একুশ বছর আগে ১৩ জানুয়ারি জলঙ্গির পদ্মায় ঠিক কোথায় বাসটি পড়েছিল তা দেখাচ্ছেন স্থানীয় লোকজন। ছবি:সাফিউল্লা ইসলাম
সেই শীতসকাল। সেই কুয়াশা। এবং সেই জানুয়ারি।
২১ বছর আগে, এই ১৩ জানুয়ারিতেই কান্নার রোল উঠেছিল মুর্শিদাবাদ ও নদিয়ার গ্রামে গ্রামে। লালবাগ থেকে পিকনিক সেরে ফেরার পথে জলঙ্গিতে একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পদ্মায় পড়ে যায়। সেই ঘটনায় মারা যান ৬৪ জন। গত বছর ২৯ জানুয়ারি বালিরঘাটের সেতুর রেলিং ভেঙে ভাণ্ডারদহ খালে পড়ে মারা যান ৪৪ জন বাসযাত্রী।
শীত শুধু উৎসব, বইমেলা, পিঠে-পুলি-পায়েস বা পিকনিকেরই মাস নয়। নদিয়া ও মুর্শিদাবাদ, পিঠোপিঠি এই দুই জেলায় কুয়াশা দেখলে কু ডাকে অনেকের মনেই। কারণ, কুয়াশার আড়ালেই ওত পেতে থাকে বিপদ। এই সময় বেড়ে যায় দুর্ঘটনাও। মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক পি উলাগানাথন বলছেন, ‘‘শীতে কুয়াশার কারণে দুর্ঘটনা ঘটে। সেই কারণে বাস-সহ বিভিন্ন যানবাহনের মালিক ও কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করে একাধিক নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুলিশও নজরদারি বাড়িয়েছে।’’
মু্র্শিদাবাদের পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, ‘‘চালকেরা গাড়ি চালাতে চালাতে অনেক সময় ঘুমিয়ে পড়েন। সেই কারণে জাতীয় সড়কে চলাচলকারী দূরপাল্লার গাড়ির চালকদের চা-জল খাওয়ানো হচ্ছে। সুতি ও নবগ্রামে এই ব্যবস্থা শুরু হয়েছে। অন্যত্রও খুব শীঘ্র চালু হবে।’’
ঘন কুয়াশার কারণে জলঙ্গি, বেলডাঙার মতো একাধিক জায়গায় ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছে। সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি রুখতে কুয়াশার সময় চালকরা যাতে সচেতন ভাবে গাড়ি চালান, সেই বিষয়ে বাস ও লরি মালিকদের পাশাপাশি শ্রমিক সংগঠনের কর্তাদের নিয়ে সম্প্রতি বৈঠক করেন মুর্শিদাবাদের আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক অনন্ত সরকার। সেই বৈঠকে বলা হয়েছে, কুয়াশা বাস ও ফেরি নৌকা চালানোর সময় এক-দু’ঘণ্টা পিছিয়ে দিতে। পণ্যবাহী গাড়িও দেরিতে চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দুর্ঘটনা কমাতে মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশও উদ্যোগী হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ঘন কুয়াশা হলে গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখতে। রাস্তার পাশে ফাঁকা জায়গায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে সাইড লাইট জ্বালিয়ে রাখার পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া কুয়াশা কম থাকলে কম গতিতে গাড়ি চালানো, ফগ লাইট-সহ গাড়ির অন্য লাইট জ্বালিয়ে রাখার ব্যাপারেও জোর দেওয়া হচ্ছে।
মুর্শিদাবাদ জেলা বাস মালিক সংগঠনের সম্পাদক শ্যামল সাহা বলছেন, ‘‘বরাবরই নিয়ম মেনে গাড়ি চালানোর কথা আমরা বলি। কুয়াশা পড়লে ধীরে গাড়ি চালানো-সহ সব নিয়ম মেনে গাড়ি চালানোর কথা বলা হয়েছে। কারণ, কুয়াশাকে সমঝে চলতেই হয়।’’