মোমোর সঙ্গে চ্যাটের হিড়িক

মোমোর লোগো দেওয়া কোনও এক জনের সঙ্গে চ্যাটে বুঁদ হয়ে রয়েছে কর্মচারিটি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৮ ০৪:৪৩
Share:

অল্পবয়সী কর্মচারীটি যখনই সময় পায় তখনই মোবাইলে মগ্ন হয়ে কী যেন করে! বিরক্তই লাগত আসাননগর বাজারে গ্যাসের ব্যবসায়ী পার্থপ্রতিম দাসের। সব সময় এত কী মোবাইল! সোমবার রাতে হাতের কাজ শেষ হতে ফোনমগ্ন কর্মচারীর পাশে দাঁড়িয়ে মোবাইল স্ক্রিনে চোখ রেখেছিলেন। দেখেই আঁতকে ওঠেন। ভুতের মতো দেখতে এই চেহারাটি সংবাদমাধ্যমের দৌলতে এত দিনে তাঁর জানা। এ তো ‘মোমো’, যার সঙ্গে চ্যাট করে অল্পবয়সী অনেক ছেলেমেয়ে মৃত্যুপথে চলে যাচ্ছে। সেই মোমোর লোগো দেওয়া কোনও এক জনের সঙ্গে চ্যাটে বুঁদ হয়ে রয়েছে কর্মচারিটি।

Advertisement

তাকে জেরা করে তিনি জানতে পারেন, দিন চারেক হল মোমোর সঙ্গে সে চ্যাট করছে। সঙ্গে-সঙ্গে পার্থপ্রতীমবাবু খবর দেন ভীমপুর থানার পুলিশকে। থানায় নিয়ে যান ওই কর্মচারীকে। উদ্ঘাটিত হয় কৃষ্ণনগরের মোমোরহস্য। পুলিশের জালে পড়ে নিজেকে ‘মোমো’ বলে জাহির করা কলেজের প্রথম বর্ষের এক ছাত্র। পুলিশ চার জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরে তাদের অভিভাবকদের হাতে ছেড়ে দিলেও তাদের মোবাইলগুলি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ভাল করে খতিয়ে দেখার জন্য।

পুলিশ সূত্রের খবর, বেশ কয়েক দিন ধরেই কৃষ্ণনগর-সংলগ্ন আসাননগর এলাকার বেশ কিছু কিশোর ও যুবকের মোবাইলে ‘মোমো’র আমন্ত্রণ আসতে শুরু করে। এক জন নিজেকে ‘মোমো’ বলে জানিয়ে সকলের সঙ্গে আলাপ জমায়। তাদের মধ্যে অনেকেই নিয়মিত মোমোর সঙ্গে চ্যাটে খোশগল্প শুরু করে দেয়। মুখে-মুখে খবর ছড়ায়। এর-ওর থেকে ‘মোমো’র নম্বর জোগাড় করে অনেকেই আবার নিজেকে মোমোর গ্রুপে ডুড়ে নেওয়ার অনুরোধ জানায়। এ ভাবে বাড়তে-বাড়তে প্রায় ৫০ জনের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি হয়ে যায়। বয়স ১৭ থেকে ২১ এর মধ্যে।

Advertisement

পুলিশ গ্যাসের দোকানের কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সন্ধান পায় মদনমোহন তর্কালঙ্কার কলেজের এক প্রথম বর্ষের ছাত্রের। জানা যায়, সেই হল ‘মোমো’। গোটা ঘটনাটা তার মস্তিষ্কপ্রসূত। প্রথমবর্ষের এই ছাত্রই প্রথম মোমো লোগো দিয়ে হোয়াটস অ্যাপে অ্যাকাউন্ট খুলে সকলকে পাঠাতে শুরু করেছিল। পরে অনেকেই উল্টে তার অ্যাকাউন্টে যোগ দেওয়ার জন্য অনুরোধ পাঠাতে শুরু করে।

আসাননগরের মত একটা ছোট্ট জায়গায় ৫০ জন কিশোর ও যুবক এমন গ্রুপে অংশগ্রহন করে চ্যাট চালাচ্ছে দেখে পুলিশের চোখ কপালে ওঠার যোগাড়। এক পুলিশকর্তার কথায়, “সকলেই জানে এটা একটা ভয়ঙ্কর খেলা। বিপজ্জনক। তার পরেও নিষিদ্ধ বিপদের প্রতি এত আকর্ষণ! জেনেশুনে সব মরণ ফাঁদে পা দিতে চেয়েছে। যেচে মোমো-র গ্রুপে যোগ দেওয়ার অনুরোধ পাঠিয়েছে!” ব্লু-হোয়েলের মতো মোমোর ক্ষেত্রেও ছাত্রছাত্রী-যুব সমাজকে সচেতন করতে চলতি সপ্তাহে প্রচার অভিযানে নামতে চলেছে জেলা পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন