Humayun kabir

মন্ত্রী হতে ৮৬ হাজার দিয়েছেন হুমায়ুন! তৃণমূল বিধায়ককে ‘প্রতারণা’, ধৃত ভুয়ো আইপ্যাক কর্মী

তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীরের অভিযোগ, তাঁর সঙ্গে আর্থিক প্রতারণা করা হয়েছে। তিনি তিন দফায় ৮৬ হাজার টাকা দিয়ে ফেলেছেন অভিযুক্ত যুবককে। ধৃত তাঁর ‘পূর্বপরিচিত’ বলেও জানান বিধায়ক।

Advertisement

প্রণয় ঘোষ

ভরতপুর শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৮:২৪
Share:

তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীরের সঙ্গে হোয়াট্‌সঅ্যাপে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

পূর্ণ মন্ত্রিত্ব মিলবে। পছন্দমতো দফতরও পেয়ে যাবেন। তার পর সামনেই তো লোকসভা ভোট আছে। তখন দলের গুরুত্বপূর্ণ পদেও থাকবেন— এমনই সব ‘টোপ’ দিয়ে স্বয়ং বিধায়কের কাছ থেকে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা দাবি করেছিলেন এক ব্যক্তি। আগে ওই ব্যক্তির ফাঁদে পড়ে ৮৬ হাজার টাকা খুইয়েছিলেন। বার বার সেই ব্যক্তির ফোনে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিলেন মুর্শিদাবাদের ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। তাঁর অভিযোগ, আইপ্যাক সংস্থার কথা বলে তাঁকে প্রতারণার চেষ্টা করেছেন ওই যুবক। শাসকদলের বিধায়কের এই অভিযোগের ভিত্তিতে উত্তর ২৪ পরগনার মধ্যমগ্রাম থেকে এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শনিবার এই ঘটনায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে জেলার রাজনৈতিক মহলে।

Advertisement

২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা আইপ্যাককে নিয়োগ করেছিল তৃণমূল। পুলিশ সূত্রে খবর, নিজেকে সেই বেসরকারি সংস্থার কর্মী বলে ভরতপুরের বিধায়কের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন অভিযুক্ত। হোয়াট্‌সঅ্যাপ কলের মাধ্যমে প্রতারণার জাল বিছিয়েছিলেন অভিযুক্ত। হুমায়ুনের কাছে প্রথমে অল্প টাকাই চাওয়া হয়। সেই টাকা দেওয়ার পর দফায় দফায় চাহিদা বাড়তে থাকে। এর পর যেই ১০ লক্ষ টাকা চাওয়া হয়, তাতেই সন্দেহ দানা বাঁধে বিধায়কের মনে। তিনি এ নিয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে শনিবার বারাসত পুলিশ জেলা থেকে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতকে ১৫ দিনের হেফাজত চেয়ে আদালতে তোলা হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন শনিবার সকালে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। তাতে তিনি জানান, গত ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে তাঁকে এক জন নিয়মিত ভাবে হোয়াট্‌সঅ্যাপ কল করেন। বিধায়কের বয়ান অনুযায়ী, তাঁকে পূর্ণ মন্ত্রিত্ব এবং গুরুত্বপূর্ণ দফতর পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে ১০ লক্ষ টাকা দাবি করেন ওই যুবক। এ ছাড়াও লোকসভা নির্বাচনের আগে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতেও সাহায্য করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন অভিযুক্ত। তিনিও ‘ভুলে’ ৮৬ হাজার টাকা দিয়ে ফেলেছেন অভিযুক্তকে। কিন্তু তার পর নিজের ভুল বুঝতে পেরে পুলিশের দ্বারস্থ হন।

Advertisement

ওই অভিযোগ পাওয়া মাত্র শনিবার সকাল থেকে তদন্ত শুরু করে মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশ। অভিযুক্তের ফোন নম্বর ‘ট্র্যাক’ করে জানা যায়, তিনি আদতে আসানসোলের নিয়ামতপুরের বাসিন্দা হলেও বর্তমানে অবস্থান উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত পুলিশ জেলার মধ্যমগ্রামে। তার পর মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশ এবং উত্তর চব্বিশ পরগনা পুলিশের যৌথ অভিযানে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে ধৃতের নাম অঞ্জন সরকার। তবে বিধায়ক আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ধৃতের নাম রঞ্জন সরকার। পুলিশের দাবি, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নিজের অপরাধের কথা স্বীকারও করে নিয়েছেন অভিযুক্ত। তাঁকে ১৫ দিনের পুলিশি হেফাজতে চেয়ে আদালতে তোলা হচ্ছে।

এই ঘটনা প্রসঙ্গে ভরতপুরের বিধায়কের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। তিনি বলেন ‘‘প্রথমে জেলায় (জেলা তৃণমূলে) গুরুত্বপূর্ণ পদ পাইয়ে দেবে বলে টাকা চায়। আমি ওকে তিন দফায় ৮৬ হাজার টাকা দিয়েছি। আমাকে আইপ্যাকের প্রতীক জৈন এবং মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের নাম করে লক্ষাধিক টাকা দাবি করেছিল। তবে আমি গুরুত্ব দিইনি। এর পর মন্ত্রিত্ব পাইয়ে দেবে বলে ফোন করতে থাকে। আমি এর পর কলকাতার পুলিশের এক আধিকারিকের সঙ্গে আলোচনা করি। তার পর ওই নম্বর ব্লক করে দিই। কিন্তু ২২ তারিখ থেকে একাধিক নম্বর থেকে হোয়াট্‌সঅ্যাপ কল আসতে থাকে। তখন শক্তিপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করি। সকালে ওকে মধ্যমগ্রাম থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।’’

বিধায়ক জানান, অভিযুক্তকে গ্রেফতারের পর তাঁকে থানায় ডেকে পাঠানো হয়েছিল। তখন তিনি অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসা করেন, কেন এ রকম একটা কাজ করলেন তিনি। তাতে অভিযুক্ত তাঁকে বলেছেন, টাকার প্রয়োজনে এই কাজ করেছেন। হুমায়ুনের কথায়, ‘‘ও বলল, পয়সার দরকার ছিল। তাই বাধ্য হয়ে আপনাকে ফোন করেছিলাম। আপনার সঙ্গে আমার অনেক দিনের পরিচয়। বাধ্য হয়ে এই কাজ করেছি। ভুল হয়েছে ক্ষমা করে দিন। আসলে ছেলেটি, রঞ্জন সরকার, ইলেকট্রনিক্স সরঞ্জামের ব্যবসা করে বলে জানতাম। তবে আইপ্যাকের সঙ্গে ওর যোগাযোগ আছে কি না, বলতে পারব না।’’ তাঁর এই কথোপকথনের অডিয়ো রেকর্ড আনন্দবাজার অনলাইনের হাতে রয়েছে।

এই ঘটনা প্রসঙ্গে মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলার সুপার সূর্যপ্রতাপ যাদব বলেন, ‘‘বিধায়কের অভিযোগ পাওয়া মাত্রই তদন্ত শুরু হয়। টেকনিক্যাল টিমকে ব্যবহার করে যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে তথ্য উদ্ধারের চেষ্টা করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন