি রেলকর্তারাও। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্রও বলেন, ‘‘বিষয়টি জানা নেই। সমন্বয়ের অভাবের জন্য হয়ে থাকতে পারে। খোঁজ নিয়ে দেখব।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ডাউন প্ল্যাটফর্মে দেহটি উদ্ধার হওয়ার পর বিপরীত দিকে আপ প্ল্যাটফর্মে শেডের নীচে আবছা রক্তের দাগ মিলেছে। পুলিশের অনুমান, সেই রক্ত জল দিয়ে ধুয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। পাশে পাথর এবং ভাঙা কাঠ পড়ে ছিল। সেগুলি দিয়ে খুন করা হয়ে থাকতে পারে। স্থানীয় বাসিন্দা অমিত বিশ্বাস বলেন, “এখানে আগে এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। এর থেকেই প্রমাণিত যে, এলাকায় আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়ছে।”