স্যার, এক্কেরে গাছ-গরম নলেন

কুয়াশা কুয়াশা বেলাটা তখনও আড়মোড়া ভাঙেনি। কলকাতা থেকে লালবাগে পা রাখা পোড় খাওয়া যুগল কিঞ্চিৎ গুড়ের প্রয়াসী হতেই সটান গাছ-পাড়া খেজুর গুড় যেন ঘোড়ার খুরের ছায়া ধরে এসে পড়ল!

Advertisement

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভাশিস সৈয়দ

শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:৩২
Share:

গুড়ের ‘ড়’টা ভাল করে পড়বার আগেই রুগ্ণ ঘোড়াটার পিঠে চাবুকটা না কষিয়ে টাঙ্গার টঙ থেকে পিছু ফেরে লোকটি, ‘‘কি চাইতেস্যান এক নম্বর নলেন তো? দাম বেশি পড়বা তবে গাছ-পাড়া, হাতে হাতে বানাই দিবে!’’

Advertisement

কুয়াশা কুয়াশা বেলাটা তখনও আড়মোড়া ভাঙেনি। কলকাতা থেকে লালবাগে পা রাখা পোড় খাওয়া যুগল কিঞ্চিৎ গুড়ের প্রয়াসী হতেই সটান গাছ-পাড়া খেজুর গুড় যেন ঘোড়ার খুরের ছায়া ধরে এসে পড়ল!

রিকশা-টোটোর হাত ধরে শীতের নবদ্বীপেও থাকছে ‘অরজিনাল’ গুড়ের হাতছানি। ভ্যান রিকশার বেয়াদপি থামিয়ে খুনখুনে কাশির পরে যে চাপা স্বরে চালক বলছেন, ‘‘কোনও নকল পাবেন না, এক্কেরে অরজিনাল!’’ শীতের পর্যটনের ব্র্যান্ড অ্যামবাসেডর হয়ে গাছ-গরম খেজুর বা নলেন গুড় এ পৌষে যেন নবদ্বীপ থেকে লালবাগ, নতুন ভাললাগা বয়ে এনেছে।

Advertisement

নিকানো উঠোনের কোনে প্রকাণ্ড উনুন। গঙ্গার পাড় থেকে ছুটে আসা হিমেল উত্তুরে হাওয়ায় পাটকাঠির আগুনের হই হই দাপট। মানানসই আয়তনের ‘চার নম্বর’ লোহার কড়াইয়ে ফুটছে সদ্য গাছ পাড়া খেজুর রস। একটা লম্বাটে লোহার ডাবু হাতা ভরে সেই ফুটন্ত রস কড়াই থেকে খানিকটা উঁচুতে তুলে ফের আছড়ে ফেলছেন গৌর দাস। মুগ্ধ হয়ে স্মার্টফোনে গুড় তৈরির সেই শিল্প বন্দি করছিলেন সুনন্দা চৌধুরী এবং বিপ্লব হাজরা। চোখের সামনে এই ভাবে গাছ থেকে পেড়ে আনা খেজুর রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি— ঘোর কাটতে চাইছিল না তাঁদের। তার পর, লাজুক লাজুক মুখে সেই গরম গুড় নিয়ে হোটেলে ফেরা। নবদ্বীপ-মায়াপুর কিংবা লালবাগে শীতের পর্যটনের সদ্য তৈরি গুড়ে যেন আরও মিঠে করে তুলেছে এ বারের শীতকাল।

মায়াপুর হুলোর ঘাট থেকে ইস্কন মন্দির যাওয়ার পথে একাধিক জায়গায় পর্যটকদের সামনে দাঁড় করিয়ে গুড় তৈরি করে বিক্রি করছেন অনেকে। গড়পড়তা দেড়শো টাকার গুড়ে ২০০ লোক বুঝে ২৫০ টাকা কেজি। মায়াপুরের গৌর দাস বা বাবলারির বাবলু রুদ্ররা বলেন, “এমন টাটকা গুড় খুব বেশি লোককে দিতে পারি না। কেন না এ ভাবে দু’পাঁচ কেজির বেশি গুড় তৈরি সম্ভব নয়।’’

মকর সংক্রান্তিতে নলেন গুড়ের চাহিদা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। নানা রকম পিঠেপুলি, পাটিসাপটা থেকে পায়েস তৈরিতে এই সময় নলেন গুড়ের বিকল্প নেই। কিন্তু বাজারে চালু নলেন গুড়ের সঙ্গে চাষির ঘরের খাঁটি নলেন গুড় স্বাদে গন্ধে দামে আকাশপাতাল ফারাক। দামেও। ভাঙাচোরা পথে টোটো বা টাঙ্গায় বিশ মাইল ছুটতে হয় হোক। কুছ পরোয়া নেহি। আমার খাঁটি নলেন চাই...!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন