হাঁক দিলেই রং ভুলে হাজির ওঁরা

প্রবীণ এক বাম নেতা বলছেন, ‘‘মানুষটাকে আগাগোড়া দেখেছি কংগ্রেস অন্তপ্রাণ। অথচ এখন নাগরিক আইন বিরোধী আমাদের ডাক দেওয়া মিছিলেও পা মেলালেন।

Advertisement

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস

ডোমকল শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:৪৫
Share:

ফাইল চিত্র।

রঙের বিভেদ নেই। হাত থেকে হাতুড়ি এমনকি জোড়া ফুল— লাল-সবুজ, রাজনীতির রঙের ভেদাভেদ না রেখেই নাগরিকপঞ্জি থেকে নয়া নাগরিকত্ব আইন বিরোধী মিছিল-মিটিংয়ের ডাক শুনলেই ওঁরা নেমে আসছেন মাঠে-ময়দানে। বিজেপি-বিরোধী যে কোনও রাজনীতির উঠোনে ‘ভিটে বাঁচানোর’ তাগিদে অনায়াস হয়ে ওঠা ডোমকল ও তার আশপাশের গ্রামীণ মানুষের এই মরিয়া চাহিদাটা নজর এড়ায়নি বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদেরও।

Advertisement

প্রবীণ এক বাম নেতা বলছেন, ‘‘মানুষটাকে আগাগোড়া দেখেছি কংগ্রেস অন্তপ্রাণ। অথচ এখন নাগরিক আইন বিরোধী আমাদের ডাক দেওয়া মিছিলেও পা মেলালেন। আবার তৃণমূলের সভাতেও দেখেছি ভরা প্রত্যয় নিয়ে বসে থাকতে। মানুষ আসলে ভয় পেয়ে খড়কুটোর মতো আঁকড়ে ধরতে চাইছে কাউকে।’’

এই সুযোগে, মানুষকে পাশে পাওয়ার রাজনীতির কেলাটুকু সরিয়ে রেখে তাঁদের পাশে দাঁড়াতে চাইছেন তৃণমূলের নেতারাও। তাঁদেরই একজন বলছেন, ‘‘এখন বাছবিচারের সময় নয়। খাঁড়ার মতো মাথার উপরে ঝুলছে ভিটো হারানোর ভয়। দিদির নির্দেশ, যেই আসুক মিছিলে তাঁকে শামিল কর।’’

Advertisement

বিভেদের সেই দরজাটুকু তাই হাট করে খুলে রেখেছে রাজনৈতিক দলগুলিও। যে মানুযটি তৃণমূলের মিছিলে পায়ে পা মেলালেন, পরের দিনই তাঁকে সিপিএমের সভায় দেখা গেলেও নাক কুঁচকোচ্ছেন না নেতারা। বরং দল ভারী করতে ডেকে নিচ্ছেন সকলকেই। নয়া নাগরিক আইনের জুজু অন্তত সেই নৈকট্য তৈরি করেছে রাজ্যের সব বিরোধী দলের মধ্যে।

ডোমকলে রাজনীতির সুর বরাবরই চড়া। এর আগে এমন হৃদ্যতা চোখে পড়েনি কারও। ডোমকল বাসস্ট্যান্ডের চায়ের দোকানের মালিক আব্দুল গনি বলছেন, ‘‘স্বাধীনতার এত দিন পরে আবার য়েন সবাই এক হয়ে লড়াই করছে!’’ অস্তিত্বের সেই সংকট সামাল দিতে এখন ঘোর কংগ্রেস সমর্থক এক্রাম আলি আর তৃণমূলের স্থানীয় নেতা বদরুদ্দিন খান হাতে হাত ধরে মিটিংয়ে যাচ্ছেন।

ডোমকলের পুরপ্রধান তৃণমূলের জাফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘গোটা দেশ জ্বলছে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি। এমনকি বিজেপি আরএসএস লুঙ্গি পাঞ্জাবী আর টুপি পরে সুটিং করে একটি সম্প্রদায়ের ঘাড়ে হিংসার দায় চাপানোর চেষ্টা করছে। ফলে এই সময়ে বিরোধীদের হাতে হাত মিলিয়ে চলাটা খুব জরুরি।’’

সিপিএমের ডোমকল এরিয়া কমিটির সম্পাদক মুস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, ‘‘সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই দীর্ঘ দিনের। এখন সবার হাতে হাত মিলিয়ে পাশাপাশি থাকাটা জরুরি তো বটেই।’’ আর এই ‘দুঃসময়ে’ পাশাপাশি থাকার বার্তা দিয়ে সমাবেশ করে তাই মাঠ ভরিয়ে ফেলছে সব দলই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন