রানাঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় আটকে বিক্ষোভের পিছনে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্রছাত্রী ছিলেন বলে প্রাথমিক ভাবে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। পুলিশ মনে করছে, যাদবপুরে ‘হোক কলরব’ স্লোগান তুলে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনেও ওই পড়ুয়ারা যুক্ত ছিলেন। এর বাইরে আর কোন বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভে সামিল হয়েছিলেন, তারও খোঁজ চলছে।
এমন পদক্ষেপ যে রাজ্য প্রশাসন করবে, তার আঁচ মিলেছিল সে দিনই। ঘেরাওয়ের মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, যাঁরা এ কাজ করলেন তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে সরকার। তার তিন দিনের মাথায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভবানী ভবনে কলকাতা পুলিশ, সিআইডি এবং রাজ্য পুলিশের কর্তাদের নিয়ে মমতার বৈঠকের পরে প্রশাসনের তরফে সরকারি ভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়, মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় আটকানো নিয়ে পুলিশ রানাঘাট থানায় একটি মামলা রুজু করেছে। ওই এফআইআর-এ কারও নামের উল্লেখ না থাকলেও নদিয়ার এক পুলিশকর্তা বলেন, তদন্তে নেমে জানা গিয়েছে, বিক্ষোভের পিছনে কিছু সমাজবিরোধী, দুষ্কৃতী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের লোকজন ও একাধিক নকশাল নেতা-কর্মীর হাত ছিল। তাদের প্ররোচনাতেই সেখানকার মানুষ ওই আন্দোলনে সামিল হয়েছিলেন।
বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ সরকারি ভাবে এই দাবি করলেও স্থানীয় সূত্র বলছে, ঘটনার পর দিনই বিক্ষোভকারীদের চিহ্নিত করার কাজে নেমে পড়েছিলেন শাসক দলের একাংশ। বিরোধী রাজনৈতিক দলের কারা কারা সে দিনের বিক্ষোভ-আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন, তার একটি তালিকা ইতিমধ্যেই পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। নদিয়া জেলা পুলিশের এক কর্তা অবশ্য দাবি করেছেন, তাঁরা এমন কোনও তালিকা পাননি। পুলিশ নিজের সোর্স লাগিয়েই অভিযুক্তদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে।
কেন পুলিশ ওই মামলা রুজু করল, তার একটা ব্যাখ্যা অবশ্য দিয়েছে নবান্ন। প্রশাসনের একাংশ বলছেন, যে হেতু মুখ্যমন্ত্রী জেড প্লাস মানের নিরাপত্তা পান এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে সর্বদা তাঁর নিরাপত্তার উপরে নজরদারি করা হয়, তাই মমতার কনভয় আটকে পড়ার কারণ জানতে চাইবে দিল্লি। একই সঙ্গে পুলিশ কী পদক্ষেপ করেছে, তা-ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে জানানো আবশ্যিক। এ ক্ষেত্রে পুলিশ যদি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা রুজু না করে, তা হলে জবাবদিহির মুখে পড়তে হবে রাজ্য প্রশাসনকে। নবান্নের এক কর্তা বলেন, “সে দিন বিক্ষোভে যে সব ছাত্রছাত্রী বা তাঁদের অভিভাবক হাতে মোমবাতি নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন, তাঁদের পুলিশ গ্রেফতার করবে না। কিন্তু ওই বিক্ষোভের পিছনে যাঁদের প্ররোচনা ছিল, তাঁদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পুলিশ জানিয়েছে, সোমবারের বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে বেআইনি জমায়েত, হাঙ্গামা, সরকারি কাজে বাধা, রাস্তা অবরোধ,বেআইনি ভাবে আটকে রাখা ও নাশকতার চক্রান্তের অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে সবগুলোই জামিনযোগ্য।