মতুয়া নিয়ে সভায় পাল্টা আশ্বাস পার্থর

ঠিক এক সপ্তাহ আগে মতুয়াদের বিজেপি-ঘেঁষা অংশ যে জায়গায় ‘ধর্মসভা’ করেছিল, সেই কৃষ্ণগঞ্জেই শনিবার পাল্টা সমাবেশ করল তাদের তৃণমূল-ঘেঁষা অংশ।

Advertisement

সম্রাট চন্দ

কৃষ্ণগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:৩৮
Share:

সভামঞ্চে পার্থ ও মমতবালা। ছবি: প্রণব দেবনাথ

ঠিক এক সপ্তাহ আগে মতুয়াদের বিজেপি-ঘেঁষা অংশ যে জায়গায় ‘ধর্মসভা’ করেছিল, সেই কৃষ্ণগঞ্জেই শনিবার পাল্টা সমাবেশ করল তাদের তৃণমূল-ঘেঁষা অংশ। আগের সভার অনুমতি নিয়ে আপত্তি তুলেছিল প্রশাসন। এ দিন অবশ্য নির্বিঘ্নেই ‘মহাসম্মেলন’ হয়ে গেল। তবে জেলা তৃণমূল সভাপতি ‘দশ গুণ লোকের সভা করব’ বলে যে হুঙ্কার দিয়েছিলেন, ততটা হল না।

Advertisement

গত শনিবার কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকের স্বর্ণখালিতে মতুয়া মহাসম্মেলন ও ধর্মসভায় যোগ দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিং। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া মুকুল রায় ও মতুয়া ঠাকুরবাড়ির শান্তনু ঠাকুরও তাঁর সঙ্গে ছিলেন। এ দিন কৃষ্ণগঞ্জেরই মাজদিয়ায় মতুয়াদের সভায় এলেন শিক্ষামন্ত্রী তথা তৃণমূলের নদিয়া জেলা পর্যবেক্ষক পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সঙ্গে মতুয়া ঠাকুরবাড়ির প্রতিনিধি, তৃণমূল সাংসদ তেমনি এ দিনের সভায় ছিলেন মমতাবালা ঠাকুরও। ছিলেন জেলা তৃণমূলের প্রথম সারির প্রায় সব নেতাও। যদিও সকলেরই দাবি, এটা তৃণমূলের সভা নয়, মতুয়াদের সম্মেলনে তাঁরা ‘আমন্ত্রিত’ হয়েছিলেন মাত্র। লোকসভা নির্বাচনের আগে মতুয়া ভোট নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে কার্যত মরিয়া তৃণমূল এবং বিজেপি, দুই শিবিরই। বিশেষ করে রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রে মতুয়া ভোট যে নির্ণায়ক হয়ে যেতে পারে, তা দুই দলের নেতারাই ভাল করে জানেন। সেই কারণেই জাতীয় নাগরিক পঞ্জি নিয়ে বিতর্ক থেকে শুরু করে প্রায় সব বিষয়েই মতুয়াদের পাশে থাকার বার্তা দিতে চাইছে দুই দল। আগের দিনই গিরিরাজ সিং মতুয়াদের রক্ষাকর্তা হিসেবে নরেন্দ্র মোদীর বিজ্ঞাপন করে গিয়েছেন। হিন্দুত্বই যে তাঁদের আসল রক্ষাকবচ, তা-ও ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। মতুয়াদের উন্নয়নের প্রসঙ্গে প্রশ্নে রাজ্য সরকারের ভুমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলে গিয়েছেন তিনি।

এ দিন পাল্টা সভার মঞ্চে দাঁড়িয়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায় দাবি করেন, ‘‘এরা মতুয়াদের উস্কানি দেওয়ার জন্য বেছে নিয়েছে। প্রতিজ্ঞা করুন, আমাদের ভাঙা চলবে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মতুয়াদের জন্য যে উন্নয়নের কাজ করছেন, এ ভাবে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে তা প্রতিরোধ করা যাবে না।’’ জাতীয় নাগরিক পঞ্জি তৈরি করে বাংলাদেশি বলে দেগে দেওয়ার ভয় যে মতুয়াদের একাংশকে গ্রাস করেছে তা মাথায় রেখে পার্থের দাবি, ‘‘এক জনকেও এই রাজ্য থেকে যেতে দেব না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাতা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। বিজেপির ক্ষমতা নেই, সেই ছাতা বন্ধ করে!’’

Advertisement

অর্থাৎ মতুয়াদের বড় রক্ষাকর্তা কারা, প্রতিযোগিতা হচ্ছে তা নিয়েই। দু’টি সভাই যেখানে হয়েছে, সেই এলাকা এক সময়ে তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত ছিল। বিজেপি অনেক দিন ধরেই সেখানে দাঁত ফোটানোর চেষ্টা করছে। ২০১৫-র বিধানসভা উপ-নির্বাচনে সিপিএমকে পিছনে ফেলে তারা দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছিল। পঞ্চায়েত ভোটে কৃষ্ণগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূল ও বিজেপির ‘টাই’ হয়। ফলে শক্তি প্রদর্শনের দায় দুই পক্ষেরই যথেষ্ট রয়েছে।

আগের দিন মতুয়াদের সভায় ভাল ভিড় হওয়ায় কি আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরেছে শাসক দলের? প্রশ্ন উড়িয়ে দিয়ে জেলা তৃণমূলের সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত দাবি করেন, “মতুয়া, নমশূদ্র সবাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে আছেন। তার প্রমাণ বারবার দিয়েছেন তাঁরা।’’

এক সপ্তাহ আগেই গৌরীশঙ্কর দাবি করেছিলেন, দশ গুণ বেশি লোক নিয়ে সভা করবেন। মঞ্চ আলো করে নেতারা ছিলেন ঠিকই, সভায় আসা মতুয়া ভক্তদের জন্য খাবারের ব্যবস্থাও ছিল, কিন্তু মাজদিয়া রেল বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ পুরো ভর্তি হয়নি। বিজেপির নদিয়া দক্ষিণ জেলা সাংগঠনিক সভাপতি জগন্নাথ সরকারের দাবি, ‘‘আগের দিন সভায় যত লোক হয়েছিল, তার অর্ধেকও হয়নি।’’ গৌরীর পাল্টা দাবি, লোক দশ গুণ বেশিই হয়েছে। এ দিনের মাঠ বড় হওয়ায় ভিড় কম বলে মনে হয়েছে। তাঁর টিপ্পনী, “যাঁরা বলছেন, লোক কম হয়েছে, তাঁদের দৃষ্টিশক্তি নিয়ে সন্দেহ আছে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন