মঞ্চ-মাতিয়ে: শনিবার সন্ধ্যায় রানিনগরে এক ইদ মিলনী উৎসবে ওসি অরূপ রায় (বাঁ দিকে) ও বিডিও আশিস রায়। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম।
সীমান্তের থানা। সুর বলতে ঝিঁঝিঁ পোকার কোরাস। পাখিদের কিচির মিচির আর নদী পাড়ের রাখালের সুর-বেসুরের মেঠো গান। বছর দুয়েক ধরে সীমান্তের এই চেনা সুরে গলা বুনেছেন দুই আধিকারিক। বিডিও আর থানার বড়বাবু। রানিনগরে তাঁরাই এখন অন্য সুরের কারিগর।
নানা মঞ্চে তাঁদের এক জন ধরছেন কিশোর কুমারের ‘নয়ন সরসী কেন’ তো অন্যজন আব্দুল করিমের ‘গানে বন্ধুরে ডাকি, আর গান দিয়ে বন্ধুর ছবি আঁকি।’
প্রশাসনের দুই কর্তা এখন সীমান্তের বিভিন্ন মঞ্চের তুখোড় শিল্পী। কখনও গ্রামের বাউল ফকির উৎসব, আবার কখনও স্কুল বা ক্লাবের সুবর্ণ জয়ন্তীর মঞ্চ মাতাচ্ছেন তাঁরা। শনিবার সন্ধ্যায় রানিনগরে এক ইদ মিলনী উৎসবে বিডিও আশিস রায় ও ওসি অরূপ রায় সুরে মাতালেন জনতাকে।
বছর কয়েক আগেও এই এলাকার সুর বলতে ছিল, ভারী বুটের শব্দ, পাচারকারীদের পটকা আর বিএসএফের গুলি। বিনোদন বলতে তেমন কিছুই নেই প্রান্তিক জনপদে। বদলি হয়ে এলাকায় আসার পরে দুই সরকারি কর্তার মনে হয়েছিল, এই অ-সুর জমিতে কোথায় যেন সুরের অভাব! আশিস বলছেন, ‘‘এমন মেঠো জায়গা সেখানে গানের চল নেই দেখে আক্ষেপ করছিলাম। দেখলাম ওসি অরূপেরও একই দশা। এতে মানুষের সঙ্গে সংযোগও বেড়েছে জানেন।’’
আর, অরূপ বলছেন, ‘‘মানুষের সঙ্গে সংযোগ যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে এলাকার সংস্কৃতির চর্চাও। অভিযোগ জানাতে এসেও এখন গ্রামের মানুষ বলেন, বড়বাবু যাবেন তো, একটা আসর বসাব!’’
রানিনগরের পুরনো বাসিন্দা কাজল মণ্ডল বলছেন, ‘‘আমাদের বিডিও এবং ওসি দুজনেই প্রশাসনের ভারিক্কি চালটা তাকে তুলে যে ভাবে মানুষের সঙ্গে মিশছেন, গানে-সুরে ভুলিয়ে রাখছেন, ভাবাই যায় না।’’
গ্রামের পরিচিত যুবকেরাও দুই কর্তাকে ঘিরে গ্রামে একটা ব্যান্ড তৈরির কথাও ভাবতে শুরু করেছেন ।
অরূপ বলছেন, ‘‘তবুও জানেন, ভাবলে খারাপ লাগে, বদলির চাকরি তো, এই সুরের সীমান্তটা ছেড়ে যেতে হবে এক দিন!’’