তার হাসিতেই রোদ্দুর ঝলসায় হাসপাতালে

সাড়ে তিন মাসের মেয়েটিকে নিয়েই এখন হাসপাতালের নার্সদের সাজানো সংসার। তাকে খাওয়ানো থেকে ঘুম পাড়ানোর দায়টা ভাগ করে নিয়েছেন ওঁরা। গত তিন মাস ধরে এটাই হাসপাতালের নিয়ম।

Advertisement

কল্লোল প্রামাণিক

তেহট্ট শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:১১
Share:

নার্সদের কোলে অদ্বিতীয়া। নিজস্ব চিত্র

সে হেসে উঠলেই হাসপাতালের সবুজ পর্দা ঠেলে যেন রোদ্দুর হেসে উঠছে। তার খুনখুন কান্নায় যেন মেঘ করছে হাসপাতালের চাতালে। দো-তলার এসএনসিইউ’র (সিক নিউবর্ন কেয়ার ইউনিট) ছোট্ট কটের হাসি-কান্নার উপরেই যেন তেহট্ট মহকুমা হাসপাতালের মেঘ-রোদ্দুর খেলছে।

Advertisement

সাড়ে তিন মাসের মেয়েটিকে নিয়েই এখন হাসপাতালের নার্সদের সাজানো সংসার। তাকে খাওয়ানো থেকে ঘুম পাড়ানোর দায়টা ভাগ করে নিয়েছেন ওঁরা। গত তিন মাস ধরে এটাই হাসপাতালের নিয়ম।

তেহট্টের অদূরে বেতাইয়ের একটি কলা বাগান, ১৩ সেপ্টেম্বর সেখানেই দিন দুয়েকের মুমুর্ষ শিশুকন্যাটিকে কে যেন নিশ্চুপে রেখে গিয়েছিল। আদালত ঘুরে ঠিকানা তার এখন ওই এসএনসিইউ। আদর করে চিকিৎসকেরা নাম রেখেছেন তার ‘অদ্বিতীয়া’।

Advertisement

হাসপাতালের নার্স মৌমিতা বিশ্বাস, কৃষ্ণা নাথ, শাশ্বতী রায় যেন চোকে হারাচ্ছেন তাকে। মৌমিতা বলেন, “ আরে অতটুকু ফুটফুটে একটা বাচ্চা কী করে এমন হেলায় পেলে রেখে যায় বলুন তো!’’ দিন-রাত যাঁর যখন ডিউটি, দেখে যাচ্ছেন তাকে। প্রয়োজনে স্তন্যপানও।

কৃষ্ণা বলছেন, ‘‘নাম রাখা হয়েছিল অদ্বিতীয়া। তবে আদরের নাম তার ঢের, কেউ বলছেন রাই কেউ বা রিয়া।” তেহট্ট মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসক রামচন্দ্র মুর্মু জানান, বাচ্চাটিকে যখন আনা হয়েছিল তখন তার শারীরিক অবস্থা বিশেষ ভাল ছিল না। ওজন ছিল মাত্র দু’কেজির মতো। বাঁচানোই ছিল তাঁদের প্রথম চ্যালেঞ্জ। তবে, যত্নের ছায়ায় ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠেছে শিশুটি। এই ক’মাসে ওজন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪.৮ কেজি। ডাক্তারদের নিরলস চিকিৎসার ও নার্সদের যত্ন দেখভালে সে বড় হচ্ছে। শিশুটি এখন সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছে।

রাইয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে প্রশাসন ও জেলা শিশু কল্যাণ দফতরকেও জানানো হয়েছে ব্যাপারটা। তারা বিশেষ ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানানো হয়েছে।

তেহট্টের এসডিপিও কার্ত্তিক মণ্ডল জানান, ১৩ সেপ্টেম্বর সকালে তেহট্টের বেতাইএর একটি কলাবাগানে ওই সদ্যোজাতটির খোঁজ পেয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। খবর পেয়েই পুলিশ তাকে উদ্ধার করেছিল। তার পর থেকেই ওই হাসপাতালে রয়েছে সে।

ঝোপঝাড়ের আঁধারে পড়ে তাকা সেই শিশুই এখন এখন আলো ঝরিয়েছে হাসপাতালে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন