ফরাক্কায় ছাইগাদা করা নিয়ে বৈঠক এনটিপিসির

ছাই ফেলার জায়গা নেই। তাই ইটভাটায় মাটি পোড়ানোর বদলে কয়লার ছাই দিয়ে ইট তৈরি করতে বলছে এনটিপিসি। সেই সঙ্গে, তৃতীয় ছাইগাদা করতে দেওয়ার জন্য গ্রামবাসীর কাছেও আর্জি জানাচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ফরাক্কা শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৬ ০০:৫৮
Share:

এনটিপিসি-র সেই ছাই-পুকুর। নিজস্ব চিত্র।

ছাই ফেলার জায়গা নেই।

Advertisement

তাই ইটভাটায় মাটি পোড়ানোর বদলে কয়লার ছাই দিয়ে ইট তৈরি করতে বলছে এনটিপিসি। সেই সঙ্গে, তৃতীয় ছাইগাদা করতে দেওয়ার জন্য গ্রামবাসীর কাছেও আর্জি জানাচ্ছে।

আজ, বুধবার ফরাক্কায় গ্রামবাসী ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন এনটিপিসি কর্তারা। ইটভাটা মালিকদের সঙ্গে বৈঠক ডাকা হয়েছে আগামী ২৬ ডিসেম্বর।

Advertisement

ফরাক্কা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের ছ’টি ইউনিটে ২১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রতি বছর প্রায় ১১ মিলিয়ন টন কয়লা পোড়ানো হয়। ছাই হয় প্রায় ৩৬ লক্ষ টন। সেই ছাই পাইপের মাধ্যমে নিয়ে গিয়ে ফেলা হয় এনটিপিসির মালঞ্চা ও নিশিন্দ্রার দু’টি অ্যাশপন্ড বা ছাইগাদায়। গত ৩০ বছরে দু’টি ছাইগাদাই প্রায় ভরাট হয়ে গিয়েছে। নিশিন্দ্রায় তৃতীয় গাদা তৈরি করতে চায় এনটিপিসি। তার জন্য ৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। কিন্তু গ্রামবাসী ও স্থানীয় নেতাদের রাজি করানো যায়নি।

এনটিপিসি অবশ্য বলছে, ইটভাটাগুলি ছাই নিলেও তৃতীয় ছাই গাদা না করা গেলে ছাই ফেলার আর জায়গা নেই। দুটি ছাই গাদাই বর্তমানে পূর্ণ হয়ে গেছে। নিশিন্দ্রা গ্রামের কাছে এনটিপিসির নিজস্ব জমিতেই এই তৃতীয় ছাই গাদা তৈরি হবে। বন্যা ও পরিবেশ দূষণ রুখতে ৭০ কোটি টাকার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার (মানবসম্পদ) মিলন কুমার বলেন, “গ্রামবাসীদের যাবতীয় আশঙ্কা দূর করতে বৈঠক হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের কর্তারাও থাকবেন।” নিশিন্দ্রার বাসিন্দাদের বড় অংশ অবশ্য মঙ্গলবারও জানিয়েছেন, ছাইগাদা হতে দেবেন না। সেখানে ইতিমধ্যেই একটি ছাইগাদা রয়েছে। তাতেই তাঁদের জীবন দুর্বিষহ।

গ্রামবাসীর বক্তব্য সমর্থন করছেন ফরাক্কার কংগ্রেস বিধায়ক মইনুল হক, সিটুর জেলা সভাপতি আবুল হাসনাত খান, তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি সোমেন পান্ডেরাও। আবুল হাসনাত বলেন, “বাহাদুরপুরের দিকে ছাইগাদা করার জন্য এনটিপিসিকে বিকল্প প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।”

বিদ্যুৎকেন্দ্রের এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর অরবিন্দকুমার সিংহ বলেন, “জাতীয় সড়ক ভরাট করতে বহু ছাই কাজে লাগানো হয়েছে। ছাই থেকে ভাল ইট হতে পারে। কিন্তু জেলার ইটভাটাগুলি তা কাজে লাগাচ্ছে না। ছত্তীসগঢ়ে তো মাটি পুড়িয়ে ইট তৈরি পুরোপুরি নিষিদ্ধ। ছাইয়ের ইট তৈরি বাধ্যতামূলক।’’ ইটভাটা ছাই নিলেও ছাইগাদা করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ইটভাটা মালিকদের বৈঠকে ডাকা হয়েছে। আমরা বিনা পয়সায় ছাই দিতে চাই। প্রয়োজনে পরিবহণ খরচের কিছুটা দিতে আমরা রাজি।’’

মুর্শিদাবাদ জেলায় কমবেশি সাড়ে ছ’শো ইটভাটা রয়েছে। কয়েক বছর থেকেই জঙ্গিপুরের কিছু ইটভাটা মাটির সঙ্গে ২৫ শতাংশ ছাই মিশিয়ে ইট তৈরি করছে। ইটভাটা মালিক সংগঠনের জেলা সম্পাদক আইজুদ্দিন মণ্ডল জানান, বেশির ভাগ ইটভাটা মালিকই এনটিপিসির প্রস্তাব মানতে রাজি। এতে মাটিও সাশ্রয় হবে। কিন্তু ছাই পরিবহণে সমস্যা আছে। ফরাক্কা থেকে জঙ্গিপুর মাত্র ৫০ কিলোমিটার। বেলডাঙা, ডোমকল, হরিহরপাড়ার দূরত্ব সেখানে তিন
গুণ বেশি।

আইজুদ্দিন বলেন, “এনটিপিসি ছাই পরিবহণের ক্ষেত্রে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলে আমরা ছাই নিতে আগ্রহী। এনটিপিসির সঙ্গে আমরা এ নিয়ে কথা বলতে চাই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন