ওয়ার্ডে ঢুকে রোগিণীর শ্লীলতাহানি

ঘটনাটি শুক্রবার রাতে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের। শুক্রবার বিকেলে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ওই রোগিণীকে ভর্তি করানো হয়েছিল। শনিবার সকালে রোগিণীর স্বামী হাসপাতালে এসে শোনেন, গভীর রাতে দুই যুবক ওয়ার্ডে ঢুকে তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে অশালীন আচরণ করেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কৃষ্ণনগর ও বহরমপুর শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:৩৪
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

হাসপাতালের কর্মী সেজে গভীর রাতে মহিলা বিভাগে ঢুকে গিয়ে এক রোগিণীর শ্লীলতাহানি ও গালিগালাজ করল মত্ত দুই যুবক।

Advertisement

এবং এই ঘটনায় ফের সামনে চলে এল সরকারি হাসপাতালে রোগীদের নিরাপত্তার ফাঁকফোকর। প্রশ্ন উঠছে নিরাপত্তারক্ষীদের ভুমিকা নিয়েও। যদিও এর পরেও শনিবার দুপুরে ওই দুই যুবককে হাসপাতাল চত্বরেই বুক ফুলিয়ে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গিয়েছে বলে অভিযোগ।

ঘটনাটি শুক্রবার রাতে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের। শুক্রবার বিকেলে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ওই রোগিণীকে ভর্তি করানো হয়েছিল। চিকিৎসার বন্দোবস্ত করে তাঁর স্বামী ও বাবা বাড়ি ফিরে যান। তার আগে হাসপাতালের কর্মী বলে পরিচয় দিয়ে মহিলাকে রাতে দেখাশুনোর জন্য পাঁচশো টাকা নিয়েও নেয় এক জন।

Advertisement

শনিবার সকালে রোগিণীর স্বামী হাসপাতালে এসে শোনেন, গভীর রাতে দুই যুবক ওয়ার্ডে ঢুকে তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে অশালীন আচরণ করেছে। হাসপাতালে শুয়েই মহিলা অভিযোগ করেন, “ওয়ার্ডে প্রায় সকলেই ঘুমিয়ে পড়েছিল। দু’টো ছেলে ঢুকে, দু’জনেই মদ খেয়ে ছিল, আমার গায়ে হাত বোলাতে থাকে। আমি বাধা দিলে ওরা উল্টে গালিগালাজ করে।”

সেই চেঁচামেচিতে সচকিত হয়ে ওয়ার্ডে থাকা আয়ারা তেড়ে এসে দু’জনকে ধরে চড়চাপাটি মারতে শুরু করেন। ইতিমধ্যে অন্য রোগীরা জেগে উঠে চেঁচামেচি জুড়লে যুবক দু’টি পালায়। ওই রোগিণীর পাশের শয্যার জ্যোৎস্না নাথ, ভারতী ঘোষেরা বলেন, “কী অবস্থা ভাবুন! কেউ তো ঢুকে পড়ে কোনও রোগীকে খুনও করে দিয়ে যেতে পারে!”

এত কিছু ঘটল, নিরাপত্তা রক্ষীরা কিছু বুঝতেই পারলেন না? না কি, স্থানীয় এবং মুখচেনা হওয়ায় রাতের বেলাতেও হাসপাতালের ভিতরে তাদের অবাধ বিচরণ?

হাসপাতালের কর্মীদের একাংশের দাবি, দুই যুবক স্থানীয়। এক জন সাফাইকর্মীদের আবাসনেই থাকে। অ্যাম্বুল্যান্সের দালালিও করে। কখনও কখনও রোগীদের স্ট্রেচার টেনে টাকা আদায় করতেও দেখা যায় তাদের। আর সেই কারণেই তাদের গতিবিধি আলাদা করে চোখে পড়েনি নিরাপত্তা রক্ষীদের। সুপার শচীন্দ্রনাথ সরকার বলেন, “বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। কী ভাবে ওই দুই যুবক ভিতরে ঢুকল, তা আমরা নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সংস্থার কাছে জানতে চেয়েছি। সেই সঙ্গে পুলিশে অভিযোগও হয়েছে।”

মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালও বিশেষ ব্যতিক্রম নয়। মাস দেড়েক আগেই সেখান থেকে এক বন্দি পালিয়ে গিয়েছিল। তা-ও আবার পুলিশ পাহারা থাকা সত্ত্বেও। শৌচাগারের জানালা ভেঙে পাইপ বেয়ে সে নীচে নেমে গিয়েছিল বলে হাসপাতাল সূত্রেরই খবর।

রোগীর পরিজনদের অভিযোগ, যত নিয়মকানুনের গেরো, সব তাঁদের জন্য। ওয়ার্ডে ঢোকা নিয়ে নিত্যদিন নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে তাঁদের কথা কাটাকাটি, ধাক্কাধাক্কি হচ্ছে। অথচ দালালেরা অবাধে ওয়ার্ডে ঘুরছে। জরুরি বিভাগ এবং অন্য গেটেও বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থার কর্মীরা মোতায়েন থাকেন। ভিজিটিং আওয়ার ছাড়া রোগীর বাড়ির লোকজনকে হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢুকতে দেওয়া হয়না। কিন্তু দালালদের জন্য সে সব বিধিনিষেধ নেই।

বহরমপুরের এক প্রবীণের প্রশ্ন, বাইরে থেকে যা মনে হয়, সত্যিই যদি তেমন আঁটোসাঁটো নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে, তা হলে জেলবন্দি কী ভাবে ওয়ার্ড থেকে পালায়? তাঁর মতে, সবটাই ‘বজ্র আঁটুনি, ফস্কা গেরো’। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালের ডেপুটি সুপার প্রভাসচন্দ্র মৃধা অবশ্য এই দালালরাজের কথা উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর দাবি, “হাসপাতালে কোনও দালালচক্র নেই। কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। ভিজিটিং আওয়ারে রোগীর পরিবারের লোকজন ওয়ার্ডে ঢুকতে পারেন। অপ্রয়োজনীয় কেউ ওয়ার্ডে ঢুকতে পারেন না।”

যা শুনে মেডিসিন ওয়ার্ডের এক রোগীর টিপ্পনী, ‘‘আর কইবেন না কত্তা, ঘোড়ায় হাসব!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন