হেনস্থার পরেও ভরসা বিএসএফ

হাজার দশেক মানুষের ঘর বলতে নিয়মরক্ষার ইটের দেওয়ালে টালি বা টিনের ছাদ। পেশা বলতে চাষ আবাদ।   মেয়েদের মধ্যে বিড়ি বাঁধার রেওয়াজ রয়েছে প্রায় সব ঘরেই। এই দুই চরের স্বস্তি বলতে, এখানে চর নারুখাকির মত ভাঙনের প্রকোপ নেই তেমন।

Advertisement

বিমান হাজরা

জঙ্গিপুর শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৯ ০১:১৬
Share:

ঘরে ফেরা: শনিবার ডোমকলে। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া জঙ্গিপুরের আরও দুটি চর চর বাজিতপুর এবং চর পিরোজপুর। বাহুরা ঘাট ভেঙে যে চরে পা রাখা। কিছু দিন আগেও যে ঘাট ছিল গরু পারাপারের ঠিকানা।

Advertisement

হাজার দশেক মানুষের ঘর বলতে নিয়মরক্ষার ইটের দেওয়ালে টালি বা টিনের ছাদ। পেশা বলতে চাষ আবাদ। মেয়েদের মধ্যে বিড়ি বাঁধার রেওয়াজ রয়েছে প্রায় সব ঘরেই। এই দুই চরের স্বস্তি বলতে, এখানে চর নারুখাকির মত ভাঙনের প্রকোপ নেই তেমন। তাই পাকা দ্বিতল বাড়ির সংখ্যাও কম নয়। বছরের মধ্যে ছ’মাস বিধ্বংসী পদ্মা পেরিয়ে নৌকোয় দুর্ভোগের যাতায়াত। আর বিএসএফ জওয়ানদের কঠোর অনুশাসনের নামে চূড়ান্ত হেনস্থা। চরে এমন কোনও মানুষ নেই যার শিকার হননি। বিনোদনের কোনো বালাই নেই। চিকিৎসার কোনও সুযোগ নেই। বিদ্যুৎ নেই। এক সময় কিছু সৌর আলোর ব্যবস্থা হলেও বহু আগেই সে পাট চুকে গেছে। আছে বলতে, গোটা চারেক আইসিডিএস কেন্দ্র ও ৩টি প্রাথমিক স্কুল।

সে-ও বড় বিচিত্র। পিরোজপুরে স্কুল, নাম চর বাজিতপুর প্রাথমিক আর বাজিতপু্রে স্কুল নাম চর পিরোজপুর প্রাথমিক। দুটি স্কুলেই ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় পাঁচশো। তাই ফের বাজিতপুরে গড়ে উঠেছে একটি নতুন প্রাথমিক স্কুল। কিন্তু এক শিক্ষকের সে স্কুল চলে এক গ্রামবাসীর বারান্দায়।

Advertisement

তবু চর ছেড়ে চলে যায় না মানুষ জন। শিক্ষকেরা কেউ আছেন ৮ বছর, কেউ বা ১৪ বছর। একবার চরের এই স্কুলে গেলে সেখান থেকে কোনও বদলির উপায় নেই। কারণ মূল ভূখন্ড থেকে কেউই যেতে চায় না চরের স্কুলে। তাই ওঁদেরও আর আসা হয়ে ওঠে না মুল ভূখন্ডের কোনো স্কুলে।

কি পঞ্চায়েত, কি বিধানসভা প্রতিবারই নির্বাচনে দুই গ্রামের ৪টি বুথে ভোট পড়ে প্রায় ৯০ শতাংশ। অথচ দুই গ্রামের উন্নয়নের হার শূন্যের নীচেই রয়ে গিয়েছে।

মধ্য ষাট জুলু মণ্ডল বলেন, “পদ্মার এই চরেই জন্ম, ঘর সংসার। বলতে পারেন, একটা দ্বীপে জন্মালাম, এখানেই মরব!’’ চরের উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র সপ্তাহে দু’দিন খোলে। তবে নিছকই শিশুদের টিকা দেওয়া ছাড়া তেমন কোনও পরিষেবা সেখানে মেলে না।

গোলাব হোসেন সত্তর ছুঁয়েছেন সদ্য। তাঁর কথায়, “রাস্তা ঘাট তো হল না কোনও দিন, সড়ক বলতে বালি-পথ। যানবহনের বালাই নেই তো রাস্তা!’’ ২০০৫ সালে গ্রামে শেষবার কোনও পদস্থ সরকারি কর্তার পা পড়েছিল, জেলা শাসক ও সভাধিপতি। গ্রাম ঝেঁটিয়ে মানুষ এসেছিল তাঁদের দেখতে। প্রতিশ্রুতি ছিল অঢেল। তবে তাঁরা ফিরে য়াওয়ার পরে পিছু পিছু সে সবও পিরে গেছে বলে জানাচ্ছেন গোলাব।

চরে বিএসএফের বিরুদ্ধে অভিযোগ কম নেই। দু’দিন আগেই শিক্ষকেরাও শিকার হয়েছিলেন তাদের দুর্ব্যবহারের। তা নিয়ে হইচই হতেই এখন নরম বিএসএফ।

সেতাবুর রহমান বলেন, “এই নেই রাজ্যের চরে বিএসএফই ভরসা। তাই গালমন্দ শুনে তাদের আশ্রয়েই আছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন