ঝিনাইদহের ‘বাষাডাই’ কাল হল রূপকুমারের

ঝিনাইদহের জিভের ঝাপটাই জড়িয়ে দিল তাঁকে! শ্রীঘরের পথে, পুলিশের জিপে ওঠার সময়ে তাই ভাসা ভাসা মুখে কবুলই করে ফেলছে সে— ‘‘অওন, দ্যাশের বাষাটা (ভাষা) তো ছাডতি পারি নাই, তাই...’’।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৬ ০০:৫৩
Share:

ঝিনাইদহের জিভের ঝাপটাই জড়িয়ে দিল তাঁকে!

Advertisement

শ্রীঘরের পথে, পুলিশের জিপে ওঠার সময়ে তাই ভাসা ভাসা মুখে কবুলই করে ফেলছে সে— ‘‘অওন, দ্যাশের বাষাটা (ভাষা) তো ছাডতি পারি নাই, তাই...’’।

বাকিটা ঠিকঠাকই ছিল। সীমান্ত টপকে এ দেশে এসে রুজির একটা উপাও খুঁজে নিয়েছিলেন, বছর ঘুরতে না ঘুরতেই স্থানীয় নেতা-মাতব্বর ধরে রেশন কার্ড, এ দেশের ‘বৈধ’ সচিত্র পরিচয়পত্র— ফাঁক রাখেনি কিছুই। শশা-কুমড়োর ফলনে ঘর গেরস্থলি সাজিয়ে ভরা সংসারি হয়ে উঠেছিল সে।

Advertisement

বছর দুয়েকের মধ্যে বিয়ে করে স্থিতুও হয়েছিল বেশ। কিন্তু দাম্পত্য কলহেই ভিন দেশের শ্রীঘরে চলে গেল সে। ভরা এজলাসে ম্যজিস্ট্রেট তাকে চেপে ধরতেই হারানো ‘ঝিনাইদা’র আবেগটা বেঁধে রাখতে পারেনি। জেরার চাপে তাই মেনেও নিয়েছিল ‘হ আমি বাংলাদেশি’। আর তার জেরেই অনুপ্রবেশকারী হিসেবে ঠিকানা বদলে গিয়েছে জেলখানায়।

সম্প্রতি, কৃষ্ণনগর সদর মহকুমা শাসক মৈত্রেয়ী গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে রূপকুমার বিশ্বাস মেনে নেয়, আদতে সে বাংলাদেশের ঝিনাইদহ থানার করুণাকর এলাকার বাসিন্দা। বছর কয়েক আগে, সীমান্তের বেড়া টপকে এ দেশে এসে হাঁসখালির তারকনগরে জমি জায়গা কিনে ভিনদেশি তকমাও ঘুচিয়ে ফেলেছিল। আলাপ করে বিয়েটাও সেরে ফেলেছিল কোতোয়ালির আমঘাটা এলাকার এক তরুণীর সঙ্গে। বিপত্তিটা অবশ্য ঘটে গিয়েছিল যৌতুকের প্রশ্নে। ‘মনোমত যৌতুক’ না পাওয়ায়, চেনা স্বভাব বেরিয়ে পড়েছিল তার। শুরু হয়েছিল স্ত্রীর উপর অত্যাচার। বাধ্য হয়ে স্ত্রী বাপের বাড়ি ফিরে যেতেই দ্বিতীয় বিয়েটাও নিশ্চুপে সেরে ফেলেছিল সে।

আর সেখানেই যৌতুক নিয়ে গোলমাল শুরু করেছিল রূপকুমার। অভিযোগ পেয়ে মামলার শুনানি শুরু হতেই মহকুমাশাসকের জেরার মুখে সে মুখ ফসকে স্বীকার করে নেয় পুরনো ‘ঘরবাড়ির’ কথা।

মহকুমাশাসক বলেন, “সন্দেহ হতেই আমি চেপে ধরি। প্রথম দিকে অন্য কথা বলে ঘুরিয়ে দিতে চাইলেও এক সময় মুখ ফসকে বলে ফেলে, তার আসল বাড়ি, বাংলাদেশে।” এর পর আর এতটুকু সময় নষ্ট না করে হাঁসখালির পুলিশকে ডেকে রূপকুমারকে তুলে দেন মহকুমাশাসক।

শ্রীঘরে যাওয়ার মুখে পুলিশের জিপে ওঠার আগে রূপকুমার বলছে, ‘‘আবেগডা সিল (ছিল) তো, দ্যাশের কতা আর লুকায়ে রাখতি পারি নাই!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন