অভিযুক্ত তৃণমূল

মোটরবাইক থেকে নামিয়ে কিল-চড়-ঘুষি প্রধানকে

সিপিএমের প্রধান ও এক কর্মীকে মারধরের অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। শনিবার রাতে হাঁসখালির বড়চুপড়িয়া গ্রামের ঘটনা। মারধরে জখম হন রামনগর-বড়চুপরিয়ার প্রধান যামিনী মান্ডারি। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে যামিনীকে উদ্ধার করে বগুলা গ্রামীন হাসপাতালে ভর্তি করে। রবিবার সকালে তাঁকে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কৃষ্ণনগর: শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৬ ০২:৩৭
Share:

সিপিএমের প্রধান ও এক কর্মীকে মারধরের অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। শনিবার রাতে হাঁসখালির বড়চুপড়িয়া গ্রামের ঘটনা। মারধরে জখম হন রামনগর-বড়চুপরিয়ার প্রধান যামিনী মান্ডারি। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে যামিনীকে উদ্ধার করে বগুলা গ্রামীন হাসপাতালে ভর্তি করে। রবিবার সকালে তাঁকে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।

Advertisement

মারধরে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রানাঘাট (উত্তর-পূর্ব) কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী তথা বিদায়ী বিধায়ক সমীর পোদ্দার ও হাঁসখালির ব্লক সভাপতি দুলাল বিশ্বাসের বিরুদ্ধে। হাঁসখালি থানায় সেই মর্মে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে হাঁসখালি থানায় বিক্ষোভ দেখায় সিপিএম। অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হাঁসখালি ব্লকের রামনগর-বড়চুপরিয়া গ্রামের প্রধান যামিনী মান্ডারির বাড়ি ছোটচুপড়িয়া গ্রামে। শনিবার রাতে গ্রামের এক মহিলা অসুস্থ হয়ে পড়লে যামিনী তাঁকে বগুলা গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করার জন্য নিয়ে যান। চিকিৎসা শুরু হলে দলরেই এক কর্মী অনেশ্বর মুন্ডারির মোটরবাইকে চেপে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। অভিযোগ, বড়চুপড়িয়া গ্রামে তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ের সামনে তাঁর পথ আটকায় তৃণমূলের লোকজন। তারপর তাঁদের উপর চড়াও হয়। তৃণমূল প্রার্থী সমীর পোদ্দার ও ব্লক সভাপতি দুলাল বিশ্বাস সে সময় উপস্থিত ছিলেন।

Advertisement

অনেশ্বর জানান, দু’টো মোটরবাইক গ্রামে ফিরছিল। তাঁর মোটরবাইকের পিছনে বসেছিলেন প্রধান। আর একটা মোটরবাইকে দলেরই এক কর্মী ও রোগীর বাড়ির এক মহিলা বসেছিলেন। তৃণমূলের লোকজন তাঁদের পথ আটকায়। ভয় পেয়ে ওই কর্মী ওই মহিলাকে ফেলে পালান। অনেশ্বরকে মোটরবাইকে থেকে নামিয়ে মারধর করা হয়। পিছন থেকে প্রধানকে নামিয়ে নিয়ে মাটিতে ফেলে কিল লাথি ও চ্যালা কাঠ দিয়ে মারতে থাকে তৃণমূলের লোকজন। গোটা ঘটনাটা ঘটে বাজারের উপরেই। কিন্তু অত রাতে বাজারে কেউ ছিলেন না। তিনি বলেন, ‘‘গ্রামেরই এক তৃণমূল কর্মী আমাকে ওই মহিলাকে নিয়ে এলাকা ছাড়তে বলে। কিন্তু প্রধানকে ফেলে যেতেও মন চাইছিল না। তার উপরে মোটরবাইক চালানোর মতো ক্ষমতাও ছিল না।’’ শেষ পর্যন্ত এক তৃণমূল কর্মীই তাদের দু’জনকে কিছুটা রাস্তা এগিয় দিয়ে আসে। তাঁরা গ্রামে গিয়ে খবর দিলে ছোটচুপড়িয়া গ্রামের লোকজন ঘটনাস্থলে যান। ততক্ষণে তৃণমূলের লোকজন এলাকা ছেড়ে চলে গিয়েছে। প্রধানকে গুরুতর জখম অবস্থায় স্থানীয় এক ব্যক্তির বাড়িতে মেলে। খবর দেওয়া হয় পুলিশকে। পরদিন অনেশ্বর, সমীর পোদ্দার, দুলাল বিশ্বাস-সহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন।

শক্তিনগর জেলা হাসপাতলের বিছানায় শুয়ে যামিনীবাবু জানান, ‘‘সমীরবাবু রাস্তা আটকে বলেন, দলের পঞ্চায়েত সদস্যেরা নাকি এলাকায় সাম্প্রদায়িক প্রচার করছে। এ রকম কিছু তাঁর জানা নেই বলে আমি জানাই। ব্যাপারটি নিয়ে দলের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে কথা বলব বলি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ওরা কোনও কথাই শুনতে চাননি। দুলালবাবু বলেন কথা বাড়িয়ে কোন লাভ নেই। বলেই তিনি কর্মীদের আমাকে মারার নির্দেশ দেন।’’

শুধু এ বারই প্রথম নয়। দিন কয়েক আগেও হাঁসখালি থানার কৈখালি গ্রামে সিপিএম প্রার্থী বাবুসোনা সরকার প্রচার করতে এসে এক সিপিএম কর্মীরা বাড়িতে জল খেয়েছিলেন। সেই ‘অপরাধে’ ওই দিন রাতেই তার বাড়িতে চড়াও হয়ে ঘর ভাঙচুরের পাশাপাশি তৃণমূলের তার স্ত্রীকেও মারধর করে বলে অভিযোগ। সিপিএম প্রার্থীর হয়ে প্রচার করায় এই দিন রাতেই এক কংগ্রেস কর্মীর বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ। সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য সুপ্রতীপ রায় বলেন, ‘‘এলাকায় আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করে ভোট লুঠ করতে চাইছে তৃণমূল। আর সেই কারণেই নেতা কর্মীদের উপর আক্রমণ করছে ওরা।’’ তাঁর কথায়, ‘‘পুলিশ শুধু উদাসীনই নয়, তৃণমূলের হয়ে কাজ করছে। এরই প্রতিবাদে আজ থানায় বিক্ষোভ কর্মসূচি নিয়েছি।’’

যদিও গোটা ঘটনা অস্বীকার করে সমীর পোদ্দার বলেন, ‘‘দুপুরে ওই এলাকায় মিছিল করেছিলাম। মিছিল শেষে এলাকা ছেড়ে চলে আসি। এমন কোনও ঘটনার কথাই জানা নেই।’’ তিনি বলেন, ‘‘খোঁজ নিয়ে জেনেছি ওই এলাকার এক সিপিএম সদস্য লিফলেট ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। দলের লোকজন প্রধানকে ধরে এমনটা না করার কথা বলেছে মাত্র। এর বেশি কিছু নয়। পরাজয় নিশ্চিত বুঝতে পেরে সিপিএম এই ধরনের নাটক শুরু করেছে।’’

জেলার পুলিশ সুপার শিশরাম ঝাঝারিয়া বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন