নিক্তিতে কম, পড়শির দেওয়া গয়না নিয়ে পিঁড়িতে বসল বর

তিউতি গজিয়ে উঠেছে দেদার  শপিং মল। সেখানে পা রাখলেই বাহারি গয়নার দোকান।

Advertisement

অনল আবেদিন

বহরমপুর শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৪:৩৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

জেলা সদর বহরমপুরে তো বটেই, এমনকি মহকুমা শহরগুলিতেও ব্র্যান্ডেড গয়নার দোকানের ছড়াছড়ি এখন। ইতিউতি গজিয়ে উঠেছে দেদার শপিং মল। সেখানে পা রাখলেই বাহারি গয়নার দোকান।

Advertisement

ছবিটা কিন্তু এমন ছিল না কয়েক দশক আগেও। তখন ছিল স্যাকরার দাপট। এখন পাকা দেখার পরে বিয়ের দিনক্ষণ স্থির হলে অভিভাবকদের কপালে ভাঁজ পড়ে না। বিয়ের মরসুমে এখন বিজ্ঞাপন দিয়ে স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা জানিয়ে দেন, গয়নার বিভিন্ন প্যাকেজ আর তার খুঁটিনাটির কথা। স্যাকরার কাছে সময়ে সময়ে গচ্ছিত রাখা টাকাতেই গড়ে উঠত মেয়ের নথ, বালা, কান-নাকের দুল, নাকছাবি।

বহরমপুরের সোনাপট্টির স্বরাজ বসাক বলেন, ‘‘আগে সোনার গয়নার সঙ্গে রুপোর বেশ চাহিদা ছিল। এখন সোনার সঙ্গে হীরের গয়নার চাহিদা তুঙ্গে। রুপোর দিন হয়ে এল প্রায় শেষ।’’

Advertisement

মুর্শিদাবাদ সিল্কের জন্য ইসলামপুর থানার অধীন চকগ্রামের খ্যাতি ছিল জগৎ জোড়া। ওই গ্রামের তাঁতশিল্পী জিতেন রক্ষিত এখন সত্তর ছাড়িয়েছেন। তাঁর দিদির বিয়ের দিনের কথা এখনও বেশ মনে আছে। নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর সংসার তাঁদের। স্যাকারকে পুরো টাকা দিতে পারেননি তাঁর বাবা। দেনাপাওনার চুক্তি অনুসারে বিয়ের আসরে বরপক্ষ নিক্তি দিয়ে মেপে নিতেন গয়নার ওজন। সাড়ে চার ভরি সোনার হার, বালা, কানের দুল ও বরের আংটি, একটু কম হলেই, ‘কই ওঠো হে!’ বলে বর তুলে নিয়ে যাওয়ারও দেদার ঘটনা রয়েছে। জিতেনবাবু বলছেন, ‘‘বিয়ে না করে ফিরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত বরযাত্রী। দিদিকে লগ্নভ্রষ্টা হওয়া থেকে বাঁচাতে এগিয়ে এলেন দয়ালু এক পড়শি কাকিমা। তিনি তাঁর গা থেকে খুলে দেন ছ’ ভরি সোনার গয়না। ধার হিসাবে। বিয়ের আসরে বর পক্ষ ওজন করে নেন সেই গয়না। তার পর আমার দিদির গায়ে সেই গয়না পরিয়ে বিয়ে হল!’’

নওদার পাটিকাবাড়ি বা ত্রিমোহিনীতে তখন কোনও বাজার ছিল না। তাই বলে তো আর বিয়ের শাড়ি, ধুতি, পাঞ্জাবির মতো পেশাক কেনাকাটা থেমে থাকতে পারে না। সব্দরনগর থেকে বিশ্বাস পরিবারের নারী-পুরুষ মিলে ৬ জনের দল সকাল বেলায় ছই দেওয়া গরুর গাড়িতে বসে ছুটলেন বেলডাঙার বাজারে। বিশ্বাস পরিবারের মেয়ের বিয়ের যাবতীয় কেনাকাটা করে তাঁরা বাড়ি ফিরলেন সন্ধ্যায়। কানাই বিশ্বাস বলেন, ‘‘তখন রেক্সিনে তৈরি লাল রঙের সুটকেস ছিল বিয়ের দান সামগ্রীর অন্যতম। সুটকেস বোঝাই নতুন পোশাক নিয়ে নববধূ যেতেন শ্বশুরবাড়ি।’’

বরের বাড়ি থেকেও বিয়ের আগের দিন সন্ধ্যায় ঘটকমশাই ও বর পক্ষের নাপিত লালপাড় সাদা শাড়ি, আলতা, সিঁদুর, সুগন্ধি-আতর, সুগন্ধি তেল, রেশমি চুড়ি বোঝাই সুটকেসে, সাত-আট কেজি ওজনের পেল্লায় মাছ, বড় হাঁড়ির দই ও মিষ্টি নিয়ে কনের বাড়ি পৌঁছে যেতেন। তার পরে ছাদনাতলায় দু’পক্ষের নাপিতের মধ্যে শুরু হয়ে যেত কবিগানের আদলে ছড়াগানের পাল্লা। সেই পাল্লা শোনার জন্য মুখিয়ে থাকতেন বিয়ে বাড়ির লোকজন। বিয়ে বাড়ির কেনাকাটার মতো, কে কত বড় ছড়াকার নাপিত আনল, তা-ও ছিল দেখার বিষয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন