ভয়ের ভিড়। বহরমপুর কোর্ট স্টেশনে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।
লালগোলাগামী ডাউন ট্রেন সবে এসে বহরমপুর স্টেশনের এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে থেমেছে। ঘোষণাটা হল তখনই—শিয়ালদহগামী আপ ট্রেন ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে আসছে।
স্টেশন জুড়ে ব্যস্ততাটা ছড়িয়ে পড়ল ঝোড়ো হাওয়ার মতো। ফুটব্র্রিজে ওঠার হুড়োহুড়ি, এ-ওকে টপকে যেতে চাওয়ার মরিয়া লড়াই। পা মাড়িয়ে অন্যের ঘাড়ের উপর দিয়ে ফুটব্রিজ পার হওয়ার সে এক প্রাণপাত করা যুদ্ধ বেধে যায় যেন। ছবিটা প্রায় নিত্য দিনের বহরমপুর স্টেশনের এই মল্লযুদ্ধটা প্রায় রোজ দেখেন স্থানীয় হকারেরা। তাঁদেরই এত ধরিয়ে দিলেন, ‘‘যে কোনও দিন সাঁতরাগাছি অপেক্ষা করছে দাদা!’’
রেল কর্তারাও আলগোছে জানাচ্ছেন, ‘বি ক্যাটাগরি’র এই স্টেশনে এমন দুর্ঘটনা কিন্তু স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। তা হলে উপায়? তার কোনও স্পষ্ট উত্তর অবশ্য তাঁদের কাছে নেই। নেই কোনও সুরাহার উপায়ও। তবে, পূর্বরেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বলেন, ‘‘ইঞ্জিনিরদের মতামতে ভিত্তিতে বহরমপুর স্টেশনের ফুটব্রিজের কথা বিবেচনা করা হবে। হয়ত সামনের বছরেই তা করা যাবে।’’
বহরমপুর স্টেশনে ২৪ ঘণ্টায় ৩২টি যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করে। চলে। তবে, প্ল্যাটফর্ম থেকে ফুটব্রিজ সবই বড় অপ্রশস্থ। ফুটব্রিজের সংখ্যাও মেরেকেটে একটিই। আর তাই এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ নেই যাত্রীকুলের। যা প্রতি মুহূর্তে সাঁতরাগাছির স্মৃতি উস্কে দিচ্ছে।
‘বহরমপুর প্রগ্রেসিভ রেলওয়ে প্যাসেঞ্জার অ্যাসোসিয়েশনের’ সম্পাদক মলয় বণিক বলেন, ‘‘রানাঘাট সি ক্যাটাগরির স্টেশন হওয়া সত্ত্বেও যাত্রীদের কথা ভেবে সেখানে দু’টি ফুটব্রিজ ও একটি আন্ডারপাস রয়েছে। আর বহরমপুর বি ক্যাটাগরির স্টেশন হওয়া সত্ত্বেও সেখানে মাত্র একটি অপ্রশস্থ ফুটব্রিজ। তার ফলে প্রতি দিন কিছু যাত্রী প্ল্যাটফর্মে পৌঁছেও নির্দিষ্ট ট্রেন ধরতে পারেন না।’’ যাত্রীদের চাপে ফুটব্রিজ পার হতে না পেরে অনেকে ঝুঁকি নিয়েই তাই লাইন পার করে উল্টো দিকের প্ল্যাটফর্মের দিকে মরিয়া হয়ে ছোটেন। বহরমপুর জিআরপি থানার ওসি সুরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘মাইকে সতর্ক করা সত্ত্বেও ফুটব্রিজের বদলে রেললাইন পেরিয়ে পার হওয়া থেকে যাত্রীদের রোখা যাচ্ছে কই!’’
নিত্যযাত্রী আশরাফ আলি রিজভি পেশায় শিক্ষক। তিনি বলেন, ‘‘একটি মাত্র ফুটব্রিজ, প্রতি দিন কারও পা মচকে যায়, নয়তো হুমড়ি খেয়ে পড়ে জখম হন। ওই ফুটব্রিজ পার হওয়া, আর মরণপণ যুদ্ধ করা একই কথা।’’