আমার সে ক্ষমতা নেই যে কোনও নার্সিংহোমে ছেলেকে ভর্তি করব। ছেলেকে নিয়ে তাই সরকারি হাসপাতালের ভরসাতেই ছুটেছিলাম। এ ছাড়া আর উপায়ই বা কী ছিল!
তবে, দিন কয়েক আগে, কাগজে পড়েছিলাম যে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছে, কথায় কথায় রেফার করা যাবে না। ভেবেছিলাম, ফিরিয়ে দেবে না সরকারি হাসপাতাল, কিন্তু সোমবার বিকেল থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত যা দেখলাম তাতে মনে হচ্ছে, অবস্থা যা ছিল তাই আছে।
শান্তিপুর হয়ে রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে গেলাম। প্রথম ধাক্কাটা খেলাম সেখানেই। কর্তব্যরত চিকিৎসক তো কোনও কথাই শুনতে চাইলেন না। কোনও রকমে জায়গাটা পরিষ্কার করে দুটো সেলাই দিয়ে ব্যান্ডেজ করে বলে দিলেন কল্যাণীর হাসপাতালে নিয়ে যান। কী আর করা, ট্রেন ধরে আমরা ছুটলাম কল্যাণী। সেখানেও একই গতি হল। অনেক অনুরোধ উপরোধের পরে শুনতে হল ‘এখুনি এনআরএসে নিয়ে যাও।’ ছেলে ক্রমেই ঝিমিয়ে পড়ছে। বন্ধ হচ্ছে না রক্তক্ষরণ। বাধ্য হয়ে ছুটলাম কলকাতা। মাঝ রাত কাবার করে কলকাতার এনআরএসে পৌঁছলাম। মাথার মধ্যে শুধু একটাই প্রশ্ন ছেলেটা বাঁচবে তো! সেখানে পৌঁছে দেখলাম, অবস্থা আরও খারাপ। নতুন করে ব্যান্ডেজ করে বলে দিল, বেড নেই বাড়ি ফিরে যাও, ভাবতে পারেন। অনেক ধরাধরি করায় দু’টো বড়ি দিল বটে, তবে তাতে যন্ত্রণা কমল না। ছেলেকে নিয়ে বেড়িয়ে এলাম হাসপাতালের বাইরে। যন্ত্রণায় ছেলে তখন গোঙাচ্ছে। ভোর হতেই গ্রামের দিকে বেরিয়ে পড়লাম। যা হওয়ার ওখানেই হোক।
টগর দাস, জখম কিশোরের বাবা।