হনন নাকি আত্মহনন?
ঘটনার দু’দিন পরেও কাটল না সেই রহস্য। সুতির গোঠা গ্রামে দুই বোনের মৃত্যু-রহস্য কাটাতে এ বার তাঁদের মামা উজ্জ্বল দত্তের সঙ্গেও কথা বলতে চাইছে পুলিশ।
রবিবার রাতে দুই বোনের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় গোঠার পাশেই পদ্মাপাড়ের শ্মশানে। উজ্জ্বলবাবুর মামা নরহরি কর্মকারও ছিলেন সেখানে। পরিবারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ তিনি। ঘটনার খবর পেয়ে রবিবার সকালেই গোঠায় চলে আসেন তিনি। তিনি বলেন, “সুতি থানার পুলিশ রাতেই উজ্জ্বলের খোঁজে এখানে আসে। পুলিশ তাকে থানায় নিয়ে যেতে চায়। কিন্তু পরিবারের লোকজন শেষকৃত্যের কারণে পুলিশের কাছে কিছুটা সময় চায়। সোমবারের মধ্যেই উজ্জ্বলকে সুতি থানায় যেতে বলেছে পুলিশ।’’
রবিবার সকালে গোঠা গ্রামে তাঁদের মামার বাড়ি থেকে দুই বোনের দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। বাড়িতে অভাবের কারণেই এক বোন মামার বাড়িতে থেকেই লেখাপড়া করতেন। তাঁদের বাড়ি ও মামার বাড়ি একই পাড়ায়। দিন পনেরো আগে বোনের সঙ্গেই মামার বাড়িতে এসে থাকতে শুরু করেন তাঁর দিদিও।
পরিবারের লোকজন প্রথমে দাবি করেছিলেন, এটা আত্মহত্যা। কারণ, তাঁদের দাদু জানিয়েছিলেন, প্রাতর্ভ্রমণ সেরে বাড়িতে এসে তিনি নাতনিদের ডেকে সাড়া পাননি। দরজায় ধাক্কা দিয়েও কোনও লাভ হয়নি। পরে দরজার ফাঁক দিয়ে তিনি দেখেন, গলায় ওড়নার ফাঁস দিয়ে একসঙ্গে ঝুলছে তাঁর দুই নাতনি। কিন্তু ময়নাতদন্তে বেশ কিছু বিষয় জানতে পারার পরে ঘটনার মোড় ঘুরে যায় অন্য দিকে।
জঙ্গিপুরের এসডিপিও প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় রবিবার ময়নাতদন্তের পরে বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে দু’জনকে নির্যাতন করা হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। এটা খুন নাকি আত্মহত্যা তা স্পষ্ট নয়। পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। তবে তদন্তে যা উঠে আসবে সেই মতোই পদক্ষেপ করা হবে। প্রয়োজনে পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা রুজু করবে।” সোমবার তিনি বলেন, ‘‘আরও কিছু বিষয় উঠে এসেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে ও ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে না পাওয়া পর্যন্ত কোনও মন্তব্য করব না।’’
এ দিন এক পুলিশ আধিকারিক জানান, যে ঘরে ওই দুই বোন ছিলেন সেই ঘরে একটি কাঠের চেয়ারের উপর প্লাস্টিকের চেয়ার রেখে তার উপরে দু’টি বালিশ রাখা ছিল। বাড়ির লোকজন প্রথমে জানিয়েছিলেন, ওই চেয়ারের উপরে উঠে গলায় ফাঁস লাগিয়েছেন দুই বোন। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, দুই বোনের ওজন ৮০ কিলোগ্রামেরও বেশি। বালিশেও পায়ের চাপ পড়ার কথা। ফাঁস দেওয়ার পরে দুই বোনের পায়ের ধাক্কায় চেয়ার ও বালিশ মাটিতে পড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু ঘটনার পরে একেবারে পরিপাটি করে সাজানো ছিল চেয়ার ও বালিশ।
ওই দুই কিশোরীর এ ভাবে মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন পরিবারের কেউ। তাঁদের বাবা বলছেন, “পুলিশ এখনও কোনও লিখিত অভিযোগ আমাদের কাছে চায়নি। তাছাড়া এ সব করেই বা আর কী হবে। মেয়েদের তো আর ফিরে পাব না।”
তবে পড়শিরা জানাচ্ছেন, বাড়িতে অভাব। সেই কারণেই মেয়ে দু’টি মামার বাড়িতে থেকে লেখাপড়া করছিল। কী এমন হল যে, এ ভাবে অকালে মেয়ে দু’টিকে চলে যেতে হল। পুলিশ তদন্ত করলেই সত্যিটা উঠে আসবে।